শাহেদ মিজান, সিবিএন:

পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তৃতীয় ধাপে কক্সবাজার জেলার ছয় উপজেলার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত আগামী ২৪ মার্চ। সে হিসাবে আর মাত্র তিনদিন সময়। ভোটের সময় একদম নিকটে ঘনিয়ে আসায় প্রার্থীদের মধ্যে বেশ তোড়জোড় চলছে। উখিয়া ছাড়া বাকি পাঁচ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে এবং পাঁচ উপজেলায় ভাইস-চেয়ারম্যান ও চার উপজেলায় মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ভোটযুদ্ধ হবে। সব উপজেলায় চলছে শেষ মুহুর্তেও প্রচার-প্রচারণা। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ করতে নির্বাচন এবং প্রশাসনও প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্য মতে, আগামী ২৪ মার্চ কক্সবাজারের মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, রামু, উখিয়া ও টেকনাফে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এই ভোটযুদ্ধে ছয় উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ১৪জন, ভাইস-চেয়ারম্যান পদে-৩১ জন এবং মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ১০জন মোট ৫৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে মহেশখালীতে চেয়ারম্যান পদে চারজন, ভাইস-চেয়ারম্যান পদে ছয়জন ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে দুইজন।

কুতুবদিয়ায় চেয়ারম্যান পদে দুইজন, ভাইস-চেয়ারম্যান পদে দুইজন এবং মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে দুইজন। পেকুয়ায় চেয়ারম্যান পদে তিনজন, ভাইস-চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে তিনজন। রামুতে চেয়ারম্যান পদে দুইজন, ভাইস-চেয়ারম্যান পদে চারজন ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে তিনজন। উখিয়া চেয়ারম্যান পদে উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নৌকার প্রার্থী অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে কামরুন্নেছা বেবি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ভাইস-চেয়ারম্যান পদে আটজন রয়েছেন। টেকনাফে চেয়ারম্যান পদে তিনজন, ভাইস-চেয়ারম্যান পদে আটজন ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

স্থানীয় পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সব উপজেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা অধিকাংশ প্রার্থী ভোটের মাঠেও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। তিন পদেই ভোটের প্রতিযোগিতা চলছে। প্রতিযোগিতায় এসব প্রার্থীরা রাতদিন সমানতালে বিভিন্নভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রার্থীরা গণসংযোগ, মাইকিং, উঠোন বৈঠক, পথসভা ও ভোটারের ঘরে ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট ভিক্ষা করছেন। এসব ভোটের প্রচারণায় তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে সব উপজেলাতে। রাতদিন বিরাজ করছে ভোট উৎসবের আমেজ। প্রার্থীদের পাশপাশি ভোটাররাও মেতে উঠেছেন ভোট উৎসবে। ঘরে-বাইরে, চায়ের দোকান থেকে-বাজারঘাটে; সবর্ত্র চলছে ভোটের হিসাব-নিকাশ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহেশখালী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী হোছাইন ইব্রাহিম, স্বতন্ত্র প্রার্থী বড়মহেশখালী ইউনিয়নের সাবেক দু’বারের চেয়ারম্যান শরীফ বাদশা ও উপজেলা যুবদলীগের আহ্বায়ক সাজেদুল করিম। তবে মূল লড়াই হবে হোছাইন ইব্রাহিম ও শরীফ বাদশার মধ্যে-এমনটি মনে করছেন স্থানীয় সচেনতন মহল। এই দুইজনের মধ্যে নানাভাবে ভোটের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন হোছাইন ইব্রাহিম। তবে তার একদম কাছাকাছি হয়ে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন শরীফ বাদশাও।

কুতুবদিয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী এড. ফরিদুল ইসলাম বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে গিয়েও শেষ মুহূর্তে তা হয়নি। পরে হাইকোর্টে রীট করে প্রার্থীতা ফিরে পাওয়ায় চেয়ারম্যান পদে তিনি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুল হক সাগরের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। প্রচার-প্রচারণায় দুইজনই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ভোটের লড়াইয়ে দুইজনই কাছাকাছি থাকবেন বলে মনে করছেন স্থানীয় নির্বাচন সচেতন লোকজন।

পেকুয়ায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল কাসেম, স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগ নেতা এস.এম গিয়াস উদ্দিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা যুবলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম। এই তিন প্রার্থীর মধ্য থেকেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবে বলে মনে করছেন ভোটররা।

রামুতে চেয়ারম্যান পদে হচ্ছে তীব্র প্রতিযোগিতা। কারণ মাত্র দুইজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। একজন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী রিয়াজুল আলম অন্যজন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল। প্রচার-প্রচারণায় দুই প্রার্থীই তুমুল প্রতিযোগিতা চালাচ্ছেন। ভোটের হিসাবেও দুইজন হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করার আভাস দেখা যাচ্ছে। তবে নানা কারণে সোহেল সরওয়ার কাজল এখন পর্যন্ত ভোটের মাঠে এগিয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

উখিয়ায় চেয়ারম্যান পদে হামিদুল হক চৌধুরী এবং মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে কামরুন্নেসা বেবি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তবে পুরুষ ভাইস-চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সর্বোচ্চ আটজন প্রার্থী। এরমধ্যে অধিকাংশই প্রতিযোগিতায় রয়েছেন। তবে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভোট না হওয়া উখিয়া কিছুট নিরুত্তাপ রয়েছে ভোটের পরিবেশ।

সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে চলছে তুমুল ভোটযুদ্ধ। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী করছেন তিনজন শক্তিমান প্রার্থী। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ এবং উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নূরুল আলম। ভোটের প্রতিযোগিতায় তিন প্রার্থী কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। প্রচার-প্রচারণা তিনজনই পাল্লা দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন। তিন প্রার্থীই চষে বেড়াচ্ছেন উপজেলার সর্বত্র। ভোটের হিসাবে তিনজনই সমানে সমান রয়েছেন। তবে কে হতে যাচ্ছেন আগামীর টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান, তা এখন পর্যন্ত অনুমান করা যাচ্ছে না- খোঁজ নিয়ে এমনটিই জানা গেছে।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইদুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘জেলার প্রথম নির্বাচন চকরিয়া উপজেলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। সে নির্বাচনটি আমরা অত্যন্ত সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ এবং সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি। বাকি নির্বাচনগুলোও এমনভাবে সম্পন্ন করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাই সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, ‘সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বদ্ধপরিকর। এর স্বার্থে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে কঠোর অ্যাকশন নেয়া হবে।’