মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

পন্ঞ্চম উপজেলা পরিষদ পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে কক্সবাজার জেলার ৫ টি উপজেলায় রোববার ২৪ মার্চ একই সাথে ভোট গ্রহন করা হবে। কক্সবাজার জেলাস্থ উপজেলা গুলো হচ্ছে-টেকনাফ, উখিয়া, রামু, পেকুয়া ও মহেশখালী। হাইকোর্টের আদেশে কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় সেখানে রোববার নির্বাচন আপাতত হচ্ছেনা।
৫ টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহনের জন্য ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন বলে পেকুয়া, রামু, মহেশখালীর রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ বশির আহমেদ এবং উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার রিটার্নিং অফিার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সা.) মোঃ মাসুদুর রহমান মোল্লা সিবিএন-কে জানিয়েছেন।
পেকুয়া:
পেকুয়া উপজেলায় মোট ভোট কেন্দ্র রয়েছে ৪০ টি। ভোট কক্ষ রয়েছে ৮৫ টি। ভোটার রয়েছে মোট ১০৬২৭৯ জন। তারমধ্যে পুরূষ ভোটার ৫৫৬২৬ জন এবং মহিলা ভোটার ৫০৬৫৩ জন। প্রত্যেক ভোট কেন্দ্রের জন্য একজন করে প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ৬ জন অতিরিক্ত প্রিজাইডিং অফিসারকে যেকোন সময় আপদকালীন দায়িত্বপালনের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে স্টেনবাই রাখা হয়েছে। পেকুয়া উপজেলায় ৩ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী, ৬ জন পুরূষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ৩ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মহেশখালী :
মহেশখালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোট কেন্দ্র ৭৪ টি, মোট ভোট কক্ষ ৩২০ টি, প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে একজন করে প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আপদকালীন দায়িত্বপালনের জন্য আরো ১০ জন প্রিজাইডিং অফিসারকে প্রশিক্ষন দিয়ে স্টেনবাই রাখা হয়েছে। এ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২১১৬৫৩ জন। তারমধ্যে পুরূষ ভোটার ১০৯৯০৩ জন, মহিলা ভোটার ১০১৭৫০ জন। মহেশখালী উপজেলায় ৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী, ৬ জন পুরূষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ২ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
রামু :
রামু উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ৬১ টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। মোট ভোট কক্ষ রয়েছে ৩০১ টি। প্রত্যেক ভোট কেন্দ্রে একজন করে প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত প্রিজাইডিং অফিসার রাখা হয়েছে ১০ জন। রামু উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১৫৮২৮৬ জন। তারমধ্যে পুরূষ ভোটার ৮১৫৬৩ জন ও মহিলা ভোটার ৭৬৭২৩ জন। রামু উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রার্থী, পুরূষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রার্থী ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
টেকনাফ :
দেশের সর্বদক্ষিণের সীমান্ত উপজেলা ইয়াবা নগরী হিসাবে খ্যাত টেকনাফ উপজেলায় মোট ভোট কেন্দ্র ৫৫ টি। ভোট কক্ষ ২৫৪ টি। মোট ভোটার সংখ্যা ১৪৫৮০৮ জন। এরমধ্যে পুরূষ ভোটার ৭২৬৫৭ জন। মহিলা ভোটার ৭৩১৫১ জন। প্রত্যেক ভোট কেন্দ্রে একজন করে প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ৮ জন অতিরিক্ত প্রিজাইডিং অফিসারকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
উখিয়া:
উখিয়া উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মুক্তিযোদ্ধা কন্যা কামরুন্নেছা বেবী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এ উপজেলায় শুধুমাত্র পুরূষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে রোববার ভোট গ্রহন করা হবে। উখিয়া উপজেলায় মোট ভোট কেন্দ্র ৪৫ টি। ভোট কক্ষ ২১১ টি। মোট ভোটার সংখ্যা ১২০৩৩৮ জন। এরমধ্যে পূরূষ ভোটার ৬১৩৪৪ জন। মহিলা ভোটার ৫৮৯৯৪ জন।
