সিবিএন ডেস্ক:
কোথাও আগুন লাগলে সেখানে বিনা প্রয়োজনে ভিড় করার সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনেকে সেখানে গিয়ে সেলফি তুলে মন্তব্য করে এরও সমালোচনা করেছেন তিনি। তাদেরকে ছবি ও সেলফিবাজি না করে এক বালতি পানি এনে ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

শুক্রবার বিকালে গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগুন লাগলেই দেখি অনেকে সেলফি তোলে, দেখতে যায়। সেলফি তোলার কী আনন্দ বুঝি না। তা না করে সবাই এক বালতি করে পানি আনুক, আগুন নেভানোর চেষ্টা করুক। এই মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস যখন অগ্নিনির্বাপণে যায়, তখনও কিছু লোক সেখানে ভিড় করে, তাদের মারতে যায়, এমনকি বনানীর আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পর্যন্ত ভেঙে দিয়েছে। একেকটা গাড়ির দাম আট থেকে দশ কোটি টাকা। তারা উদ্ধারকারীদের ওপর হামলা না চালিয়ে যদি এক বালতি করে পানিও নিয়ে যেত, তাহলেও কাজ হতো।’

তবে সাধারণ মানুষের মধ্যেও যারা দায়িত্ববোধ থেকে কাজ করে তাদের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘প্রশিক্ষিত ভলান্টিয়ারের পাশাপাশি অনেক সাধারণ মানুষও নিজের দায়িত্বের জায়গা থেকে উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছেন। তবে কিছু মানুষ অযথা ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকে, তারা দাঁড়িয়ে না থেকে জায়গাটা খালি রাখলেও উদ্ধারকারীদের জন্য কাজ সহজ হয়।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় আগুন লাগলে এখন পানি পাওয়া যায় না। অথচ, ঢাকায় এত খাল ছিল, এত পুকুর ছিল, অথচ এখন নাই। কজেই যারাই কোনো স্থাপনা করবে সেখানে যেন জলাধার টিকে থাকে। আর পুকুর দেখলে তার মধ্যে দালান করা এটাও একটা প্রবণতা, যেটি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।’

‘গুলশান লেক এখন যা আছে তার দ্বিগুণ চওড়া ছিল। একেক জন ক্ষমতায় এসেছে, জিয়া এসেছে অর্ধেক ভরাট করে প্লট বানিয়ে দিয়েছে। এরশাদ এসেছে প্লট বানিয়েছে। খালেদা জিয়া এসে প্লট বানিয়েছে। এভাবে বানাতে বানাতে লেকের অর্ধেক আছে। আর বনানী লেকটাতো বন্ধই।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘এভাবে জলাধারগুলো একে একে করে বন্ধ করা, এটাও বোঝা উচিত যে আগুন লাগলে পানি নাই। ভূমিকম্প হলে কোথাও গিয়ে দাঁড়ানোর জায়গা নাই। তাহলে অবস্থাটা কী দাঁড়ালো।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দালানগুলো এমনভাবে বানানো হয় যে তার ফায়ার এক্সিট থাকে না, ইন্টেরিয়ার ডেকোরেশন করতে গিয়ে ফায়ার এক্সিট বন্ধ। সেখান দিয়ে কারো ওঠার উপায় নাই, নামারও উপায় নাই। মার্কেটগুলোতে ফায়ার এক্সিট মাল রাখার জন্য বা স্টোরেজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগুন লাগলে দায়িত্ব হচ্ছে ফায়ার বিগ্রেড আগুন নেভাবে। কিন্তু আগুন যাতে না লাগে যারা দালানগুলো বানায়, যারা বসবাস করে, যারা ব্যবহার করে- সকলেরই দায়িত্ব আছে। সেই দায়িত্বটা পালন না করে কোনো ঘটনা ঘটলেই কেবল কেবল সরকারের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা হয়।’

‘আমরা বার বার বলি, যখন ডিজাইন দেয়া হয় তখনো বলি। যারা স্থাপনাগুলো ব্যবহার করছেন তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব, যেন সেখানে আগুন না লাগে। অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা যেন থাকে। আর সাথে সাথে কী করতে হবে সেটাও যেন দেয়া থাকে।’

শেখ হাসিনা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘ভবনের প্রতি ইঞ্চি জায়গা লাভজনক ব্যবহারের জন্য নিজেদের সর্বনাশটা যেন কেউ ডেকে না আনে। সর্বস্বান্ত না হন।’