মোহাম্মদ আলম চৌধুরী

বৈশাখ বাঙালির প্রাণের মাস। আবেগের মাস। বাঙালির হৃদয়ের সাথে এ-মাসের রয়েছে আত্মিক সম্পর্ক। এ-মাসের সাথে জড়িত রয়েছে একটি জাতির সাংস্কৃতিক ইতিহাস। একটি জাতির জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে যে সমস্ত উপাদান আবশ্যক তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- সংস্কৃতি। একজন ব্যক্তির অস্তিত্বের জন্য দেহের প্রাণশক্তি যেমন গুরুত্বপূর্ণ তদ্রুপ একটি জাতির ক্ষেত্রেও সংস্কৃতি তেমনি মূল্যবান। এর মূল কারণ হচ্ছে- সংস্কৃতি জাতির সামগ্রিক রূপের পরিচয় বহন করে। সংস্কৃতির ভেতরই সতেজ থাকে জাতির সমস্ত অর্জন। তাই- যে সমস্ত জাতি তাদের সাংস্কৃতিক গৌরব হারিয়েছে, তারা দাসত্বের শৃঙ্খলে বন্দী হয়েছে।

চট্টগ্রাম বাংলাদেশের প্রবেশদ্বার। সরকারি ঘোষণায়- বাণিজ্যিক রাজধানী। প্রকৃতির এক খেয়ালি তুলিতে অঙ্কিত চট্টগ্রাম। সবুজের সমারোহের ভেতরই রয়েছে- এ-অঞ্চলের প্রকৃত ইতিহাস। সবুজ আর সবুজ- মানুষের মন-প্রাণকে সজীবতা প্রদান করে। মানুষের মনের ভেতরের দুঃখগ্লানি ঘুচে দেয়। সবুজের শীতল হাওয়া প্রাণে দেয় সতেজ পরশ। অবারিত সুন্দরের প্রতিধ্বনি এ-অঞ্চলের মানুষের মনে এক স্বতন্ত্র স্বর ও সুরের সৃষ্টি করেছে। যেগুলো প্রতিফলিত হয়েছে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানে।

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান মূলত, চট্টগ্রামের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্তরাত্মা থেকে সৃষ্ট সুরেলা ধ্বনি। কালের পরিক্রমায় ঘটে যাওয়া দিনগুলো যেমন সুরের মধ্যে দিয়ে ধ্বনিত হয় ঠিক তেমনি বর্তমানের সরস প্রকাশও থাকে। অনাগত কালের আগমন ধ্বনিও বেজে ওঠে সুরের বিচিত্র ওঠানামায়। গৌরবোজ্জ্বল অতীত যেমন আছে ঠিক তেমনি রয়েছে প্রবাহমান বর্তমান। অতীত আর বর্তমানের মিতালী- চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানকে দিয়েছে এক অনন্য দ্যোতনা।

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে- বৈশাখ। বৈশাখ মাস-মধুমাস হিসেবেই পরিচিত। নানারকম ফসল আর ফলের সমাগম ঘটে এ-মাসে। রসালো ফলে হাট-বাজার চাঙ্গা হয়। কৃষকের মুখ হাসে প্রাপ্তির অনাবিল খুশিতে। ঘুচে যায় কষ্টের মুহূর্তগুলো। ঘরে ঘরে চলে বাহারী উৎসব। সংস্কৃতিমনা বাঙালির জাতীয় জীবনেও বৈশাখ জড়িত রয়েছে। বৈশাখকে কেন্দ্র করে বিচিত্র সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের আয়োজন চলে। চট্টগ্রামে বৈশাখকে বরণ করা হয় হৃদয়ের সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সময়ের পর যখন বৈশাখ আসে তখন উল্লেখযোগ্য পরিকল্পনাগুলোর মাধ্যমে বৈশাখ বরণ চলে। এগুলো হল- বলিখেলা, বৈশাখীমেলা, নাটক, জারীগানের আসর, পুঁথিপাঠের আসর, গরুর লড়াই, মোরগলড়াই ও হা-ডু-ডু অন্যতম। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানেও এ সমস্ত বিষয়াদির প্রভাব রয়েছে।

