শাহেদ মিজান/শাহিদ মোস্তফা শাহিদ

চতুর্থ ধাপের আওতায় আজ ৩১ মার্চ রোববার কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আজ সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে ৪টায় শেষ হবে। প্রথমবারের মতো ইভিএম পদ্ধতিতে এই উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হবে। সুষ্ঠু ও শান্তি পরিবেশে ভোট গ্রহণের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি ও নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা জোরদার করেছে প্রশাসন। বহুল প্রতিক্ষিত এ সদর উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জনগণের উৎসাহ উদ্দীপনার যেন শেষ নেই। পৌরসভা ও সদরের প্রত্যেকটি জায়গায় একটাই আলোচনার বিষয় আর সেটি হচ্ছে এ নির্বাচনে কে হচ্ছে নতুন চেয়ারম্যান। সর্বত্রই চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্য মতে, কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৪জন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৯ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী কায়সারুল হক জুয়েল, কক্সবাজারের পৌরসভার ৪ বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ঘোড়া মার্কা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিম আকবর (আনারস)।

ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন আমজাদ হোসেন ছোটন রাজা (টিউবওয়েল), কাজী রাসেল আহমেদ নোবেল (গ্যাস সিলিন্ডার) হাসান মুরাদ আনাচ (টিয়া পাখি) আব্দুর রহমান (পালকি), কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ হোসাইন তানিম (উড়োজাহাজ) কাইয়ুম উদ্দীন (চশমা) রশিদ মিয়া (বই) কামাল উদ্দিন (তালা) বাবুল কান্তি দে (মাইক)।
এছাড়া মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়াম্যান হেলেনাজ তাহেরা (প্রজাপতি), কক্সবাজার জেলা যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী আয়েশা সিরাজ (পদ্মফুল) ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হামিদা তাহের (ফুটবল)।

এবারের নির্বাচনে মোট ২ লাখ ৫৬ হাজার ৬৪৪ জন ভোটার ইভিএমের মাধ্যমে ১০৮টি ভোট কেন্দ্রের ৬৪৮টি বুথে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৫ হাজার ৪৪২ এবং মহিলা ১ লাখ ২১ হাজার ২০২ জন।

এদিকে সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শান্তিপুর্ণ ভোটগ্রহণে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে নেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। শুক্রবার প্রত্যেক ভোট কেন্দ্রে মধ্যেই ইভিএম মেশিন, কম্পিউটার, ডিজিটাল ব্যালট ইউনিট, এসডি কার্ডসহ আনুষাঙ্গিক সকল সাপোর্টিং মেশিনারিজ পাঠানো ও ফিটিং করে সম্পূর্ণ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট, ১৫ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তা ও নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত আইনশৃংখলা বাহিনীর পুলিশ সদস্য, আনসার-ভিডিপি সদস্য এবং বিজিবি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও জোরদার থাকবে র‌্যাবের টহল।

মাঠের বিশ্লেষণ মতে, এবারের কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মুলত দুই জনের মধ্যে ভোটের লড়াই হবে। মূল লড়াইটা হবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কায়সারুল হক জুয়েল এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবছারের মধ্যে। কেমন হবে তাদের ভোটের ময়দানের লড়াই? তবে তাদের মাঝে ফ্যাক্টর হয়ে ত্রিমূখী লড়াই করতে পারেন সেলিম আকবর।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়- এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ায় গণসংযোগে বেশ সুবিধায় রয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী কায়সারুল হক জুয়েল। কারণ আওয়ামী লীগের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নের নেতা কর্মীরা নৌকার কর্মী হিসেবে সরাসরি মাঠে কাজ করছেন। এছাড়াও যুবলীগ-ছাত্রলীগ সহ অন্যান্য সংগঠন প্রচার প্রচারনায় এগিয়ে রেখেছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জুয়েলকে। তার প্রচারনার শ্লোগান ও গান ভোটারদের আকর্ষণ করছে। এছাড়া প্রতিদিন নৌকার পক্ষে প্রায় অর্ধশত পথসভাও হয়েছে। এছাড়া মরহুম একেএম মোজাম্মেল হকের পুত্র হিসেবে জুয়েল ব্যাপক পরিচিতিও রয়েছে। এ সকল বিবেচনায় নৌকায় ভোট পড়লে জুয়েলই হতে পারেন কক্সবাজার সদর উপজেলার চেয়ারম্যান।

অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা ও চারবারের পৌরসভার সফল চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ঘোড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। শুরু থেকে তার তেমন কোন প্রচারণা না থাকলেও শেষ মূহুর্তের প্রচারণায় বেশ আশাবদি হয়ে উঠেছে তার সমর্থকরা। এতদিন তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না থাকলেও যেই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তখন থেকে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। নির্বাচনে তিনি যাতে অংশগ্রহন করতে না পারেন সেজন্য তার প্রার্থীতা বাতিল চেয়ে উচ্চ আদালতে রীট করেন জসিম উদ্দিন নামের এক ভোটার। এই রীটে নির্বাচনে অংশগ্রহনে নুরুল আবছারের প্রার্থীতা প্রথমে বাতিল হয়ে গেলেও পরে আপিল করে প্রার্থীতা বৈধতা করতে সমর্থ হন নুরুল আবছার।

এসব কারণে অন্য প্রার্থীরা গণসংযোগ করতে পারলেও তিনি পারেননি। ফলে তার পক্ষে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করা সম্ভব হয়নি। এমন কি ঘোড়ার কোন পোষ্টার দেখা যায়নি। এই অবস্থায় নুরুল আবছার নিজের হাতে চিঠি লিখে সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে পৌছানোর চেষ্টা করছেন। তিনি ভোটারদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন কক্সবাজার সদরের মতো গুরুত্বপূণ চেয়ারম্যান পদে তার মতো অভিজ্ঞ ব্যক্তিই এই পদের যোগ্য।

অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিম আকবর (আনারস) প্রতীক সুবিধাজনক স্থানে রয়েছে। বৃহত্তর ঈদগাঁওয়ের ভোট ব্যাংক হিসাবে পরিচিত ৬ ইউনিয়নসহ প্রত্যকটি ইউনিয়নে তার প্রচারণা সকলের নজর কেড়েছে। শ্রমিক নেতা হিসাবে তার আলাদা একটি ভোট ব্যাংক থাকায় চেয়ারম্যান হওয়ার সম্ভাবনা বলে মনে করেন ভোটাররা।

অন্যদিকে জেলায় গত ১৮ মার্চ ও ২৪ মার্চ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলেও নুরুল আবছারকে এগিয়ে রাখা যায়। কারণ কক্সবাজারের ছয়টি উপজেলার মধ্যে পাঁচটিতেই (চকরিয়ায় ফজলুল করিম সাঈদী, রামুতে সোহেল সরওয়ার কাজল, মহেশখালীতে মো: শরীফ বাদশা,টেকনাফে নুরুল আলম ও পেকুয়ায় জাহাঙ্গির আলম) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত বিদ্রেহী প্রার্থীরা।বাকি একটি মাত্র উপজেলা উখিয়ায় চেয়ারম্যান পদে জিতেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হামিদুল হক চৌধূরী। তাও আবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।

তাই ইভিএম পদ্ধতিতে প্রথমরের সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বিদ্রোহী প্রার্থী এবং প্রবীন রাজনীতিবিদ ও চারবারের সফল চেয়ারম্যান হিসাবে নুরুল আবছার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিম আকবরের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই ও জয়ের সম্ভাবনা দেখছেন তাদের ভক্ত ও সমর্থকরা। আর এ সকল আশার প্রতিফলন ঘটবে আজ ৩১ মার্চ নির্বাচনের বেলা শেষে ফলাফল ঘোষনা পাওয়ার পর।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ করতে সব ধরনের নিরাপত্তামূলক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বি কোন পক্ষকে বিন্দু পরিমাণ প্রভাব বিস্তার করতে সুযোগ দেয়া হবে না। অত্যন্ত শান্তিপুর্ণ, ভীতিমুক্ত, নিরাপদ ভোটারবান্ধব পরিবেশে ভোট গ্রহন করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নির্বাচনে কোন ধরনের গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা, সন্ত্রাস, পরিবেশকে অশান্ত করতে চাইলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে।’