ডেস্ক নিউজ:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভিপি (সহ-সভাপতি) নির্বাচিত হয়েছেন কোটা আন্দোলনকারীদের নেতা নুরুল হক নুর এবং জিএস নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। ঢাবির ছাত্র সংসদের ভিপি ও জিএসের ক্ষমতা কতটুকু ও তারা কী সুযোগ-সুবিধাইবা পান তা নিয়ে আগ্রহ রয়েছে জনমনে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিন্ডিকেট সদস্য এবং বিগত সংসদের ভিপি-জিএসদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আলাদাভাবে কোনো ভাতা-সম্মানী না পেলেও সম্মান ও ক্ষমতার দিক থেকে এ পদ দুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ । তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ দুটি বডি ‘সিনেট’ এবং সিন্ডিকেট’ এর সদস্য হবেন।

সেখানে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বিভিন্ন দাবি দাওয়ার কথা তুলে ধরতে পারবেন। ছাত্রদের স্বার্থপরিপন্থী যে কোনো বিষয়ে তারা সেখানে প্রতিবাদ করতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট এবং সিন্ডিকেটে সদস্য হন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। সেখানে তারাও অন্য সদস্যদের মতোই ক্ষমতাবান।

তারা সেখানে তাদের মতামত প্রদানের সুযোগ পাবেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাজেটসহ যেকোনো কর্মসূচিতে তারা ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে উপস্থিত থাকবেন। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান ও সাবেক সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দুটি বডি হচ্ছে- ‘সিনেট’ ও ‘সিন্ডিকেট’।

এসব বডির সদস্য নির্বাচিত হন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এসব বডির সদস্য নির্বাচিত করা হয়। যেখানে শিক্ষক প্রতিনিধিও থাকেন। ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে ভিপি-জিএসরাও এসব বডির সদস্য হবেন।

অধ্যাপক ড. মঈনুল বলেন, ভিপি-জিএসরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব বডিতে থেকে আলাদা কোনো ভাতা পাবেন না। তবে, সিনেট কিংবা সিন্ডিকেটের বৈঠকে যোগদান করলে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাতা পাবেন। তাছাড়া সিন্ডিকেট বা অন্যকোনো বডি থেকে তাদের কোনো দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।

যদি এটা দেওয়া হয় তাহলে সেটা তো অন্য বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে যত কাজ-কর্ম থাকে তাতে কোনো না কোনোভাবে তাদের সম্পৃক্ততা থাকবে। সমাবর্তন বা যে কোনো কর্মসূচিতে তাদের প্রতিনিধত্ব থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট অনুমোদন এবং বিভিন্ন উন্নয়নের যে পরিকল্পনা হয় তার কমিটির সদস্য হিসেবেও থাকবেন তারা।

ওখানে ছাত্র সংসদের প্রতিনিধি হিসেবে তারা ছাত্রদের দাবি দাওয়া বলতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, সিলেকশন বোর্ড, যেখানে কাউকে চাকরি দেওয়া বা চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়। সেখানেও একজন প্রতিনিধি হিসেবে তাদের কর্তৃত্ব থাকবে।

তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো জরুরি ঘটনার ক্ষেত্রে জরুরি কোনো বৈঠক ডাকতে হয়, যেটার সভাপতি থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে তারা ওখানে থাকবেন। দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেটে বা সিনেটে কোনো ছাত্র প্রতিনিধি নেই।

ডাকসুতে নির্বাচিতরা এখন থেকে এসব জায়গায় প্রতিনিধি হিসেবে থাকবে। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী সভাগুলোতে তারা অংশ নিতে পারবেন। আবাসন বা পরিবহনের কোনো সুবিধা তারা পাবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার জানামতে তারা আলাদাভাবে এ ধরনের কোনো সুবিধা পাবে না।

তবে তারা ছাত্র হিসেবে আবাসন সুবিধা তো পাচ্ছেনই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কর্মসূচিতে বা হলে হলে যেসব কর্মসূচি হবে তারা সেখানে প্রতিনিধি হিসেবে থাকবেন। মোটকথা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তারা সব জায়গায় থাকতে পারবেন। বিধি অনুযায়ী ডাকসুতে কমপক্ষে ৫ জন ছাত্র প্রতিনিধি থাকবেন।

এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, এখন সিন্ডিকেটে ১৮ জন সদস্য আছেন, সেখানে এখন ছাত্র প্রতিনিধি যোগ হবে। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সিন্ডিকেট মেম্বার থাকেন। যেমন, বিশিষ্ট ব্যক্তির প্রতিনিধি, শিক্ষকদের প্রতিনিধি, রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট প্রতিনিধি। বর্তমানে রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি সিন্ডিকেট মেম্বার হচ্ছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক। কিন্তু বর্তমানে কোনো ছাত্র প্রতিনিধি নেই।

এখন ডাকসুতে নির্বাচিতদের থেকেই সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে তারা আসতে পারবেন এবং সিনেটে তারা অংশগ্রহণ করতে পারবেন। বিভিন্ন ধরনের কাজে বাজেট বাড়ানো বা কমানোর বিষয়ে তারা মতামত দিতে পারবেন। উন্নয়ন কাজগুলো যাতে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয় সে বিষয়ে তারা কথা বলতে পারেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয়ে তারা উপাচার্যকে সরাসরি পরামর্শ দিতে পারবেন এবং উপাচার্য সেগুলো আমলে নেবেন। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমের প্রতিটি ক্ষেত্রে ছাত্র প্রতিনিধিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে।