বিশেষ প্রতিনিধি :

ওয়াজ মাহফিল ও বক্তাদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। সরকারী এই চেষ্টা দেশের সংবিধান, গণতন্ত্র ও মুসলিম মেজরিটির ধর্মীয় চেতনা ও মুল্যবোধ বিরোধী বলে দাবী করেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী।

তিনি আজ (০৫ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে বলেছেন, যদি কোনো বক্তার আলোচনায় সরকার বিব্রত হন, তবে সরকার তাকে সতর্ক করতে পারেন এবং বয়ানের ব্যাখ্যা তলব করতে পারেন। তা না করে পুরো ওয়াজের মাঠকে দোষারোপ করা গভীর ষড়যন্ত্রের ইংগিত বহন করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ওয়াজ মাহফিলে ঈমান ও ইসলামের কথা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা হয়। ওয়াজ মানুষকে সদুপোদেশ দেয়া ও কল্যাণের পথে ডাকার সমাজিক অনুষ্ঠান ও ইসলামী সংস্কৃতি। আম্বিয়ায়ে কেরাম সাধারণ মানুষকে সত্যের পথে যে আহবান জানাতেন তারই প্রচলিত রূপ। আলেমগণ সে পদ্ধতিকে অবলম্বন করে সাধারণ মানুষকে অপরাধ ও পাপাচারমুক্ত রাখার জন্য যুগযুগ ধরে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে মাঠের ওয়াজ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে। যাতে দেশবিদেশের লাখো মানুষ ধর্মীয় জ্ঞান লাভ করছে এবং নিজেকে পবিত্র ও অপরাধমুক্ত রাখতে সক্ষম হচ্ছেন। এি ওয়াজ উন্নত সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখছে।

মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী আরো বলেন, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। এ দেশের ৯০ ভাগ মানুষ বুকে ইসলামকে লালন করেন। দেশের রাষ্ট্রধর্মও ইসলাম। সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতা রয়েছে। ইসলামের প্রচারার্থে ওয়াজ মাহফিলে বাধা প্রদান বা শরিয়তসম্মত কোনো বক্তব্যকে হেয় করা বা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা প্রকারান্তরে ইসলামেরই বিরোধিতা করার শামিল। এটা সরাসরি ইসলামের ওপরে নগ্ন হস্তক্ষেপ।

তিনি আরো বলেন, আলেমরা যদি কুরআন হাদীসের বিধানের কথা বলে আর তা সরকারের বিরুদ্ধে যায় তাতে বক্তার অপরাধ কোথায়? যেমন, ছবি টাঙ্গানো, ভাস্কর্য তৈরি, ঘুষ, সুদ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, অন্যায়ভাবে গুম ও খুন করা, নাস্তিকতা ও কাদিয়ানীবাদ ইসলামের বিধান মতে হারাম। এগুলোর বিরুদ্ধে কথা বলা আলেমদের জন্য ফরজ। আর মাহফিলে
এসব বললে সরকারের কর্তাব্যক্তি ন কারো গায়ে লাগে। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে বক্তা ও মাহফিলে ওপর আঘাত করার চেষ্টা করে। যা অহরহ ঘটছে।
তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি যে, কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল তাদের বিভিন্ন প্রতিবেদন, টকশোতে ইসলমের অনেক বিধানাবলী নিয়ে ঠাট্টা, বিকৃত, উস্কানিমূলক, সম্প্রদায়িক বক্তব্য প্রচার করে। দাড়ি টুপি, পর্দা হেজাব, মাদরাসা, আলেম ওলামাদের হেয় ও চরিত্র নষ্ট করে নাটক সিনেমা তৈরী করে তা প্রচার করছে। যাতে ধর্মপ্রাণ জনসাধারণের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে। এগুলো আগে নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের কর্তব্য।

মাওলানা ইসলামাবাদী বলেন, তিরমিজি ও মিশকাত শরীফের হাদীস; মহানবী সা. বলেছেন, আল্লাহ আমাকে সমস্ত জগতের জন্য রহমত ও হেদায়েত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন। আর আমাকে ‘মূর্তি, ক্রুশ চিহ্ন, বাদ্যযন্ত্র, খেলার সরঞ্জাম এবং জাহেলী প্রথা ধ্বংস করার আদেশ দিয়েছন। সুতরাং নারী স্বাধীনতার নামে খেলা করা, অশ্লীল ও নগ্নতা, বৈশাখ পালনের নামে মঙ্গল শোভাযাত্রা, মুর্তিতে ফুল দেয়া ইসলাম সমর্থন করেনা।
তিনি সরকারের নিকট প্রশ্ন রেখে বলেন, পশ্চিমা পুঁজিবাদী গণতন্ত্র, চীন বা রাশিয়ার পতিত সমাজতন্ত্র, আধুনিক সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসী সেক্যুলার বিপ্লবের কথা বলতে আর শ্লোগান দিতে পারলে, যেদেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সেখানে বিশ্বনবী সা. এর মদীনার মানবতাবাদী ইসলমী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বললে অপরাধ হবে কেন?
তিনি বলেন, ক্ষমতা দেওয়ার মালিক আল্লাহ, এটা কারো জন্য চিরস্থায়ী নয়। সরকার ভালো কাজের জন্য প্রশংসা করাকে যেমন পছন্দ করেন, ঠিক তেমনিভাবে অন্যায় কাজের সমালোচনা সহ্য করার সৎসাহস থাকাও জরুরী।
মাওলানা ইসলামাবাদী বলেন, মাহফিলে আলেমসমাজ হালাল হারাম, ন্যায় অন্যায়, নীতি আদর্শ, নৈতিক চরিত্র, দেশ ও মানবতার কল্যান, নারীর নিরাপত্তা, জঙ্গিবাদ, মাদক, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত শান্তিময় সমাজ প্রতিষ্ঠায় কুরআন হাদীসের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান রাখেন। এর দ্বারা দেশ ও নাগরিকসমাজ উপকৃত হচ্ছেন। দেশে শান্তি ও মানুষের চরিত্র সংশোধনে আলেমসমাজের অবদান চির স্মরণীয়।