ডেস্ক নিউজ:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর কার্যালয়ে ‘মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম প্রকল্পের উপস্থাপনা’ সভায় বক্তব্য দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে বলেছেন, উন্নয়ন প্রকল্পগুলো এমনভাবে গ্রহণ করুন, যাতে জনগণ এর কারণে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই উন্নয়নের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করব, কিন্তু প্রকল্প নেওয়ার সময় এটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে জনগণের জন্যই তা করা হচ্ছে।, তিনি বলেন, জনগনের জন্য উন্নয়ন, কিন্তু উন্নয়নের জন্য জনগণ কষ্ট পাবে তা হতে পারেনা। আগে জনগনের সমস্যা সমাধান হতে হবে। তারপর উন্নয়ন।. তিনি জনগণকে কষ্ট দিয়ে কোন উন্নয়ন না করার আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী ২১ মার্চ বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর কার্যালয়ে মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রমের (এমআইডিআই) প্রকল্প উপস্থাপনকালে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, মহেশখালী মাতারবাড়িতে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে । আর এ উন্নয়নে স্থানীয় জনগনের ত্যাগ রয়েছে। কিন্তু মহেশখালি মাতারবাড়ির ক্ষতিগ্রস্থরা সাহায্য পাচ্ছেনা । এমন খবর স্থানীয় জনগন আমাকে জানিয়েছেন । অনেকে তাদের ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেনা। আগে ক্ষতিগ্রস্থদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে হবে। এরপর উন্নয়ন কর্মকান্ড করতে হবে।
বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটানোই তাঁর সরকারের লক্ষ্য, যাতে তাঁরা সবাই একটি সুন্দর জীবন পেতে পারে। তিনি বলেন, ‘যখনই আমরা কোনো উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করব তখন আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে দরিদ্র জনগণের জীবন এবং জীবিকা কোনোভাবেই থেমে না যায়।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় যাঁদের জমিজমা নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, তাঁদের সঠিকভাবে ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়ে লক্ষ্য রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘এটা দেখা গেছে (বিভিন্ন সময়ই পরিলক্ষিত হয়েছে) যাদের জমি নিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে তারা কিছুই পাচ্ছে না। কাজেই আমাদের বিষয়টির প্রতি লক্ষ রাখতে হবে যাতে তারা যথাযথ ক্ষতিপূরণ পেতে পারে।’
কক্সবাজারের উন্নয়ন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, সমুদ্রতীরবর্তী এই জেলা একসময় খুবই অবহেলিত ছিল এবং এর জনগণের জীবনযাত্রার মানও ছিল অমানবিক। তিনি বলেন, একসময় কক্সবাজারে কিছুই ছিল না এবং সমগ্র এলাকার জনগণ শুধু লবণ এবং পান চাষের ওপর ওপর নির্ভরশীল ছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে তাঁর সরকার কক্সবাজারকে একটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে। পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জেলার মাতারবাড়ীসহ চর এলাকাতে শিল্পকারখানা গড়ে তোলা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সর্ববৃহৎ কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কয়লার জেটি এবং একটি এলএনজি টার্মিনাল মাতারবাড়ীতে গড়ে তোলা হচ্ছে। পাশাপাশি একটি বহুমুখী সমুদ্রবন্দর, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, সড়ক, রেল এবং এ–সংক্রান্ত আরও বিভিন্ন প্রকল্পসহ মোট ৩৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপান, চীন, ভারত এবং কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ ইতিমধ্যেই মাতারবাড়ীতে তাদের বিনিয়োগের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে তা কেবল মাতারবাড়ী অঞ্চলের উন্নয়নই নয়, সমগ্র দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও বিরাট ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী এমআইডিআই প্রকল্পের মূল নকশা প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং সচিবরা এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ও দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।