আব্দুল মান্নান রানা :

আগামীকাল ১.০৪.২০১৯ইং তারিখে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা দ্বারা প্রণোদিত শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একাডেমিক পরীক্ষা “উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট “(HSC) পরীক্ষা – ২০১৯ইং।

শিক্ষার্থী, ভাই বোনদের উদ্দেশ্যে আমার দু’খানা কথা।

ভাবছেন পরীক্ষার হল কঠিন হবে কিনা,কমন আসবে কিনা,কারো থেকে সহযোগিতা পাব কিনা প্রভৃতি।
ভুলে যান এসব। কারণ পরীক্ষার পূর্বপ্রস্তুতির মধ্যে এসবের একটিও পড়ে না।
আপনার সুদৃঢ় মনোবল, সৃজনশীলতা, বুদ্ধি ও মেধা দীপ্ততায় আপনার পরীক্ষা ভাল হওয়ার বড় উপায়।

মনে রাখবেন, এ পরীক্ষার ফলাফল আপনার আগামী দিনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি এইচএসসি পরীক্ষায় বসার পূর্বে সময় পেয়েছেন ৭৩০ দিন এবং তার মূল্যায়ন হবে মাত্র ৩ ঘন্টায়। তাই

১.পরীক্ষার হলের প্রতিটি সেকেন্ড আপনার জন্য অতিব গুরুত্বপূর্ণ। একদম অস্থির হওয়া যাবেনা।

২. মনস্থির করে প্রথমে আপনার জানা সবচেয়ে পারফেক্ট প্রশ্নটির উত্তর করতে হবে।

৩. সময়কে ম্যানেজমেন্ট করতে হবে।

প্রতিটি প্রশ্নের জন্য সুপরিকল্পিত প্রক্রিয়া থাকতে হবে।
রুচিশীল, মার্জিত, গঠনমূলক ভাষা শৈল্পিকতা, পরিষ্কার হতের লেখা তথা মৌলিক এবং প্রাসঙ্গিক উত্তর প্রদানের মাধ্যমে অত্যন্ত ভাল ফলাফল আশা করা যায়।
তাছাড়া আমি ব্যক্তিগতভাবেও আশাবাদী যে, দীর্ঘ দু’বছর একিই বই পড়ার মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান আহরণ করতে সক্ষমতা অর্জন করেছে।

তবুও আমাদের নিহাত অল্প কিছু শিক্ষার্থী ভাইয়েরা আছে।যারা প্রায় বলতে শুনি বহুনির্বাচনী প্রশ্ন ৫টি দাগাতে পারিনি ৮টি দাগাতে পারিনি, সময় ছিল না ইত্যাদি অজুহাত।
আসলে সমস্যাটা হয় তখনি যখন আমরা এই দুয়েকটি বিষয় এড়িয়ে যায়।
১. প্রথমে আমাকে ড্যাম শিউর প্রশ্ন গুলো দাগতে হবে হোক সেটি ১ নং কিংবা ৩০ নং।এখন প্রশ্ন আসতে পারে ৩০নং এ আমার জানা সবচেয়ে ভাল প্রশ্নটি যে রয়ে গেল তা কি করে আমি বুঝব?!
এটি বুঝার সহজ উপায় হল, আপনি প্রথমে ১ থেকে শুরু করে ৩০ নং পর্যন্ত প্রশ্ন দাগাবেন শুধু ড্যাম শিউর গুলো। ড্যাম শিউর হচ্ছে চোখ যাওয়া মাত্রই যেটি সত্য মনে হয়েছে।যেমন: বাংলাদেশের জাতীয় ফুলের নাম কি?
ক.পদ্ম। খ. গোলাপ
গ. শাপলা ঘ.রজনীগন্ধা
তখন চোখ যায় মাত্র সত্য মনে হবে শাপলাকে। এটিই হল ড্যাম শিউর।
দেখবেন ৩০টি প্রশ্নের মধ্যে অন্তত আপনার জানা ১৫-১৮ টি প্রশ্ন থাকবে আর এ প্রশ্ন গুলো যদি ধারাবাহিকভাবে আপনি দাগিয়ে আসেন তবে আপনার সময় লাগবে মাত্র ১০-১৩ মিনিট । বাকি ৫-৮ টি প্রশ্ন থাকবে মোটামুটিভাবে আপনার শিউর বলে মনে হতে পারে। তা একটু সময় ধৈর্য ধরে ভেবে চিন্তে দাগাবেন।
তাও সময় নিতে পারেন সর্বোচ্চ ১০-১২ মিনিট।

বাকি সময় থাকবে ৬-৮ মিনিট, প্রশ্ন থাকবে ৫-৭ টি। এসময়ও কিন্তু আপনি লাগ বাবাজি মারতে পারবেননা।
লাগ বাবাজিটি আসলে কি?! মূলত প্রশ্ন না বুঝে মনগড়া চোখ বন্ধ করে দাগিয়ে পেলাটায় হচ্ছে লাগবাজি। একদম সেটি করা যাবেনা।
তাহলে করবেনটা কি?!
ঐ সময়টাতে আপনি প্রশ্নটি অত্যন্ত ভাল করে পড়বেন তথা ক্ষণকালের জন্য দার্শনিক হয়ে যাবেন। তারপর অপশনে এসে যেটি আপনার বিশ্বাসের জায়গা প্রথম নড়া দিবে সেটি আপনি দাগাবেন।
সত্যি বলছি আপনার বহুনির্বাচনী প্রশ্ন অত্যন্ত ভাল হবে।
ইনশা আল্লাহ।

কিছু মৌলিক কথা।

শিক্ষার সংজ্ঞাটা মুলত আমরা যেভাবে মূল্যায়ন করি আসলে কিন্তু তা নয়।

গতানুগতিক ভাবে আমরা সকলেই মনে করি যে, প্রতিযোগিতার এসময়ে ভাল কোনো ডিগ্রী লাভ করে একটি ভাল চাকরি করব। তারপর ঘরসংসার হবে কিছুকাল পরে অবসর মিলবে প্রায় এতটুকুই।

কিন্তু আসলে বিষয়টি আরো গভীরে।মৌলিক অর্থে শিক্ষা হল সেটি যেটি মানুষের সুপ্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করে, যার সুফলে মানুষ তার বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে পরিবার, সমাজ,রাষ্ট্র তথাপি সমগ্র বিশ্বভ্রামন্ডের কল্যাণে কাজ করে এবং চিন্তা করে।

নিজের ভোগবিলাসকে উপেক্ষা করে মানবকল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করায় শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।
এবং জীবনের পথ পরিক্রমায় জীবিকা নির্বাহের জন্য একজন শিক্ষিত মানুষ আংশিকভাবে তার বুদ্ধিকে কাজে লাগাতে পারে এটি স্বাভাবিক কিন্তু সমাজের প্রচলিত ধারায় একিবারেই বিলীন হয়ে যাওয়া নয়।

শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের মনন,চৈতন্যবোধ,মানসিকতা,জ্ঞান গরিমার পরিধি সবকিছু বৃদ্ধি পায়। এবং শিক্ষার প্রভাবেই মানুষ সর্বত্রে প্রভাবিত হয়।
সুতরাং, আমাদের দেশের তরুণ-তরুণীদেরকেও সুশিক্ষিত এবং স্বশিক্ষিত হয়ে দেশ কিংবা জাতি গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।
এটিই যেন হয় তরুণ- তরুণীদের শিক্ষার মৌলিক উদ্দেশ্য।
এটি আমার প্রত্যাশা এবং প্রার্থনা।