এইচ. এম. ই রিমন

রাজধানীর বনানীর বহুতল ভবন এফ আর টাওয়ারের আগুনে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, শতাধিক আহত হয়েছে। রুপায়নের মত বড় কোম্পানির ভবনেই আগুন হতে বাঁচার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিলনা।

কিছুদিন আগে পুরান ঢাকার চকবাজারের আগুনে অন্তত ৭৮ জন মারা গিয়েছিল। আগুন হতে রক্ষার জন্য কোন ব্যবস্থা আশেপাশের মানুষের ছিলনা।

আজকে রাজধানীর গুলশান-১ এর ডিএনসিসি মার্কেটের পাশে কাঁচাবাজারে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন ইউনিটের তড়িৎ ফায়ার ফাইটের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

সারাদেশের বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানির বহুতল ভবন হতে শুরু করে কাঁচাবাজার পর্যন্ত কোথাও আগুন হতে বাঁচার জন্য ফায়ার ফাইটিং এর ব্যবস্থা ছিল না।
এমন অবস্থায় ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের ভূমিকা কিংবা রুপায়নের মত বড় কোম্পানির অবহেলাকে কোনভাবে অগ্রাহ্য করা যাবে না। ডিএনসিসির মত মার্কেটগুলোই কেন সিটি কর্পোরেশন আর ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের বাইরে থাকবে কেন? শুধুমাত্র বহুতল ভবনই কেন ফায়ার সার্ভিসের তদারকিতে থাকবে, আমার মনে হয় সকল বানিজ্যিক ভবন, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আর ভাড়া দেওয়া আবাসিক ভবন কর্তৃপক্ষের নিয়মের মধ্যে এনে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব বড় হলেও, সকালে কাজের উদ্দেশ্যে বের হয়ে দিন শেষে নিরাপদে পরিবারের কাছে ফিরে আসার দায়িত্ব প্রত্যেকের উপর বর্তায়। আবার যে বাড়িতে পরিবার অবস্থান করছে, কিংবা যে স্কুলে ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা করতে যাচ্ছে সব জায়গা নিরাপদ কিনা সবাইকে ভাবতে হবে।

প্রথমেই বাসস্থানের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হবে। পরিবারের সকল সদস্যকে দেখিয়ে দিতে হবে বাসার বিদ্যুৎ এর মেইন স্যুইচ কোথায় আছে, সহজেই স্যুইচ পর্যন্ত পৌঁছানো যায় কিনা এবং হঠাৎ আগুন লাগলে কিভাবে মেইন স্যুইচ অফ করতে হয়। তারপর আগুন নিভানোর জন্য দরকার অগ্নি নির্বাপক বোতল কিংবা পানি। শহরের বিল্ডিং গুলির প্রতিটি ফ্লাট কিংবা প্রতিটি ফ্লোরে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা রাখতে হবে। পরিবার কিংবা বিল্ডিং এর সবাইকে সরাসরি বা ইউটিউব ভিডিও এর মাধ্যমে শিখিয়ে দিতে হবে কিভাবে এসব বোতল প্রয়োজনের সময় অপারেট করে আগুন নিভাতে হয়।

তারপর আসা যাক, কর্মক্ষেত্র কিংবা ভ্রমণে হোটেলে অবস্থানের সময় কিভাবে নিজেকে নিরাপদ রাখবেন? আপনার অফিস ভবন রুপায়ন কোম্পানির মত যত বড় দালানেই হউক না কেন, কর্মস্থলে দেখে নিন কারেন্টের মেইন স্যুইচ কোথায়? আগুন হতে বাঁচার জন্য হাতের নাগালের মধ্যে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে কিনা? যদি কর্মস্থল নিরাপদ না হয় তাহলে আজকেই বসকে বলেন ফায়ার ফাইটিং এর ব্যবস্থা করতে। দায়িত্বশীলরা দেরী করলে সবাই মিলে টাকা উঠিয়ে ফায়ার ফাইটিং এর ব্যবস্থা আজকেই করে নিন। প্রত্যেকে নিজ দায়িত্বে শিখে নিন বিপদের সময় কিভাবে নিজেকে রক্ষা করবেন। জেনে নিন অফিসের ইমারজেন্সি সিড়ি কোন দিকে। তারপরও যদি মনে করেন অফিস নিরাপদ না, অবশ্যই কর্তৃপক্ষকে ফোন করে জানিয়ে দিন ভবন নিরাপদ নয়। আবার বছরে একবার আপনি বেড়াতে গিয়ে হোটেলে অবস্থান করলেন, দেখে নিন ইমারজেন্সি সময়ে কিভাবে নিজেকে নিরাপদ রাখবেন।

সারকথা, আগুন হতে সাধারণ মানুষকে নিরাপদে রাখার মূল দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের হলেও প্রত্যেককে নিজ নিজ জীবনের তাগিদে নিশ্চিত করতে হবে তার নিজের কর্মস্থল কিংবা বাসাবাড়ির ইমারজেন্সি ব্যবস্থা।

ফ্রিল্যান্স লেখক- এইচ. এম. ই রিমন।