সিবিএন:
কক্সবাজার শহরের বার্মিজ মার্কেট এলাকার একটি ফ্ল্যাট বাড়ি থেকে এক তরুণীর গলায় ফাঁস লাগানো মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী ওই তরুণীর নাম খ্রিষ্টিয়ানা সারা (১৭)। সে কুড়িগ্রাম জেলার একটি কলেজে একাদশ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ছিল।

সোমবার (পহেলা এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বার্মিজ স্কুলের পাশে খুরশেদ মিয়ার মালিকানাধীন ভবনের ৫ম তলার ১২ ন্ম্বাার কক্ষ থেকে ওই তরুণীর ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত মৃতদেহটি উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশ।মারা যাওয়া ওই তরুণীর বাড়ি বরিশালের গৌরন্দী থানার নওশিয়া গ্রামে। তার বাবার সঠিক নাম পাওয়া না গেলেও মায়ের সাথে ডিভোর্স হওয়া সাগর নামে এক ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে। তবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সদর মডেল থানা পুলিশ আটক করেছে। একই সাথে নিহত তরুণীর মা সিসিলিয়া ঢাকীকেও আটক করে পুলিশ।

নিহত খ্রিষ্টিয়ানা নামের ওই তরুণীর মা সিসিলিয়া ঢাকী বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) কেয়ার বাংলাদেশে কর্মরত রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, সাততলা বিশিষ্ট ওই ফ্ল্যাট বাড়ির ৫ম তলায় ভাড়ায় থাকা স্বামী পরিত্যক্তা মায়ের ‘লিভ-টুগেদারে’র ঘটনাকে ঘিরে মেয়ে খ্রিষ্টিয়ানা আত্মহত্যা করেছে। ওই ফ্ল্যাটে ওই তরুণী ও তার মা এবং দুইজন যুবক ভাড়া থাকতেন। তাদের মা ও অন্য দুইজন এনজিও কর্মী|

এই ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা কক্সবাজার সদর মডেল থানার (এসআই) দেব্রত রায় জানান, খুরশেদ মিয়ার ওই ভবনের ৩য় তলায় ভাড়া থাকা এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম সোমবার রাতে ফোন করে জানান যে, দরজায় ধাক্কাতে ধাক্কাতে এক মহিলা কান্নাকাটি করছেন আর বিলাপ করছেন। ওই কক্ষের ভেতরে তার মেয়ের কোন সাড়া শব্দ না পাওয়ায় মেয়েকে ডাকছেন তার মা।এমন খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে দরজা ভেঙ্গে ফ্যানে সাথে ওড়না পেঁচানো ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া ও পুলিশের দল।

ওই ভবনের ভাড়া থাকা লোকজন জানান, নিহতের মা সিসিলিয়া ঢাকী খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী হলেও সাগর নামে এক মুসলিম যুবকের সাথে একই ফ্ল্যাটে অবৈধ ভাবে ভাড়ায় থাকতেন। সেটি মেয়ে জানলেও মেনে নিতে পারতো না। যদিও ৯ বছর আগে মুসলিম থেকে খ্রিষ্টানে ধর্মান্তরিত হয়ে সিসিলিয়া ঢাকীকে বিয়ে করেছিলেন সাগর নামের ওই যুবক। ধর্মান্তরিত হয়েও তাদের মাঝে বিবাহ সম্পর্ক ভালোভাবে কাটেনি। তাদের মাঝে এক পর্যায়ে বিবাহ ভেঙ্গে গিয়ে আবারও মুসলিম ধর্মে ফিরে আসে সাগর।ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে পুলিশ ও অন্য ভাড়াটিয়ারা দেখতে পান, আত্মীয় নন এমন দুইজন যুবকের সাথে একই ফ্ল্যাটে থাকেন সিসিলিয়া ঢালী। ওই দুই যুবকের মধ্যে একজন সিসিলিয়ার সাথে এনজিও কেয়ারে চাকুরি করতেন। অন্যজনও এনজিও কর্মী, তিনি চাকুরি করছেন আরেকটি এনজিওতে।

পুলিশ ও প্রতিবেশীদের দেখা তথ্য মতে, ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা যায় সিসিলিয়া ঢালী একটি কক্ষে পড়ে আছেন। আরেকটি কক্ষে ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় মেয়ে খ্রিষ্টিয়ানা সারার মৃতদেহ ঝুলছে। এছাড়াও ছেলেদের লুঙ্গী মেয়েদের বাথরুমে, আর মেয়েদের প্যান্টি-ব্রা রয়েছে ছেলেদের রুমে।ধারণা করা হচ্ছে, এনজিওতে কর্মরত দুই যুবক ও এক নারীর ‘লিভ-টুগেদার’কে কেন্দ্র করেই তরুণ খ্রিষ্টিয়ানা সারা আত্মহত্যা করেছে।এমন তথ্যই দিয়েছেন তদন্ত কমকর্তা কক্সবাজার সদর মডেল থানার (এসআই) দেব্ররথ রায়।

তিনি জানান, ঝুলন্ত ওই তরুণীর পাশে তার একটি ভাঙ্গা মোবাইল পাওয়া গেছে, সেটি জব্দ করা হয়েছে।এদিকে তরুণীর এই মৃতদেহকে ঘিরে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।পুলিশ কর্মকর্তা দেব্ররত রায় জানান, মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত হবার পর বোঝা যাবে, এটি হত্যা নাকি আত্বহত্যা।এদিকে যে ভবন থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে ওই ভবনের কোন ধরণের সিসিটিভি ক্যামেরা কিংবা নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিলো না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এছাড়াও বহিরাগত, ছাত্র/ছাত্রী ও স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে যে কোন ব্যক্তিকে তথ্য-উপাথ্য ছাড়াই ফ্ল্যাট ভাড়া দিতেন মালিক খুরশেদ মিয়া।তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।