মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

এসময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা, সফল সমবায়ী, প্রশংশিত জনপ্রতিনিধি, দক্ষ সংগঠক ও আদর্শিক রাজনীতিবিদ, এলাকার প্রিয়মুখ এ.কে.এম ইকবাল বদরী’কে অশ্রুজলে চিরবিদায় জানালো হাজার হাজার জনতা। এ দৃশ্য নাদেখলে বুঝা যাবেনা। কি এক করুণ ও হৃদয়নিংড়ানো ভালবাসা জানানোর শেষ দৃশ্য। ভালোবাসা আর আবেগের কাছে মানুষের মন যে কতো অসহায় এ.কে.এম ইকবাল বদরী’র নামাজে জানাজার মাঠে সেটা উপলদ্ধি হয়েছে। এ.কে.এম ইকবাল বদরী’কে চিরবিদায়ের সম্বর্ধনা জানানোর স্থান ছিল চকরিয়া উপজেলার বদরখালী কলোনীজেশন হাই স্কুল ময়দান। ইসলামের পরিভাষায় যাকে বলা হয় নামাজে জানাজা। শুক্রবার ২২ মার্চ। বেলা প্রায় দু’টা গড়াতেই শোকাহত, বিষন্ন হাজার হাজার মানুষের ঢল। মানুষের স্রোত যেন থামবার নয়। মানুষ আসছে আর আসছে। উপছে পড়া ভীড় ঠেলে তখনো অসংখ্য মানুষ তাদের প্রিয়জন এ.কে.এম ইকবাল বদরী’র নিথর নিষ্প্রাণ মুখটি শেষবারের মতো একটু দেখার জন্য পঙ্গপালের মতো ছুটে আসছিল। আর সবই বলছিল-হায় ইকবাল বদরী! হায় ইকবাল বদরী! জানাজা শুরু হওয়ার প্রায় আধাঘন্টা আগেই কানাই কানাই পূর্ণ হয়ে যায় বদরখালী কলোনিজেশন হইস্কুলের বিশাল মাঠ। কোথাও তিল পরিমান জায়গা নেই। জানাজায় অংশ নেয়া বদরখালী এলাকার অনেকেই বলেছেন-সমসাময়িককালে এ অন্ঞ্চলে এটা ছিল মানুষের উপস্থিতির দিক থেকে স্মরণকালের বৃহত্তম জানাজা। পরোপকারী,সদা হাস্যউজ্জ্বল এ.কে.এম ইকবাল বদরী হয়ত জীবদ্দশায় জানতেননা তাঁর এলাকার সহজ সরল মানুষগুলো তাঁকে নিজের অজান্তে কত বেশী ভালোবেসে ফেলেছে? তাঁর আদর্শিক কর্মীরা তাঁকে কতোনা অনুসরণ করেছে। বদরখালীর প্রতিটি এলকা কোনায় কোনায় তাঁর পরিশ্রম, সরব পদচারণা ও উন্নয়নে দেয়া সময়ের ঘাম না শুকাতেই তিনি যে চির বিদায় নেবেন সেটা কেউ কল্পনাও করেননি। তাঁর প্রিয় জন্মক্ষেত্র বদরখালীকে দেশব্যাপী পরিচয় করিয়ে দিতে তাঁর প্রাণান্ত প্রচেষ্টা সফল হয়ে বদরখালী উপনিবেশিক সমবায় সমিতি জাতীয় পর্যায়ে রাষ্ট্রিয় পুরস্কার পেয়েছে। সবাই মেনে নিতে পারছেননা এ.কে.এম ইকবাল বদরীর আকষ্মিক এই চলে য়াওয়া। সবাই বলছিলেন, এই মানুষটির আমাদের বড় বেশী প্রয়োজন ছিল। কিন্তু মহান আল্লাহতায়লার কাছে এ.কে.এম ইকবাল বদরী’কে নিয়ে যাওয়াটাকে আল্লাহ শ্রেয় মনে করেছেন, সেই বিশ্বাসে সবাই মেনে নিতে চাইলে আবেগী মনতো সেটা কোনভাবেই মানতে চায়না। বিশাল জানাজা প্রমান করেছে এ.কে.এম ইকবাল বদরী কতো বেশী জনপ্রিয়, সংগঠক ও জনবান্ধব মানুষ ছিলেন। শুক্রবার ২২ মার্চ বিকেল ৩ টায় অনুষ্ঠিত বিশাল এই নামাজে জানাজায় বদরখালী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব ও বদরখালী ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, প্রখ্যাত আলেম মাওলানা আবুল বশর ইমামতি করেন। জানাজার পূর্বে এ.কে.এম ইকবাল বদরী’র বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের স্মৃতিচারণ করে বক্তৃতা করেন-কক্সবাজার জেলা বিএনপি’র সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী, জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ও মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি জামিল ইব্রাহিম চৌধুরী, চকরিয়া উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আলহাজ্ব মিজানুর রহমান চৌধুরী খোকন মিয়া, চকরিয়া উপজেলা পরিষদের নব নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান মকসুদুল হক চুট্টু, বদরখালী উপনিবেশিক সমবায় সমিতি’র সভাপতি নুরুল আলম সিকদার, বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খাইরুল বশর, মরহুমের চাচাতো ভাই ও বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এম. হোসাইন আহমেদ, চকরিয়া উপজেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট লুৎফুল কবির, মরহুমের ছোট ভাই, কক্সবাজার জেলা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির সাবেক সফল সভাপতি এ.