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের ইতিহাস বেশ পুরনো। এখানকার ভূ-প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকেই এ-গানের সূচনা। প্রকৃতির অবারিত ভাবলীলা এখানকার মানুষের মনে কোমল পরশ সৃষ্টি করেছে। খাল-নদী, ডোবা-নালা, বিল-ঝিল, সমুদ্রের রহস্যময়ী ঢেউ- সবকিছুই এখানকার আঞ্চলিক গানে ঠাঁই করে নিয়েছে। সংস্কৃতির ওপর প্রকৃতির এক অনন্য প্রভাব এখানকার গানে দৃষ্টিগোচর হয়। তাই এখানকার বেশিরভাগ গানেই- কর্ণফুলী নদী, হালদা নদী, শঙ্খ নদী, বাঁকখালী নদী, সাঙ্গু নদী, ডলু নদী, মাতামুহুরী নদী, সোনাদিয়া দ্বীপ, মহেশখালী দ্বীপ, কুতুবদিয়া দ্বীপ আর পতেঙ্গার ঢেউয়ের কথা অবলীলায় চলে আসে। স্থানিক উপকরণগুলো গানের যে বিচিত্র সুরের উৎস হতে পারে- চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানগুলোই এর সাক্ষী।

আবদুল গফুর হালী মাইজভা-ারী (১৯৩৬-২০১৬) চট্টগ্রামের আঞ্চলিকগানের প্রাণপুরুষ। তাঁর গানে বৈশাখের ঢং বিভিন্নভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। শঙ্খ নদীর কুলঘেষা এ ভাববৈরাগী প্রাণের সমস্ত দরদ দিয়ে বৈশাখের গুণকীর্তন করেছেন তাঁর গানে। বৈশাখ তাঁর কাছে সবসময় রহস্যময়ী মাস। কারণ বৈশাখ আনন্দ-উৎসব নিয়ে যেমন আসে ঠিক তেমনি কালবৈশাখীর তা-বেও সব চুরমার করে দেয়। বৈশাখ মাসে বেশি বিয়ে-শাদী হয়। নাতিন তাই নানীকে হবু বর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে ইনিয়ে-বিনিয়ে এভাবে-

ও নানীরে নানী
আঁর পরানত নাই পানি

যার কাছে বিয়া দিব

ন জানি তে কেএন অইব ॥

………………………

………………………

ফউনমাসে জোড়া দিব

বৈশাখমাসে বিয়া

কেএন গরি করগিলি ঘর

আঁর নানারে লইয়া

আঁরে নদিলি শিখাই

হেত্তে তোর নাতিন জামাই

নানি  হোরির বদনাম করিব ॥

আবদুল গালীর এ-গানটিতে বৈশাখের প্রসঙ্গ ছাড়াও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় জড়িত রয়েছে- তা হলো- সামাজিকীকরণ। নাতিনের বিয়ের আগে নানী-দাদী মিলে নাতিনকে হবু বর সম্পর্কে যে তালিম দেন- এখানে তাই সামাজিকীকরণ। মানুষের জীবনে বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সম্পূর্ণ নতুন দুইটি পরিবারের মধ্যে যে সম্পর্কের সুত্রপাত হয় তা বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় গ্রোথিত থাকে। ভালো হলে ভালো- না হলে সম্পর্কের তিক্ততায় দুই পরিবারের শান্তি পালিয়ে যায়। তাই বিয়ের আগে পাত্রীকে দায়িত্ব সম্পর্কে অবগত করা হয়। একজন পুত্রবধূ হিসেবে শ্বশুর-শাশুড়ি কি সেবা পাবে, ভাশুর-দেবরকে কি সেবা করতে হবে ইত্যাদি। শুধু তাই নয়, পড়শিদের দিকটাও মাথায় রাখতে হয়। গফুর হালী একজন সমাজদ্রষ্টা হিসেবে এখানে তাই দায়িত্ব সংক্রান্ত বিষয়টি অতি সূক্ষ্মভাবে তুলে ধরেছেন। গ্রামীণজীবনেও দেখা যায়- সামান্য ভুলের কারণে অতি তুচ্ছ ঘটনা থেকে অনেক বড় ঘটনার সুত্রপাত হয়ে যায়। তখন খোঁচা দিয়ে বলা হয়- ‘দাদী-নানী এসব শেখায়নি কেন?’

