–  মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী 

রামু সেনানিবাসের গেইটেই হৃদয়ছোয়া অভ্যর্থনা। তারপর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বীরত্বগাঁথা একাত্তরের অগ্নিঝরা দিনগুলোতে জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হার নামানা অদম্য ও সাহসী গল্প নিয়ে ডকুমেন্টারি ও স্থির চিত্র। যেখানে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সূর্যসন্তান বীরশ্রেষ্ঠদের বীরত্বকাব্য ফুঠিয়ে তোলা হয়েছে অসাধারণভাবে। সেখানে রয়েছে, সেক্টর ভিত্তিক সেক্টর কমান্ডার বীরউত্তমদের দুঃসাহসী যুদ্ধ পরিচালনার গৌরবময় চিত্র। দর্শনার্থীদের বসার ও দেখার রয়েছে সুন্দর আরামদায়ক ব্যবস্থা। এরপর একের পর এক সমারাস্ত্র প্রদর্শনী, যুদ্ধকৌশল, রেডিও সিগনাল, বাংকার, কমান্ডিং পরিচিতি, ভ্রাম্যমাণ অস্ত্র মেরামত ব্যবস্থা, মেডিকেল ক্যাম্প, বিনামূল্যে ডায়াবেটিস পরীক্ষা, রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, উচ্চতা, ওজন ও রক্তেরচাপ পরীক্ষা, সেনাবাহিনীর মনোগ্রাম খচিত বিভিন্ন পণ্যের বিপণন, ডিজিটাল ছবি প্রিন্ট সহ আরো কতো কি। শুধু কামান, রাইফেল, ট্যান্ক, মেশিনগান সহ বিভিন্ন সমরাস্ত্র নয়, আধুনিক সেনাবাহিনীর যেসব কার্যক্রম আমাদের দেশে রয়েছে, তার প্রায় সবগুলোই এ প্রদর্শনীতে দর্শনার্থীদদের জন্য উন্মুক্ত করে সাজিয়ে রাখা ও বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে।

প্রতিটি স্টলে সেনাবাহিনীর সদস্য ও কর্মকর্তাদের অভ্যর্থনা ও বুঝিয়ে দেয়ার আগ্রহ ছিল অভিভূত হওয়ার মতো। প্রতিটি স্টলের সবকিছুতেই দেশপ্রেম ও দেশমাতৃকার প্রতি দায়িত্ববোধের ছোঁয়া। নতুন প্রজম্মকে দেশপ্রেমিকবোধ জাগ্রত করে তোলার এক অসাধারণ প্রয়াস। অপ্রতিরোধ্য আমাদের সেনাবাহিনীর গৌরবময় ও মর্যাদাপপূর্ণ ইতিহাস। যা স্বচক্ষে দেখে প্রতিটি সাধারণ মানুষ প্রেরনা ও প্রত্যয়ে সমৃদ্ধ হচ্ছে নিঃসন্দেহে। যে প্রয়াসে রয়েছে নান্দনিকতা, শিল্প ও রুচিবোধের এক অপূর্ব সমন্বয়। বাজানো হচ্ছে-মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন শিহরন জাগানো দামামা বাজানো জনপ্রিয় সবগান। রামু সেনানিবাসের দশম পদাতিক ডিভিশনের আর্মি সার্ভিসেস কোরের ব্যবস্থাপনায় মহান স্বাতীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে গত ২৫ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৭ দিনব্যাপী এ সমরাস্ত্র প্রদর্শনীতে এসবই নান্দনিকভাবে প্রর্দশন করা হচ্ছে। শৃংখলা, সৌন্দর্য, নিয়মরক্ষা আর নিয়ামানুবর্তিতা যেন প্রদর্শনীর প্রতিটি পরতে পরতে শোভা পাচ্ছে। প্রদর্শনীতে সেনাবাহিনীর ট্রেনিং একটিভেটিস, সামরিক যানবাহন পরিচিতি, সেনাবাহিনীর ত্রান কার্যক্রম, কমান্ড কন্ট্রোল, তাবুতে প্রশিক্ষণ, যুদ্ধে কারিগরি সহায়তা প্রদানের জন্য মোবাইল ওয়ার্কশপ, ফিল্ড হাসপাতাল, বিদেশের শান্তি মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবদান, বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর গত একদশকের অগ্রগতির বর্ণাঢ্য বিবরণ, দেশের বিভিন্ন আপদকালীন সময়ে সেনাবাহিনীর ভূমিকা বর্ণনা ইত্যাদিকে উন্মুক্ত করে রাখা হয়েছে সবার জন্য। সেখানে রয়েছে নামাজের ব্যবস্থা, ওয়াশ রুম সহ জরুরী প্রয়োজনের সব ব্যবস্থা। সব কিছু ঘুরে ঘুরে দেখার সময় মনে হয়েছে-এই তো আমাদের গর্বিত বাহিনী। যারা এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, অখন্ডতা সুরক্ষায় নিজের প্রাণ বিলিয়ে দিতে সবসময় প্রস্তুত। যাদের কর্মকান্ডের এই প্রদর্শনী দেখে প্রচন্ড দেশত্ববোধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে হয়। যাদের জন্য লাখ লাখ শহীদের বিনিময়ে অর্জিত মহান স্বাধীনতাকে বুকে জড়িয়ে প্রতিটি নাগরিক প্রতিদিন নিরাপদ ও নিরাপত্তায় ঘুমাতে পারে। যাঁরা প্রিয়মাতৃভূমির একটি কণাও নিজের প্রাণের বিনিময়ে সুরক্ষা করতে সদা প্রস্তুত। যেকোন আগ্রাসনে জানবাজি রেখে আগ্রাসীদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়ার জন্য যাঁরা সদা তৈরী।

