কায়সার হামিদ মানিক
উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে আগুন নেভানোর ব্যবস্থা অপ্রতুল বলে অভিযোগ উঠেছে। গাদাগাদি করে বসবাসরত এসব রোহিঙ্গা শিবিরের কোথাও অসাবধানতাবশত কোনো অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে স্থানীয় সচেতন মহল। সরেজমিনে উখিয়ার বৃহত্তম কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে কয়েকজন মাঝির (শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গা নেতা) সাথে কথা বলে জানা গেছে, আশ্রয় শিবিরে বাঁশ ও পলিথিনে দিয়ে নির্মিত অস্থায়ী ঘরগুলো একটির সাথে অন্যটি জড়াজড়ি করে গড়ে তোলা হয়েছে। তাছাড়া ৮ হাত দৈর্ঘ্য ও ৫ হাত প্রস্থের এসব ঝুঁপড়ি ঘরে একই সাথে রান্নাবান্না ও থাকা-খাওয়ার কাজ চলছে।
লম্বাশিয়া ক্যাম্পের আলি আহমদ মাঝি (৩২) জানান, যদি ক্যাম্পের কোনো একটি ঘরে আগুন লেগে যায় তাহলে জীবনহানির আশঙ্কা আছে।
মধুরছড়া রোহিঙ্গা মাঝি শামশুল আলম (৩৫) জানান, ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গারা আগুন আতঙ্কে দিন পার করছে। তিনি জানান, দুর্ভাগ্যক্রমে পলিথিনে আগুন লাগলে তা মুহূর্তেই ছড়িয়ে যাবে শিবিরে। রোহিঙ্গা শিবিরে যানবাহন ঢোকার মতো কোনো পরিবেশ নেই। একাধিক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, রাজধানী ঢাকা শহরে বহুতল ভবনে একের পর এক আগুনের ভয়াবহতায় রোহিঙ্গারা শঙ্কিত।
কুতুপালং ক্যাম্প ম্যানেজম্যান্ট কমিটির সেক্রেটারি মোহাম্মদ নুর জানায়, তারা ২০১২ সালে নাফ নদী পার হয়ে কুতুপালং বনভূমির জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। এ পর্যন্ত তাদের ক্যাম্পে বেশ কয়েকবার আগুন লেগেছে। যা তারা নিজেরাই নেভাতে সক্ষম হয়েছে। তিনি জানান, তখনকার পরিবেশ আর বর্তমান অবস্থা ভিন্ন। ক্যাম্পের অনভিজ্ঞ অসংখ্য পরিবার গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করছে। অনভিজ্ঞতার কারণে সেখান থেকেও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। যা নিয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে একটি অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। তিনি আরো বলেন, অগ্নিকাণ্ড নির্বাপণে রেডক্রিসেন্ট রোহিঙ্গাদের যে প্রশিক্ষণ দিয়েছে তা দিয়ে কোনো উপকারে আসবে না। রোহিঙ্গা নেতৃবৃন্দরা ক্যাম্প অভ্যন্তরে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপনের দাবি জানিয়ে অগ্নিকাণ্ডের শঙ্কা মুক্ত করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মো. জহিরুল ইসলাম জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনের সূত্রপাত নিয়ন্ত্রণে তারা আগে থেকেই সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। তাই ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় আগুন আয়ত্তে আনা সম্ভব হবে। যদি তারা যথাসময়ে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি অবগত হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কায় অগ্নি নির্বাপণের জন্য রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থা আগে ভাগেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এ ব্যাপারে রোহিঙ্গাদেরকে সজাগ থাকার জন্য এবং যথাসময়ে কর্তৃপক্ষ বরাবরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা অবহিত করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে উখিয়া টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। এরমধ্যে উখিয়ার ১৮টি ক্যাম্পে বসবাস করছে দেড় লাখ পরিবারে ৮ লাখ রোহিঙ্গা।