তারেকুর রহমান:
দীর্ঘ দেড় বছর ধরে কক্সবাজারের টেকনাফের শামলাপুরের একমাত্র খেলার মাঠ এনজিওদের দখলে। রোহিঙ্গাদের ত্রাণকাজের জন্য পুরো মাঠ জুড়ে এসব এনজিও প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করায় ক্রীড়া বিনোদন থেকে বঞ্চিত রয়েছে এখানকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও ক্রীড়ামোদীরা।
২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতার ঘটনার পর বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গারা অবস্থান নিয়েছে উখিয়া ও টেকনাফের ৩২টি আশ্রয় শিবিরে। এমনই একটি আশ্রয় শিবির রয়েছে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর গ্রামে। ওই গ্রামের একমাত্র খেলার মাঠজুড়ে রয়েছে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিতরণকাজে নিয়োজিত বিভিন্ন এনজিওর অফিস ও ত্রাণকেন্দ্রসহ স্থাপনা। বিশেষ করে ‘আইওএম’ ও ‘ব্র্যাক’সহ কয়েকটি এনজিওর স্থাপনার কারণে এখন পুরো মাঠে দেড় বছর ধরে খেলাধুলা বন্ধ।
স্থানীয়রা জানান, টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর গ্রামের এই খেলার মাঠটি রোহিঙ্গাদের ত্রাণ কাজের জন্য দখলে রয়েছে। শুধুমাত্র ওই এলাকার তিন হাজার রোহিঙ্গাদের জন্য ৫০ হাজার মানুষ ক্রীড়া বিনোদন থেকে বঞ্চিত। অথচ এই স্বল্প সংখ্যক রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিতরণের জন্য পশ্চিম পাশে মেরিনড্রাইভ সংলগ্ন খালি জায়গা ছাড়াও আশেপাশে অনেক জায়গা রয়েছে। কর্তৃপক্ষ চাইলে সেখানে এসব এনজিওদের ত্রাণকেন্দ্রগুলো সরিয়ে নেওয়া কোন বিষয় নয়।
শুধু টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা নয়, রয়েছে পার্শ্ববর্তী উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের বাসিন্দাও। এই দুই ইউনিয়নসহ প্রায় ৫০ হাজার মানুষের একমাত্র খেলাধুলার মাঠটি দখলে রয়েছে রোহিঙ্গা আসার পর থেকে।
টেকনাফ শামলাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এম এ মঞ্জুর বলেন, ‘মানবিকতা চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। উখিয়া ও টেকনাফের পাশাপাশি শামলাপুরের অল্প সংখ্যক রোহিঙ্গা রয়েছে। বিশেষ করে শামলাপুর খেলার মাঠের আশপাশের এলাকায় থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য পুরো মাঠটি দখল করে রয়েছে কিছু এনজিও। এসব এনজিওদের ত্রাণকেন্দ্র স্থাপনার কারণে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত রয়েছে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমনিতে ইয়াবাসহ মাদকের জন্য টেকনাফের দুর্নাম রয়েছে। এর ওপর রোহিঙ্গাদের বিস্তর প্রভাব পড়েছে এই ছোট্ট গ্রামটিতে। খেলাধুলা না থাকায় এলাকা উঠতি যুবক ও শিক্ষার্থীরা মাদকতাসক্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই, মাঠ দখল করা এসব এনজিওদের অন্য কোথাও সরিয়ে দিয়ে এই এলাকার একমাত্র মাঠটি দখলমুক্তর দাবি জানাচ্ছি।
শামলাপুর এলাকার সাবেক ফুটবলার শাহ আলম জানান, গত দেড় বছর ধরে কোনও ধরনের খেলা হচ্ছে না এই মাঠে। এনজিওরা যত্রতত্র স্থাপনা তৈরির কারণে পুরো মাঠ এখন তাদের দখলে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী প্রজন্ম খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে মাদকের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়বে। এছাড়া এই খেলার মাঠে কোনও সভা-সমাবেশ থেকে শুরু করে বড় ধরনের অনুষ্ঠানও হচ্ছে না। টেকনাফ বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাওলানা আজিজ উদ্দিন বলেন, ‘আমরাও ছোটবেলা থেকে এ মাঠে খেলাধুলা করে বড় হয়েছি। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের এই মাঠটি ছাড়া দ্বিতীয় আর কোনও মাঠ নেই। রোহিঙ্গাদের ত্রাণ কেন্দ্রের নামে আইওএম, ব্র্যাকসহ বিভিন্ন এনজিও সংস্থা মাঠের মধ্যে স্থাপনা করছে এটা একটি জাতির জন্য দুঃখ ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা এলাকাবাসীদের নিয়ে মাঠটি পুনরায় ফিরে পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও জেলা প্রশাসকের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করে রোহিঙ্গা ত্রাণকেন্দ্র থেকে মাঠটি অবমুক্ত করতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের গণস্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি দিয়েছি। আশা করি মাঠটি দখলমুক্ত করে খেলাধুলার সুযোগ করে দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসান বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটের প্রথম থেকে জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন ত্রাণ সহায়তাকারী সংস্থা খেলার মাঠে ত্রাণকেন্দ্র গড়ে তুলেছেন। এটি স্থায়ী নয়, অস্থায়ী। বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রাণালয়সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে।