হালদা নদীতে ডিমের অপেক্ষায় সংগ্রহকারীরা
মোহাম্মদ হোসেন,হাটহাজারী :
দক্ষিণ এশিয়ার প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীতে ডিম আহরনের সব প্রস্তুতি চলছে। প্রতি বছরের মত এবার ও আগাম রেনু ফুটানো জন্য মাটির
কোয়া,নৌকা সংস্কার,জাল নেট তৈরিহ সব সরঞ্জাম তৈরি কাজে ব্যস্থ হয়ে পড়েছেন।সত্তারঘাট থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিঃ মিঃ পর্যন্ত নদীর
বিভিন্ন স্থানে মা-মাছ ধরা ও ইঞ্জিল চালিত নৌকা চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক মণিটরিং করছেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে একটি টিম। এবার মা-মাছ আনাগোনা বেশি বলে জানান নদী পাড়ের বসতীরা। বৃষ্টি হলে মা-মাছ ডিম ছাড়বে বলে জানিয়েছেন আহররণকারীরা।

প্রতি বছর ফেব্রুয়ারী-মার্চ মাসের দিকে হালদার সাথে সম্পৃত্ত অন্যান্য নদী থেকে বড় বড় রুই জাতীয় মাছ গুলো এ নদীতে আসে ডিম ছাড়ার জন্য। এপ্রিল
থেকে জুন মাসের মধ্যে অমাবস্য বা পুর্ণিমার সময় অনুকুল পরিবেশে হালদা নদীতে রুই জাতীয় মাছ ডিম ছাড়ে। আবহাওয়া ভাল থাকলে যে কোনো মুহুত্বে
মা-মাছ ডিম ছাড়বে বলে স্থানীয় রেনু আহরণকারীরা জানিয়েছেন। উনবিংশ শতকের গোড়ার দিকে প্রায় ১০০ বছরে হালদা নদীর এগারটি বাঁক পর্যায়ক্রমে কেটে দেয়া হয়েছে। হালদার ভাটি এলাকায় আটটি, উজান এলাকায় তিনটি বাঁক কেটে দেয়া হয়েছে। এই বাঁকগুলো কেটে দেয়ায় প্রায় ১২৩ কিঃমিঃ নদীর দৈর্ঘ্য ২৫ কিঃ মিঃ কমে ৯৮ কিঃ মিঃ হয়েছে। হাটহাজারী ও রাউজান এর অংশে অক্সবো বাকঁগুলো রুই জাতীয় মাছের প্রজনন ক্ষেত্র। গত কয়েক দিন থেকে হালদা পাড়ে পাড়ে নৌকা সংস্কারের কাজ চলছে। স্থানীয় আহররণকারীরা জানায়, এই মৌসুমে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজারের অধিক ডিম আহরণকারী নৌকা সংস্কারের কাজে এখন ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন। রাউজান ও হাটহাজারী মৎস্য অফিস সুত্রে জানা গেছে, বৃষ্টি হলে মা মাছ ডিম ছাড়বে। মৎস্য বিভাগ নদীতে ইঞ্জিন চালিত বোর্ড চালানো সম্পুর্ণ নিষিদ্ধ করেছে। গড়দুয়ারা ইউনিয়নের ঘাটকুল এলাকার শাহ আলম ও কামাল উদ্দিনসহ অনেকেই সাথে কথা হলে তারা জানায়, গত কয়েক মাস থেকে নেট জাল,ড্রেজোর,বালু উত্তোলন কমিয়ে যাওয়ায় এখন নদীতে যতোষ্ট মা-মাছ এসেছে। তবে তারা বর্তমান হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমিন এর প্রশংসা করে বলেন,সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ইউএনও সাহেব হালদায় অভিযান চালিয়ে জাল ও ড্রেজার আটক করেছে এটা এবার হালদার পরিবেশের জন্য বড়ই পাওনা। হাটহাজারী উপজেলা মৎস্য অফিসার এ প্রতিবেদককে জানায়, ইউএনও সাহেব
এর এত অভিযানের পরও থেমে নেই নদীতে নেট জাল বসা। হালদা নদীতে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্ রুই জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র। স্থানীয় ডিম আহরণকারীরা অভিযোগ করে বলেন, এত অভিযানের পরও রাতের আধারে মদুনাঘাট ও হালদার বিভিন্ন এলাকায় কিছু অসাধু মাছ ব্যবসায়ী জাল ফেলে মা-মাছ ধরছে। প্রতি বছরের মত এ বছর পাঁচ সহ¯্রাধিক নৌকা ও প্রায় ৭ হাজারের অধিক রেনু আহরণকারী প্রস্তুত রয়েছে।

হাটহাজারী মৎস্য অফিস সুত্রে জানা গেছে, ডিম ছাড়ার মৌসুম চলছে বৃষ্টি হলে যে কোন সময় মা-মাছ ডিম ছাড়বে এইটা নিশ্চিত তবে নদীতে সার্বক্ষণিক
মনিটরিং চলছে, কেউ যেন মা-মাছ ধরতে না পারে এবং নদীতে যাতে নৌকা চালিত বোর্ড চলতে না পারে সে জন্য সত্তার ঘাট থেকে শুরু করে হালদার মদুনাঘাট পর্যন্ত আনসার টহলে নিয়োজিত রয়েছেন। তিনি হালদায় যতোষ্ট মা মাছ আসার কথা স্বীকার করেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে যে কোনো সময় মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে বলে তিনি জানান।
সরেজমিন ঘুরে করে দেখা যায়, হ্যাচারী গুলো সংস্কার করা হয়েছে। হ্যাচারী গুলো হচ্ছে কাগতিয়া হ্যাচারী,মাচুয়া ঘোনা হ্যাচারী,শাহ মাদারী হ্যাচারী,অংকুরা ঘোনা হ্যাচারী, এ দিকে হাটহাজারীতে যোগদানের পর থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুর আমিন হালদা নদীকে প্রধান্য দিয়ে প্রতিদিনই টহলের মাধ্যমে ড্রেজার জব্দ,হাজার হাজার ফুট নেট জাল জব্দ করেছে।তার নেতৃত্বে থানা পুলিশ হালদা নদীতে অভিযান চালিয়ে নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে বালু উত্তোলনে নিয়োজিত ড্রেজার আটক করে। এ সব ড্রেজার আটকের পরও থেমে নেই বালু উত্তোলনকারীরা। ডিম আহরণকারীরা বলেন,ডিম ছাড়ার সময় প্রায় কাছে বৃষ্টি হলে ডিম ছাড়বে মা-মাছ তবে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুর আমিন এর প্রশংসা করেন এবং তারা এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হলে তারা জানান, হালদার পাড়ে সরকারী হ্যাচারী গুলো সংস্কার করায় সত্যি খুব আনন্দের বিষয়। অন্যন্যা বছর এ সব হ্যাচারী তেমন একটা সংস্কার করা হয়নি বলে তারা জানিয়েছেন। আর নদীতে ইঞ্জিন চালিত বালু উত্তোলনকারী নৌকা চলাচল ছিল বলে তারা জানিয়েছেন। তবে তারা স্বীকার করে বলেন,আমাদের হাটহাজারী ইউএনও স্যার হালদায় ব্যস্ত সময় দিয়েছেন অতিতে এই ধরনের অভিযান হয়নি বলে তারা জানিয়েছেন। প্রতিদিনই তিনি
নদীতে ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করেন, যা অতিতে কখনও হয়নি।