প্রত্যেক উপজেলায় রোববার সকাল ৮ টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত প্রত্যেক কেন্দ্রে ভোট গ্রহন করা হবে। কক্সবাজার জেলা নির্বাচন অফিসার কার্যালয়ের প্রধান সহকারী মোহাম্মদ মোজাফফর জানান-ইতিমধ্যে ব্যালট পেপার, ভোট বাক্স, সীল, অমোচনীয় কালি, কলম, স্টাম্প প্যাড, বিভিন্ন ফরম, ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার যানবাহন সহ ভোট গ্রহনের জন্য আনুসঙ্গিক সকল দ্রব্য স্ব স্ব সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে কেন্দ্রভিত্তিক বন্ঠন পূর্বক মজুদ করে রাখা হয়েছে। শনিবার সকাল ৯ টা থেকে প্রিজাইডিং অফিসারদের দায়িত্বে নিরাপত্তা বাহিনীসহ স্ব স্ব ভোট কেন্দ্রের জন্য মালামাল সরবরাহ দেয়া হবে। সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার শিমুল শর্মা জানান-প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ ৫ টি উপজেলায় মোট ৪৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ৫ টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দায়িত্বপালনের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক উপজেলায় একজন করে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাঁরা ইতিমধ্যে নির্বাচনী অপরাধ ও অভিযোগ সমুহ আমলে নিয়ে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করে দোষী প্রার্থীদের জরিমানা, সতর্ক করে বিভিন্ন বিচারিক কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন। বিচারক হাকিমগণ সোমবার পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচনে পুলিশের পাশাপাশি ৩০ প্লাটুন বিজিবি ও ৬ প্লাটুন র‍্যাব নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কুতুবদিয়া উপজেলা, মহেশখালী উপজেলা ও টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিনে কোষ্টগার্ডও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় সংখক আনসার সদস্যও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। শুক্রবার থেকেই তারা সকলে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। শুক্রবার রাত থেকেই ৫ টি উপজেলার সর্বত্র মোটর সাইকেল চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শনিবার বিকেল থেকে অত্যাবশ্যকীয় যানবাহন ছাড়া অন্য সকল প্রকার যান চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। নৌযান চলাচলও বন্ধ রাখা হবে। পাশ পাওয়া গণমাধ্যম কর্মী, পর্যবেক্ষক, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া অন্যান্যরা ভোট কেন্দ্র এলাকায় যেতে পারবেননা। কক্সবাজার ও বান্দরবানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের শনিবার রাত থেকে সোমবার পর্যন্ত যতদূর সম্ভব উল্লেখিত ৫ টি উপজেলার ভৌগলিক এলাকা এড়িয়ে যেতে নির্বাচন কমিশন থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নির্বাচন গ্রহনের দিন রোববার ২৪ মার্চ ৫ টি উপজেলায় ইতিমধ্যে সাধারণ ছুটি ঘোষনা করা হয়েছে। এ দিন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ও অত্যাবশ্যকীয় অফিস ছাড়া সকল সরকারী, বেসরকারি, আধাসরকারী, স্বায়তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বিভাগ, সংস্থা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। এদিকে নির্বাচনে কোন ধরনের গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা, সন্ত্রাস, পরিবেশকে অশান্ত করতে চাইলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে বলে উল্লেখ করে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম সিবিএন-কে জানান-নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ করতে সব ধরনের নিরাপত্তামূলক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী কোন পক্ষকে বিন্দু পরিমাণ প্রভাব বিস্তার করতে সুযোগ দেয়া হবেনা উল্লেখ করে তিনি বলেন-অন্ত্যন্ত শান্তিপুর্ণ, ভীতিমুক্ত, নিরাপদ ভোটারবান্ধব পরিবেশে ভোট গ্রহন করা হবে ইনশাল্লাহ। চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম আরো জানান-৫ টি উপজেলার সর্বত্র শুক্রবার থেকেই নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে। পাশছাড়া কোন বহিরাগত আসলেই আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন-গত ১৮ মার্চ অনুষ্ঠিত চকরিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের মতোই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সকল সদস্য ভয়ভীতি, হুমকি উপেক্ষা করে কঠোর ও পেশাদারিত্বের সাথে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবে ইনশাল্লাহ।