মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

সোমবার ২৫ মার্চ বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের মধ্য দিয়ে পালিত হলো বায়তুশ শরফের পীর শাহসূফী হযরত মাওলানা আবদুল জব্বার (রাহ.) এর ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী।
২১ বছর পূর্বে ১৯৯৮ সালের এ দিনে চট্টগ্রাম ধনিয়ালাপাড়াস্থ কেন্দ্রীয় বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সের নিজ হুজরা খানায় সকাল ৭ টায় তিনি ইন্তেকাল। বায়তুশ শরফের প্রধান রূপকার হাদিয়ে যামান শাহসূফী হযরত মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল জব্বার (রাহ.) এর মৃত্যুর পরদিন চট্টগ্রাম রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড ময়দানে লক্ষ লক্ষ মুসল্লী’র অংশগ্রহণে স্মরণকালের ঐতিহাসিক বৃহত্তম জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে জানাজা শেষে তাঁকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় বায়তুশ শরফ মসজিদের দক্ষিণ পাশের নিজের গড়া ফুলবাগানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল জব্বার (রা.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী :
সমসায়িককালে মাওলানা আবদুল জব্বার (রা.) ছিলেন যুগের অন্যতম আলেমে দ্বীন, পীর-এ কামেল। অরাজনৈতিক মসজিদ ভিত্তিক সমাজসেবার পুরোধা, শীরক-বিদআত-এর বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে একজন নিবেদিত প্রাণ। দুঃস্থ মানবতার সেবায় সদা সক্রিয়। তিনি তাঁর পীর-মুর্শিদ কুতুবুল আলম শাহসূফী হযরত মাওলানা মীর মোহাম্মদ আখতর (রাহ.)-এর সুযোগ্য একমাত্র ইজাযত প্রাপ্ত খলিফা হিসেবে স্বীয় পীরের পদাঙ্ক অনুকরণ ও অনুসরণ করেন। ইন্তেকালের পূর্বে তিনি জাতীয় পর্যায়ে অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল (এম.এ) মাদ্রাসাসহ ১৬টি মাদ্রাসা, ১৮টি এতিমখানা ও হিফজখানা, দেশের প্রধান প্রধান শহর-নগর-বন্দর-জনপদে ৬৫ টি বায়তুশ শরফ মসজিদ গড়ে তোলেন। তিনি পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ১টি পূর্ণাঙ্গ চক্ষু ও শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া তিনি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল, প্রাইমারী স্কুল, মহিলা কলেজ ও মাদ্রাসাসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। একজন সফল লেখক ও অনুবাদক হিসেবে তিনি ছোট বড় ২১ টি গ্রন্থের রচয়িতা। জীবনে ৩৩ বার পবিত্র হজ্বব্রত পালন করেছেন। তিনি বায়তুশ শরফ আনজুমনে ইত্তেহাদ বাংলাদেশ-এর সাংগঠনিক কার্যক্রম সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, বুলগেরিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, ওমান, বাহরাইন, ইরাক, সিংগাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভারত ও পাকিস্তান সফর করেন।
ইসলামের এ মনীষী ১৯৩৩ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি বার্মার (মায়ানমার) থাংগু জেলার পিনজুলুক রেল স্টেশন সংলগ্ন বাঙ্গালী কলোনীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আব্বা মাওলানা ওয়াছি উদ্দীন (রাহ.) ও আম্মা বেগম ফিরোজ খাতুন (রাহ.)। তাঁর ইন্তেকালের পর বায়তুশ শরফের মতো জাতীয় ভিত্তিক সুবিশাল সংগঠন ও দরবারের দায়িত্ব পালন করছেন হযরত শাহ মাওলানা মোহাম্মদ কুতুব উদ্দীন (ম.জি.আ.)।
তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় বায়তুশ শরফ মসজিদে সোমবার ২৫ মার্চ দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালন করা হয়েছে। তারমধ্যে-বা’দ ফজর চট্টগ্রাম বায়তুশ শরফ মসজিদে খতমে কুরআন ও খতমে তাহলিল অনুষ্ঠিত হয়। বা’দ যোহর খতমে বোখারী সম্পন্ন হয়। বা’দ আসর বায়তুশ শরফের পীর সাহেব বাহরুল উলুম শাহসূফী হযরত মাওলানা মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন (ম.জি.আ) এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় মরহুম পীর সাহেবের বর্নাঢ্য জীবন ও কর্মের ওপর গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য পেশ করেন দেশ বরেণ্য আলেম-ওলামা ও বিশিষ্টজনেরা। বা’দ মাগরিব অনুষ্ঠিত হয় ওয়াজ মাহ্ফিল। এতে বিশেষ মেহমান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. গিয়াসউদ্দিন তালুকদার। বা’দ এশা দোয়া মোনাজাত এবং সবশেষে উপস্থিত মুসল্লি ও ভক্তবৃন্দের মাঝে তবারুক বিতরণ করা হয়।
এছাড়া মরহুমের নিজ বাড়ীতেও মঙ্গলবার ২৬ মার্চ স্বরণ সভা ও জিয়াফতের আয়োজন করা হয়েছে। মরহুমের নিজ বাড়ী সংলগ্ন আল্লামা শাহ আবদুল জব্বার (রাহ.) আদর্শ মহিলা মাদ্রাসার ৩য় বার্ষিক সভা ও আল্লামা শাহ্ আব্দুল জব্বার (রহ.) এর মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে ঈছালে ছাওয়াব ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। কর্মসূচীর বিষয়টি কক্সবাজার বায়তুশ শরফের মহাপরিচালক ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আলহাজ্ব এ.এম সিরাজুল ইসলাম সিবিএন-কে নিশ্চিত করেছেন।