বৈশাখ মাস অগ্নিমাস হিসেবেও পরিচিত। বাতাসের সাথে আগুনের কঠিন পিরিতী চলে এ-মাসে। বড় বড় দোকানপাঠে আগুন লেগে যায়। বসতবাড়ি পুড়ে যায়। পাহাড়ে মিথেন গ্যাসের কারণে পুড়ে যায় হাজার হাজার একর বনভূমি। শুধু তাই নয়- মনের ভেতরও অদেখা এক আগুন হৃদয়কে পুড়ে ছারখার করে দেয়। শরীরের ওপরে হাতপাখার বাতাস সে আগুন নিভাতে পারে না।

আবদুল গফুর হালীর গানে বৈশাখের বেশ উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ব্যক্তিগত জীবনে গফুর হালী যেমন রসিক ছিলেন ঠিক তেমনি তাঁর গানের প্রতিটি চরণেও সে রসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি লিখেছেন-

ওরে গরমকালে বিছইন ছাড়া

অখুল্যা বৌ ঘুম ন ধরে

বৈশাখ মাইস্যা খরানে

ধরফরার আঁর পরানে

কন-কাইদ্দি উগ্যা গাছর পাতা ন লরে।

……………………………………..

……………………………………..

……………………………………..॥

ঘুম গিয়ে গোডা পাড়া

রসর কথা কইয়ম আরা

তোঁয়ার গিন আঁরে বুঝাই

আঁর গিন তোঁরে ॥

গফুর হালীর গানগুলোতে রয়েছে বৈশাখের গা-পোড়া গরমের সাথে যৌবনের অসহনীয় অদেখা গরমের কথাও। তবে তা তিনি কুশলী ভঙিমায় বলেছেন। তাঁর গানের ভেতর রয়েছে আবহমান কালের বাংলার গ্রামীণ জীবনের উপজীব্য বিষয়গুলো। বিশেষ করে চট্টগ্রামের। এখনও চট্টগ্রামের আনাচে-কানাচের গ্রাম গুলোতে দেখা যায় বৈশাখের রাতে উঠোনের বড় আম গাছের নিচে বসে সারারাত গল্প-আড্ডায় পার করে দিতে। লেবুর রসের চিনির শরবত দিয়ে প্রাণ ঠা-া করার চেষ্টা করা হয়। পানের বাটা তো আছেই সাথে। এসময় তালপাতার পাখার বেশ কদর বেড়ে যায়। বৈশাখের সাথে তালপাতারও রয়েছে গভীর মিতালি।

বৈশাখ মাসের বাতাসও অনেক সময় গুরুত্ববহ হয়ে ওঠে, যখন তা বিরহী প্রেমিকার হৃদয়ের দীর্ঘশ্বাসের সাথে মিশে যায়। টেলিপ্যাথি বলে যে শব্দটি চালু রয়েছে তা অনেক যুক্তিবাদীও নিঃসঙ্কোচে মেনে নিয়েছে। আর বলেছে- এটি আমার অন্ধ বিশ্বাস বললেও আপত্তি নাই। চট্টগ্রামের লোকজন বেশির ভাগই প্রবাসী। কেউ প্রেমিকা রেখে কেউবা নববধূ রেখে ছুটে গেছে জীবিকার তাগিদে। যখন বৈদ্যুতিক যন্ত্র ছাড়া যোগাযোগ করা যেতো না তখন উভয় হৃদয়ের দীর্ঘশ্বাসই কী যোগাযোগের মাধ্যম ছিল? এটি জটিল প্রশ্ন। উত্তর চাওয়াটাও হবে অপ্রাসঙ্গিক। কিন্ত চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের অন্যতম কুশীলব এম এন আলম তাঁর গানে আমাদের অথবা বিরহী প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা সদ্য পরিণতা নববধূ-বরের মনের কথাগুলো তুলে ধরেছেন-

