সংবাদদাতা:
কক্সবাজার শহরের ফদনার ডেইল থেকে বার্মিজ ষ্টিকার লাগানো চার বস্তা ভেজাল আচারসহ কারখানার মালিক করিমকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় ভেজাল আচার বহনকারী একটি অবৈধ টমটম জব্দ করা হয়।

১৬ মার্চ রাত ৮টার দিকে শহরের হোটেল মোটেল জোন এলাকায় ভেজাল আচার নেওয়ার পথে সমিতিপাড়া বাজার থেকে উক্ত আচার গুলো জব্দ করা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। আটক করিম ভেজাল আচার ব্যবসার পাশাপাশি ইয়াবা ব্যবসাও করে আসছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তারা বলছেন, করিমের নেতৃত্বে রয়েছে একটি শক্তিশালী অপরাধী চক্র। যে চক্র তার বিশাল ভেজাল আচার ভান্ডার ও ইয়াবা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। আটক করিম বান্দারবান সদরের ৯নং ওয়ার্ডস্থ বালো পাড়া এলাকার মৃত আব্দু রশিদের পুত্র। সে দীর্ঘদিন পর্যন্ত শহরের সমিতিপাড়াস্থ ফদনার ডেইল একায় বসবাস করে ভেজাল আচার তৈরি ও বিক্রি করে আসছিল।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, পর্যটন শহর কক্সবাজারে পর্যটকের আগমনকে পুঁজি করে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী শহর ও শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তুলেছে ভেজাল আচার তৈরির কারখানা। প্রশাসনের অভিযানের পরেও অক্ষত এসব আচার কারখানায় আবাধে তৈরী হচ্ছে ভেজাল আচার। এসব কারখানায় খাওয়ার অযোগ্য পচা বরই (কুল), মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কেমিক্যাল, গুড়, চিনি, রংসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর উপকরণ দিয়ে আচার তৈরি করা হয়ে থাকে। তাও তৈরি করা হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। সম্পূর্ণ অবৈধ কারখানাগুলোতে তৈরি ভেজাল আচার প্যাকেটজাত করা হয় মিয়ানমার ভাষায় ছাপানো নকল প্যাকেটে। পুলিশ সহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের মাসোহারা দিয়েই বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে ভেজাল কারখানায় তৈরী আচার ব্যবসা এমনটি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ খন্দকার ফরিদ উদ্দিন জানান, পর্যটক আগমনকে টার্গেট করে কক্সবাজার শহরে একটি চক্র ভেজাল কারখানায় আচার তৈরি করে তা বাজারজাত করে আসছে। অস্বাস্থ্যকর ভেজাল আচার তৈরি ও সাপ্লায়ের খবর পেয়ে সমিতিপাড়া বাজার এলাকা থেকে ভেজাল আচারসহ মালিক কিরমকে আটক করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এসব ভেজাল আচারের প্যাকেটে লাগানো হয় উৎপাদনের মেয়াদ সংবলিত ভুঁয়া টিকিটও। এ ছাড়া লাগানো হয় মিয়ানমারের নকল লেবেল। সব প্রক্রিয়া শেষ করেই প্রতিদিন শহরের দুই ডজনের অধিক অবৈধ আচার তৈরির কারখানা থেকে বাজারজাত করা হচ্ছে লাখ লাখ প্যাকেট ভেজাল আচার।

কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এস.আই.এম আকতার কামাল আজাদ জানান, কক্সবাজারে তৈরি এসব মিয়ানমারের আচার কিনে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন পর্যটকরা। এসব ভেজাল আচার খেয়ে অনেকের ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে অহরহ। পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে বৈধ পথে সরকারি রাজস্ব দিয়ে মিয়ানমারের যেসব আচার দেশে আসছে, সেই বৈধ ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়ে যাচ্ছে ভেজাল আচারের কারণে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, পর্যটন শহর হিসেবে কক্সবাজারে হাজার হাজার পর্যটক বেড়াতে আসেন। আর পর্যটকরা কক্সবাজার এলেই মিয়ানমারের আচার ও এখানকার উৎপাদিত শুঁটকি কিনে নিয়ে যান। এ সুযোগকে কাজে লগিয়ে আসছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভেজাল আচার তৈরি করে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ সোলতান আহম্মদ সিরাজী জানান, বিভিন্ন কেমিক্যাল ও রং দিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি এসব আচার খাওয়ার পর তাৎক্ষণিক ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের রোগ হতে পারে। এ ছাড়া ধীরে ধীরে ক্যান্সারের মতো রোগও মানবদেহে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে রয়েছে বলে জানান তিনি।