এম এস্তাফিজুর রহমান ও মরহুমের একমাত্র পুত্র সন্তান খোবায়েদ মুহাম্মদ শায়েখ এমবিএ। বহুগুনে গুনান্বিত এ.কে.এম ইকবাল বদরী’র বর্ণাঢ্য জীবনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বক্তা ও শ্রোতারা সকলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এসময় জানাজার ময়দানে এক হৃদয় বিদারক করুণ দৃশ্যের অবতারণা হয়। বক্তারা মরহুমকে একজন নির্লোভ ও ত্যাগী সমাজকর্মী হিসাবে মূল্যায়ন পূর্বক তাঁর অবদান সবার কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে উল্লেখ করে বলেন-এ.কে.এম ইকবাল বদরী’র আকস্মিক চলে যাওয়া আমাদের সকলের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। যে শূন্যতা সহজে পূরণ হবার নয়। নামাজে জানাজা শেষে কুতুবনগর পারিবারিক কবরস্থানে পিতার কবরের পাশেই সবার অশ্রুজলে এ.কে.এম ইকবাল বদরী’কে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। বিদায়, চির বিদায় হে গণমানুষের হৃদয়ের মনিকোটায় স্থান করে নেয়া উপকূলীয় এলকায় ক্ষণজম্মা এ.কে.এম ইকবাল বদরী। চিরনিদ্রায় ভাল থেকো আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় এ.কে.এম ইকবাল বদরী। শেষ বিচারের দিনে দেখা হবে হে আল্লাহতালার প্রিয় বান্দা এ.কেএম ইকবাল বদরী আপনার সাথে। মহান আল্লাহ রাব্বুলআলামিন এ.কে.এম ইকবাল বদরী’র বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন কবুল করে নিয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসে স্থায়ী ঠিকানা করে দিন। আমিন! চুম্মা আমিন।
চকরিয়া উপজেলার বদরখালীর বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বদরখালী উপনিবেশিক সমবায় সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মরহুম আলহাজ্ব কবির আহমদ ও নুরুন্নাহারের ৬ পুত্র এক কন্যা সন্তানের মধ্যে ১৯৫৮ সালে জন্মগ্রহণকারী এ.কে.এম ইকবাল বদরী ছিলেন সবার বড়। ভাই বোনদের মধ্যে অন্যান্যরা হলেন-মরহুম এ.কে.এম ইফতেখার উদ্দিন বকুল, কক্সবাজার জেলা বিএনপি’র সফল দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ বদরী, কক্সবাজার সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও কক্সবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাবেক সফল সভাপতি এ.এম এস্তেফিজুর রহমান, সৌদী প্রবাসী এ.এম ইমতিয়াজ উদ্দিন ও এ.এম ইসরাত হোসাইন। বোনেরা হলেন-আয়েশা খাতুন ও নামায়েশে জান্নাত মিলু। নিরহংকার, সদালাপী, স্বজ্জ্বন, অমায়িক ও নিরেট একজন ভদ্র লোক হিসাবে সবার কাছে সুপরিচিত এ.কে.এম ইকবাল বদরী ও শাহেদা বেগম দম্পতির একমাত্র পুত্র খোবায়েদ মুহাম্মদ শাইখ এমবিএ ডিগ্রী অর্জন করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসাবে বর্তমানে কর্মরত আছেন। একমাত্র কন্যা ঢাকার একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ (সম্মান) এ অধ্যায়নরত।
প্রসঙ্গত, এ উপমহাদেশ শ্রেষ্ঠ সমবায় সমিতি বদরখালী উপনিবেশিক সমবায় সমিতির একাধিকবার নির্বাচিত সফল সাধারণ সম্পাদক, বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সফল চেয়ারম্যান, মাতামুহুরি সাংগঠনিক উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক, কক্সবাজার জেলা বিএনপি নির্বাহী কমিটির সিনিয়র সদস্য, কক্সবাজার জেলা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এ.কে.এম ইকবাল বদরী (৬১) বৃহস্পতিবার ২১ মার্চ সকাল ১১ টার দিকে বদরখালীস্থ নিজ বাড়িতে গোসল করার সময় হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। বদরখালী থেকে এ.কে.এম ইকবাল বদরী’কে তাৎক্ষনিক চকরিয়া জমজম হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে তাকে মৃত ঘোষনা করেন।