আম পাকে বৈশাখ মাসে

কাঁঠাল পাকে জেট মাসে

বন্ধু আইব কোন্ মাসে।

আঁর মনর গোপন কথা

কেঅয় ন জানে

ছোড কালর পিরীত আঁর

বন্ধুর সনে

রাইতে দিনে চিন্তায় চিন্তায়

ঘুম যে ন আসে ॥

কত মানুষ আইয়ের

আঁর বিয়ার খবর লই

মা বাপরে মনর কথা কেনে খুলি কই

বিদেশী এক মানুষ আঁরে

ভাল যে বাসে ॥

যদি জাইনতাম লেখাপড়া

চিডি লিখিতাম

দইনালী বাতাস বাইলে

উড়াইয়া দিতাম

হাতের চিডি পাইলে যেন

আইয়ে রে দেশে ॥

সাধারণত প্রবাসীরা বৈশাখ মাসে বেশি দেশে আসে। রসালো ফলের রস স্বাদনেরর জন্য। বাড়ির লোকজন যেমন অপেক্ষা করে ঠিক তেমনি গোপনে আরেকটি হৃদয় যে অপেক্ষার প্রহর গুণে তা অনেকেই ঠাহর করতে পারে না। অপেক্ষার খবরটি শুধু কাঙ্খিত হৃদয়ই জানে। ফলের রসের সাথে মনের রসের গোপন মিলও এ-গানে অনুভূত হয়। বৈশাখ মাসের সাথে হৃদয়ের যে সম্পর্ক তা অনেক গানেই এভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের প্রবাদ প্রতীম গীতিকার এম এন আখতার। তাঁর লেখার মধ্যে বৈশাখের রূপ বিচিত্রভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। বৈশাখের রোদের কড়া মেজাজ, শরবতের পানি বিক্রেতার দৌড় ঝাপ আর আইসক্রিম বিক্রেতার ঘণ্টা ধ্বনির তালে তালে বাচ্চা-কিশোর সকলের দৌড়ে আসার চিত্র হৃদয় পটে ভেসে ওঠে। এম এন আখতারের গানে বৈশাখ শুধু গতানুগতিকভাবে আসে না। নতুন ভাবনা, নতুন আশা, স্নেহ-ভালোবাসা সাথে করেই আসে। পেছনের ফেলা অতীতকে বগলদাবা করে আসে না। তাঁর রচিত এ-গানটি পুরো বৈশাখের নতুনত্বের গুণকীর্তন করে।