রামু সেনানিবাসের কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের শীল্ড গেইটের দক্ষিণ পার্শ্বের বিশাল মাঠজুড়ে এ সমরাস্ত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। গত ২৫ মার্চ প্রদর্শনী উদ্বোধনের সময় রামু দশম পদাদিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. মইনুল্লাহ চৌধুরী পিএসসি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বর্তমানে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সক্ষম উল্লেখ করে বলেন-স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় তাঁরা সদা প্রস্তুত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শুধু দেশে নয়, বিদেশে জাতিসংঘের শান্তি মিশন সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপক সফলতা ও সুনামের সহিত কাজ করছে ইনশাল্লাহ। যেটা পুরো দেশবাসীর জন্য একটা গর্বের বিষয়। উদ্বোধনের সময় জিওসি মেজর জেনারেল মো.মইনুল্লাহ চৌধুরী পিএসসি আরো বলেন-এধরনের সমরাস্ত্র প্রদর্শনীতে সেনাবাহিনীর কর্মকান্ড সম্পর্কে সাধারণ মানুষ পর্যাপ্ত ধারণা পাবে, নতুন প্রজম্ম সেনাবাহিনীতে বাহিনীতে যোগদানে উদ্বুদ্ধ হবে, পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মাঝে অধিকতর দেশাত্মবোধ জাগ্রত করতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এই সমরাস্ত্র প্রদর্শনী বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ জনপ্রশাসন, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, আনসার, প্রশাসন সহ রাষ্ট্রের অন্যান্য সকল বাহিনীর জন্য বিকেল ৩ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত এবং ২৯ মার্চ হতে ৩১ মার্চ পর্যন্ত একটানা তিন দিন বেলা ১২ টা হতে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত প্রতিদিন সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এদিকে, আগামী ৪, ৫ ও ৮ এপ্রিল রামু সেনানিবাসের মেডিকেল ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল মাঠে চট্টগ্রাম লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালের সহায়তায় বিনামূল্যে চক্ষু শিবির অনুষ্ঠিত হবে।