জসীম উদ্দীন :

মাত্র ১০বছর বয়সে দরিদ্রতার সাথে লড়ে যাওয়ার নাম রাফিয়া। সে কক্সবাজার দীর্ঘতম সৈকতে ঝিনুক বিক্রেতা।
এত অল্প বয়সে রাফিয়াকে নিয়তি বাধ্য করেছে সংসারের ভার নিজ কাঁধে তুলে নিতে। তাইতো শিশু কণ্যা রাফিয়া স্কুলে যাওয়ার পাশাপাশি ঝিনুক বিক্রি করেন সৈকতের বিভিন্ন পর্যটন স্পট গুলোতে। আর সে আয় দিয়ে ভালোই চলছিল রাফিয়াদের সংসার।
তবে সম্প্রতি ফেইসবুকের কল্যাণে রাফিয়াকে পুরো দুনিয়া চেনে। ফেইসবুকে কেউ একজন রাফিয়ার একটি ছবি আপলোড় করে দিলে সঙ্গে সঙ্গে সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। অনেক ফেইসবুক ব্যবহারকারী রাফিয়াকে নিয়ে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে হলিউড বলিউডের বিখ্যাত সুন্দরী নায়িকাদের।
ফেইসবুক ব্যবহারকারী এসব নায়িকাদের সঙ্গে রাফিয়ার ছবি দিয়ে ফেইসবুকে লিখছেন- কে বেশি সুন্দর? কক্সবাজারের ঝিনুক বিক্রেতা রাফিয়া না ইন্ডিয়ার ক্যাটরিনা? অথবা বা কার হাসি বেশি সুন্দর ইত্যাদি।
আর এটাই রাফিয়া ও তার পরিবারে জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে রাফিয়ার স্কুলে যাওয়া আসা। বাধ্য হয়েছে ঝিনুক ব্যবসা ছেড়ে রাফিয়া বাড়িতে বসে থাকতে।
রাফিয়ার চাচা মহিউদ্দীন বলেন, কোন এক পর্যটক রাফিয়ার ছবি তুলে ফেইসবুকে আপলোড় করে দিলে সঙ্গে সঙ্গে ছবিটা নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। এ কারনে এখন রাফিয়া এখন স্কুলে যেতে পারেনা। ঝিনুক নিয়ে যেতে পারেনা সৈকতে।
তিনি জানান, রাফিয়াকে সবাই চিনে ফেলায় সবাই তার সাথে সেলফিতে মেতে উঠে। অপহরণ অথবা অজানা কোন এক ভয়ে দিন পার করছে রাফিয়ার পরিবার। তাই তাকে আপততঃ ঘরবন্দি থাকতে হচ্ছে।
কক্সবাজার সদরের ঝিলংঝা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড ঝিরঝিরি পাড়া হতদরিদ্র আবদুল করিমের কন্যা রাফিয়া। মা রহিমা বেগম গৃহিণী।
রাফিয়া দুই ভাই, দুই বোন। তার মধ্যে রাফিয়া মেজ। বড় ভাই আবদুল্লাহ্ নবম শ্রেণিতে পড়েন। রাফিয়া কলাতলির সৈকত প্রাইমারির পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। তবে আপাতত তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ রয়েছে।
মা রহিমা বেগম জানান, রাফিয়ার বাবা দীর্ঘদিন ধরে বেকার ও অসুস্থ থাকায় রাফিয়া প্রতিদিন সৈকতে ঝিনুক বিক্রি করে যা আয় করতো তা দিয়ে চলতো তাদের সংসার। রাফিয়া গত এক সপ্তাহ যাবত ঝিনুক বিক্রি করতে না পারার কারনে গত দুইদিন ধরে তাদের বাড়িতে চাল, ডাল কিছুই নেই। অভাবের সংসার দিনকে দিন আরো অভাবগ্রস্ত হবার ভয় তার।
অবুঝ মেয়ে রাফিয়া এসব কিছুই মানতে রাজি নয়। সে তার বাবার চিকিৎসা ও সংসার চালাতে আবারো ঝিনুক হাতে ফিরতে চাই। যেতে চাই স্কুলে।
রাফিয়া জানায়, সে প্রতিদিন ঝিনুক বিক্রি করে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করতো। অভাবের সংসারের কথা মাথায় রেখে কখনো একটা টাকাও নিজে খরচ করতেন না। সব টাকাই মায়ের হাতে তুলে দিতেন। এ টাকা দিয়ে তার স্কুলে খচর ও সংসারের খরচ মিটত বলে জানাল সে।
রাফিয়া কান্নাজড়িত কন্ঠে বললো, ফেইসবুক কি আমি বুঝিনা, চিনিনা। তবে সবার উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আমাকে আর আমার পরিবারকে এ বিপদ থেকে উদ্ধার করুন। আমি পড়তে চাই। বাবার চিকিৎসা করাতে চাই। সংসার চালাতে চাই। আর এসব করতে গেলে আমাকে আগের মত ঝিনুক বিক্রি করতে যেতে হবে। আমি সবার সহযোগিতা চাই।
এ ব্যাপারে রাফিয়ার বাবা আবদুল্লাহ বলেন, রাফিয়ার আর সৈকতে যাওয়ার সুযোগ নেই। কেউ যদি এগিয়ে এসে তার পড়াশোনার দায়িত্ব গ্রহণ করে তবে আমি তাকে স্কুলে পড়তে দেব। নয় তো আমার সাধ্য নেই।