নতুন  বৈশাখ নতুন বছর

আজকে আমার ঘরে

ভাবনা কি সাজিয়ে দেবো

তোমায় নতুন করে ॥

নতুন স্বপ্ন নতুন আশা

বাঁধবো বুকে নতুন বাসা

কত স্নেহ ভালোবাসা

দেবো উজাড় করে ॥

পিছন ফিরে দেখবো না আর

কাটিয়ে যাবো সকল আঁধার

নদ নদীতে বৈশাখী জোয়ার

এগিয়ে যাবো দূরে ॥

এম এন আখতারের গানের মধ্যে সরলতা যেমন রয়েছে টিক তেমনি রয়েছে সরস উপমার ব্যবহার। তাই তাঁর গান উপভোগ্য বেশি। বৈশাখ সাধারণ কোনো মাস নয়। অন্যান্য মাসের চেয়ে একটু ভিন্ন বলেই এ-মাসকে নিয়ে একটু হৈ চৈ বেশি হয়। এর পেছনের অন্যতম কারণ হচ্ছে- এ-মাসটি পুরোটাই উৎসবের মাস। কোনো না কোনো উৎসব লেগেই থাকে। বিলের বুকফাটা রোদ যেমন থাকে ঠিক তেমনি এর পেছনেই থাকে সবুজের আগমনী বার্তা। পাখির ডাক, আকাশের তর্জন-গর্জনও গানের উপকরণে পরিণত হয়। শীত নিদ্রায় শায়িতরাও আস্তে আস্তে বের হবে। গাছেরা আগেভাগেই জানিয়ে দিবে- বৈশাখ এসেছে। পত্রপল্লবে ফুল-ফলের বাহারী রূপ বেরসিকের মনেও রসের সৃষ্টি করবে। এখানেই বৈশাখের মাজেজা। বৈশাখের সাথে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছে প্রকৃতির বিভিন্ন উপমা আর উপকরণ থেকে। হৃদয়ের সাথে প্রকৃতির এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। হৃদয়বার্তা থেকে আগত স্বর যখন অনুভূতির সাথে মিশে একাকার হয়ে যায় তখনই সুরের সৃষ্টি হয়। গান কী তাহলে হৃদয়ের বিধৌত স্রোতধারা?- উত্তর নিস্প্রয়োজন। গানের সাথে প্রাণেরই রয়েছে গভীর যোগসূত্র।

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- আবেগ আর উপমার সুনিপুণ ব্যবহার। এখানকার গানে রয়েছে মানুষের ব্যক্ত-অব্যক্ত আনন্দ-বেদনা আর প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির যুগল পদচারণা। তাই- একটি অঞ্চল বিশেষের গান হয়েও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান স্ব-গৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আজ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যেখানে বাঙালি রয়েছে সেখানেই এ-গানের শ্রোতা রয়েছে। এ-গানের এ বিশ্বজনীনতা সাংষ্কৃতিক উৎকর্ষতারই ফল। বিশ্বায়নের প্রবল স্রোতের টানেও এ-গান থেকে শ্রোতাদের বিমুখ করতে পারেনি। এখানেই চট্টগ্রামের গান অনন্য। আজ মানুষ মুহূর্তেই দুনিয়ার যেকেনো ভাষার গান শুনতে পারে। কিন্তু এর জন্য রয়েছে- মনের টান। ভালোবাসা ছাড়া দুনিয়াতে কোনোকিছুই ঠিকে থাকে না। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানও টিকে আছে মানুষের ভালোবাসায়।

এম এন আখতারের গানে পুরো বৈশাখের চিত্রটিই প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি হৃদয়ের সমস্ত আবেগ দিয়ে এ-গানটি রচনা করেছেন বিধায় বৈশাখের প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে। তিনি বৈশাখের বিনাশী সুরের বর্ণনা যেমন দিয়েছেন ঠিক তেমনি সৃষ্টিশীলতার বিষয়টিও নিয়ে এসেছেন। তিনি লিখেছেন-

পয়লা বৈশাখ আইস্যে ঘরত

মিডাইর পাইল্যা লই

নাতী নাইত্যান খুশী

হাতোত কেলা মোলা খৈ

বুইজ্যা বুড়ী তঁওশা চার/ হাসের দুইজন

চুপ্পে বৈ বৈ ॥

মরা গাছত ফুল ফুইট্টে বৈশাখ মাইস্যা যাদু

আম জাম কাট্টল ফাইক্যে খাই চও কি মধু

ফুয়ানা ক্ষের তাজা হই যার

গরের হৈ চৈ ॥

বাংলাদেশর বাঁলী আঁরা বারো মাইস্যা বছর

গরি মনত এক এক ছবি দেখতে খুব সুন্দর

বৈশাখ মাইস্যা কিস্তা আঁরা

বিদেশত যাই কই ॥

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সভাপতি, পালং একাডেমি-কক্সবাজার। পরিচালক, আহমদ ছফা স্টাডি সেন্টার।

সংকলনে :- আব্দুল্লাহ  আল যোবাইর,  জেলা প্রতিনিধি-   দৈনিক অধিকার নিউজ