বিশেষ প্রতিবেদক:
পর্যটন নগরী কক্সবাজারের অধিকাংশ আবাসিক হোটেলে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা নেই। ঝুঁকি মাথায় ব্যবসা চালাচ্ছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। এতে প্রশাসনের তদারকির যেমন অভাব রয়েছে, তেমন হোটেল কর্তৃপক্ষেরও রয়েছে উদাসীনতা ও দায়িত্ব অবহেলা।

কক্সবাজারে সাড়ে চারশ’র বেশী হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজ রয়েছে। এসব থাকার হোটেলকে ঘিরে প্রতি বছর ২০ লাখের বেশী দেশী বিদেশী পর্যটক আসে। অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থার অবহেলায় হোটেলগুলোতে ঝুঁকি রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার ত্রুটিসমূহ সংশোধনের জন্য হোটেলগুলোকে সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এসব ত্রুটি না সারলে হার্ডলাইনে যাবে প্রশাসন। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য অবশ্যই হোটেল মোটেল জোনের বহুতল ভবনগুলো অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার মধ্যে আনা হবে।’

কলাতলীস্থ সী ওয়ার্ল্ড রিসোর্টের নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) শহিদুল ইসলাম বলেন, নিয়ম ন মেনেই চলছে কক্সবাজারের বেশিভাব আবাসিক হোটেল। এর জন্য দায়ী প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।’

ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বারবার তাগাদা দিলেও কোন ধরনের তোয়াক্কা করছেন না হোটেল কর্তৃপক্ষ।

হোটেল-মোটেলগুলোতে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকার কথা স্বীকার করেন ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সেরেস্টেশন অফিসার মোঃ শাখাওয়াত হোসেন। তিনি জানান, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষ কোন তোয়াক্কা করে না। তাদের বার বার সতর্ক করা হলেও কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয় না। তাই এবার যতটুকু পারা যায় হোটেলগুলোকে আইনের আওতায় এনে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থাটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে।

পর্যটন নগরী কক্সবাজার। যেখানে পর্যটকদের থাকার জন্য গড়ে উঠেছে চার শতাধিক হোটেল মোটেল ও রিসোর্ট। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পর্যটন মৌসুমের পাশাপাশি সাপ্তাহিক ছুটি কিংবা সরকারি ছুটিতে পর্যটকের তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না এসব বহুতল হোটেল মোটেল ও রিসোর্টে। কিন্তু এসব হোটেল মোটেল ও রিসোর্টের মধ্যে মাত্র দুই-একটিতে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা থাকলেও বাকিগুলোতে নেই। ফলে কক্সবাজার বেড়াতে আসা পর্যটকরা হোটেলে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত।

বেস্ট ওয়েস্টার্ন প্লাস হেরিটেজ হোটেলে থাকা এক পর্যটক বলেন, ‘তারকামানের এই হোটেল অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা জোরদার করা অত্যন্ত জরুরি। আমরা কক্সবাজার বেড়াতে এসে নিরাপত্তা নিয়ে তেমন খোঁজ খবর নিতে আগ্রহী ছিলাম না। কিন্তু ঢাকায় কয়েকটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর এখন আমরা সতর্ক থাকতে চাই। তাই এব্যাপার হোটেল কর্তৃপক্ষেরও নজর দেওয়া অবশ্যক।’

সী-ওয়ার্ল্ড রিসোর্টে অবস্থান করা আরেক পর্যটক বলেন, ‘কক্সবাজারে বেড়াতে এসে হোটেলে থাকা-খাওয়া ও পরিবেশ খুবই চমৎকার। কিন্তু যদি হোটেল অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে সেক্ষেত্রে বাঁচার নিশ্চয়তা নেই।’

এদিকে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের হোটেল মোটেল জোনের বহুতল ভবনের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণে নেমেছিল ভ্রাম্যমান আদালত। জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের এই অভিযানে হোটেল বেস্ট ওয়েস্টার্ন হেরিটেজ, সী ওয়ার্ল্ড রিসোর্ট, উইন্ডি টেরেজ, জিনিয়া রিসোর্ট, হাইপেরিয়ান, হোয়াইট অর্কিড ও পউষী রেস্তোরাকে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

অভিযানে দেখা যায়, হোটেল মোটেল ও রিসোর্টগুলো অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থার কোন তোয়াক্কা করছে না। সব প্রতিষ্ঠানেই ফাইটিং ফ্লোর প্ল্যান নেই, হাইড্রেন্ট পয়েন্ট নেই, হোজরীল নেই, ফায়ার ফাইটিং প্রশিক্ষণ নেই, ফায়ার এক্সটিংগুইশার নেই, ইলেকট্রিক ওয়্যারিং এর জায়গাগুলো অরক্ষিত, ওয়াটার রিজার্ভ পানি নেই, জরুরি বের হওয়ার পথ নেই ও বৈদ্যুতিক সাব ষ্টেশনের ছাড়পত্র নেই।