বিশেষ প্রতিবেদক :

মন্ত্রীপরিষদ সচিবের প্রভাবে তার নিজ উপজেলা কক্সবাজারের উখিয়ায় ভোট কারচুপির অভিযোগ মিথ্যা বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক। মন্ত্রীপরিষদ সচিবের নির্দেশে তার নিজ উপজেলা কক্সবাজার উখিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে শতভাগ সুষ্ঠ নির্বাচন হয়েছে। ঐ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে কেবিনেট সচিবের ভাতিজা প্রতিদন্ধিতা করায়, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য মন্ত্রী পরিষদ সচিব শফিউল আলমের বিশেষ নির্দেশনা ছিল বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক বলেন, ‘কয়েকদিন আগে স্যার (মন্ত্রী পরিষদ সচিব) আমাকে উপজেলা নির্বাচনের বিষয়ে ফোন করেছিলেন। তিনি ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত কক্সবাজারের ৫ উপজেলার নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার তাগাদা দেন। আর তার নিজ উপজেলা উখিয়ার নির্বাচন অন্যান্য উপজেলার চেয়েও অবাধ, সুষ্ঠু করার জন্য বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এর জন্য যত কঠোর হওয়া দরকার, হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।’

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘মন্ত্রী পরিষদ সচিব স্যার বলেছিলেন, উখিয়া তাঁর নিজ এলাকা। সেখানে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছে তাঁর আপন ভাতিজা। একারণে উখিয়ার নির্বাচনে কোন অনিয়ম হলে সবাই তাকে টেনে আনবেন। তাই উখিয়া উপজেলা নির্বাচনে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবচেয়ে কঠোর ছিল।’

সোমবার (২৫ মার্চ) বিকেলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে ৫ম উপজেলা নির্বাচন বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন এসব কথা বলেন।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২০১৯ এ উখিয়া উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় চেয়ারম্যান পদে হামিদুল হক চৌধুরী ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে কামরুন্নেসা বেবি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন।

তফশিল অনুযায়ী ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে শুধুমাত্র উপজেলা পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিপুল ভোটে জয়ী হন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বর্তমান মন্ত্রী পরিষদ সচিব শফিউল আলমের আপন বড় ভাই নুরুল আলমের ছেলে। সম্পর্কে তারা আপন চাচা-ভাতিজা।

রোববার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলাকালীন দুপুর ১২ টার দিকে ভোট কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেন উখিয়া উপজেলা নির্বাচনের তিনজন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী। তারা অভিযোগ করে বলেছিলেন, প্রশাসনের সহযোগীতায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করে জাল ভোট প্রদান করে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থকেরা। প্রশাসনকে জানানোর পরও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো প্রশাসন রহস্যজনক কারণে জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষালম্বন করে।

উখিয়ায় ভোট কারচুপির অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে সোমবার মতবিনিময় সভায় জানতে জেলা প্রশাসককে প্রশ্ন করেন কক্সবাজারের ডেইলি স্টারের সাংবাদিক মোহাম্মদ আলী জিন্নাত। ভোট বর্জন করা প্রার্থীদের অভিযোগের উদ্বৃতি দিয়ে তিনি বলেন, প্রার্থীদের ভাষ্যমতে উখিয়ায় বেশির ভাগ কেন্দ্রে ভোট কারচুপি হয়েছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে দায়িত্বপালন করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের কাছে প্রকাশ্যে ভোট কারচুপির বিষয়ে অভিযোগ করতে গেলে তারা উপরের নির্দেশনার কথা জানিয়েছেন। মন্ত্রী পরিষদ সচিবের প্রভাব বিস্তার করে ভোট কারচুপি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বর্জন করা প্রার্থীরা। আসলে কি তাই? তা না হলে অন্যকোন উপজেলায় সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন না উঠলেও উখিয়ায় কেন ভোট কারচুপির অভিযোগ উঠেছে জানতে চান ওই সাংবাদিক।

সাংবাদিক মোহাম্মদ আলী জিন্নাতের এই প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন এসব কথা বলেন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক বলেন, সিভিল সার্ভিসে ওনার (মন্ত্রী পরিষদ সচিব শফিউল আলম) মত দ্বিতীয় আরেকজন সৎ এবং ভাল মানুষ নেই। তিনি প্রশ্ন উঠবেন ভেবেই আগে থেকে প্রশাসনকে উখিয়ার নির্বাচনের বিষয়ে কোন ছাড় না দিতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। বর্জন করা প্রার্থীরা যেসব অভিযোগ করেছে সেগুলোর সঠিক কোন ভিত্তি নেই।
উখিয়া উপজেলা নির্বাচনে ৩৮ হাজার ১০৭ ভোট পেয়ে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. রাশেল পেয়েছেন ২ হাজার ২২৭ ভোট।

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন, অতিরক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মোল্লা, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশির আহমেদ, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের প্রমুখ।