নিজস্ব প্রতিবেদক,চকরিয়া :

চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামীকাল (১৮মার্চ) সোমবার। অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে উপজেলা ও পৌরসভার ৯৯টি কেন্দ্রে ৬৩৪টি বুথে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন মোট দুই লাখ ৮৪ হাজার ৫৫৫জন ভোটার। নির্বাচন কমিশন চকরিয়া উপজেলায় একটি অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারি রির্টানিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন।

তিনি বলেন, অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে চকরিয়া উপজেলায় ২০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও একজন জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ছয় প্লাটুন বিজিবি ও ১১শত জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এরমধ্যে প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স, পৌরসভায় দুটি স্ট্রাইকিং ফোর্স, দুই কেন্দ্র মিলে একটি করে পুলিশের মোবাইল টিম, প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পৌরসভায় দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।

তিনি আরও বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রে দুইজন অস্ত্রধারীসহ ১২জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। ৯৯জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তার অধীনে ভোট গ্রহনের এসব প্রস্তুতির পরও স্থানীয় প্রশাসন উপজেলার ৯৯টি কেন্দ্রের মধ্যে সবকটিকে অধিক ঝুঁিকপুর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বলে দাবি করেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন।

একই ধরণের কেন্দ্র ঝুঁিকর আশঙ্কা থাকার অভিযোগ তুলেছেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ফজলুল করিম সাঈদী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়ে কক্সবাজার-১ আসনের এমপি জাফর আলম আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও নির্বাচন কমিশন তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নেয়নি। উপরন্তু তিনি প্রতিদিন অসংখ্য কর্মীসভা ও সংবর্ধনার নামে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়া অব্যাহত রেখেছেন। গতকাল শনিবারও তিনি বিভিন্ন এলাকায় ভোট চান নৌকার জন্য। খোদ এলাকায় অবস্থান করায় মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারাও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন। ভোটের দিনও তিনি এলাকায় অবস্থান করবেন, এমন খবরে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী ও সাধারণ ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকায় এমপির উপস্থিতি ও প্রভাবের কারণে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠান নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী ও সাধারণ ভোটাররা।

আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, ‘উপজেলার ৯৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে অন্তত ৫০টি কেন্দ্র বাছাই করে কিভাবে ভোট কারচুপি করা যায় সেজন্য নৌকার প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের পক্ষে দাগী ও সন্ত্রাসী শ্রেণির লোকদের ঠিক করা হয়েছে কেন্দ্রভিত্তিক। মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ হওয়া এসব কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারের সহায়তায় ভোটগ্রহণের আগের রাতে তারা এসব কেন্দ্র দখলে নিয়ে ব্যালটে সিল মেরে বাক্সভর্তি করবে।’

ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, প্রশাসনের কড়াকড়িতে যদি রাতের অপারেশন কোন কারণে ব্যর্থ হয় তাহলে বিকল্প পন্থা হিসেবে ভোটগ্রহণের সময় তিন পদের ব্যালটের মধ্যে শুধুমাত্র দুই ভাইস চেয়ারম্যান পদের ব্যালট ভোটারদের হাতে দেওয়া হবে। চেয়ারম্যান পদের ব্যালট যাতে ভোটারদের হাতে না যায় সেজন্য চুড়ান্ত পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এমনকি চেয়ারম্যান পদের হুবহু বিকল্প ব্যালট ছাপিয়ে বাক্সে ঢুকিয়ে দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে নৌকার প্রার্থীর। আবার গ্রামে গ্রামে গিয়ে সাধারণ ভোটারদেরও কেন্দ্রে না আসতে দলীয় নেতাকর্মীর মাধ্যমে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। এই অবস্থায় চকরিয়ায় সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।’

এক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাঈদী হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, ‘প্রশাসন বা প্রিসাইডিং অফিসারের সহায়তায় যদি এখানে কেউ ভোট কারচুপির চেষ্টা করে তাহলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটবে। একের পর এক লাশ পড়বে। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে এর দায় সংশ্লিষ্টদের বহন করতে হবে।’

আওয়ামীলীগ প্রার্থী গিয়াসের প্রধান প্রতিদ্বন্ধী সাঈদী বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। সেখানে আমি স্পষ্ট বলেছি, এমপি মহোদয় এলাকায় অবস্থান করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করছেন। ভোটের দিনও যদি এমপি এলাকায় অবস্থান করেন তাহলে প্রশাসন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট উপহার দিতে পারবেন না। কিন্তু এর পরও এমপি মহোদয় তাঁর কাজ নির্বিঘেœ করে যাচ্ছেন। এতে ভোটের সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে না। তাই আমি এবং সাধারণ ভোটারদের আশা, সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের চাওয়া অনুযায়ী এমপি মহোদয় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠান উপহার দিতে প্রশাসনকে সহায়তা করবেন।’

চেয়ারম্যান পদে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী জহিরুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় এমপি যেভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মাঠে-ঘাটে চষে বেড়িয়েছেন, এতে নির্বাচনের সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে না ভোটের দিন। এতে আমরাও আতঙ্কে রয়েছি।’

জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. বশির আহমদ বলেন, ‘এবারের নির্বাচন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, গ্রহণযোগ্য করতে যা যা করার দরকার তার সবপ্রস্তুতিই চুড়ান্ত করা হয়েছে। নির্বাচনে ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের কোন অনিয়ম সহ্য করা হবে না। এর পরও কোন কেন্দ্রে কেউ প্রভাব বিস্তার বা অন্য কোন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে ওই কেন্দ্রে নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া হবে। তাই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে সবার উচিত নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে সহায়তা করা।’

এ ব্যাপারে চকরিয়া-পেকুয়া (কক্সবাজার-১) আসনের এমপি জাফর আলম বলেন, ‘প্রশাসনের মতো আমিও চাই একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠান হউক এখানে। আর যেসব প্রার্থী আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন, তার কোন সত্যতা নেই।’