এস.এম রুবেল

ছেলেটি হঠাৎ অসূস্থ হয়ে পড়ায় শফিক সাহেব মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলেন। তখন ঘটির কাটায় রাত ১১টা। দায়িত্বরত ডাক্তার আবিদকে দেখে বললেন,
– রোগীর শারীরিক অবস্থা খুবই নাজুক। যে কোন মূহুর্তে খারাপ কিছু হতে পারে।
কান্নাজড়িত কন্ঠে শফিক সাহেব বললেন,
– আমরা এখন কি করতে পারি?
– যতদ্রুত সম্ভব আপনারা রোগীকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যান।
– স্যার এত রাতে কিভাবে নিয়ে যাব? নদী পার হয়ে যেতে হবে, তাছাড়া বোট পাওয়া যায় কিনা তাও জানিনা।
হঠাৎ পাশের একজন বলে উঠলেন,
– বোট পাবেন। রোগীদের জন্য আলাদা বোটের ব্যবস্থা থাকে।
এবার শফিক সাহেব নিরুপায় হয়ে ছেলেকে নিয়ে মহেশখালী ঘাটে গেলেন। ঘাটের একপাশে ৩/৪ জন লোক বসে গল্প করছিল তখন। একজন জিজ্ঞেস করলেন,
– আপনাদের রোগী আছে? ড্রাইভার ডাকতে হবে?
– জ্বি আছে। আমার ছেলে খুব অসূস্থ একটু তাড়াতাড়ি ডাকেন।
ড্রাইভার আসার পর শফিক সাহেব ছেলেকে নিয়ে শত আতংকের মাঝে গভীর রাতে নদী পার হলেন। শফিক সাহেব ড্রাইভারকে উদ্দেশ্যে করে বললেন,
– ভাই ভাড়া কত টাকা?
– ভাড়া ৮২৫ টাকা। এর বাইরে আমাকে যা দেন আরকি!
শফিক সাহেব চিন্তায় পড়ে গেলেন। কারণ ওনার পকেটে তখন ১২’শ টাকার মত আছে। ছেলে আবিদ হঠাৎ অসূস্থ হয়ে পড়ায় পকেটে যা আছে তা নিয়ে চলে আসলেন। এখন বোটে অত টাকা দিয়ে দিলে তিনি কিভাবে চিকিৎসা চালাবেন তা ভাবছেন। একদিকে ছেলের অসূস্থতার যন্ত্রনা আর অন্যদিকে আর্থিক সমস্যা। নিরুপায় হয়ে ড্রাইভারকে বললেন,
– ভাই এটাতো ১১ জন যাত্রীর রিজার্ভ ভাড়া। আমরা অসহায় রোগী মানুষ কিছু কম নেওয়া যায়না।
– এক পয়সাও কম নেয়ার সুযোগ নেই। কারণ মালিক ও কর্তৃপক্ষকে রিজার্ভ ভাড়া বুঝিয়ে দিতে হয়।
কোন উপায়ন্ত না দেখে শফিক সাহেব ড্রাইভারকে ৮২৫ টাকা দিয়ে চলে গেলেন।

#গল্পটির চরিত্র কাল্পনিক হলেও সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা অবলম্বনে লিখা। প্রতিদিন রাতে এরূপ ঘটনার সম্মুখিন হচ্ছে মহেশখালীর সাধারণ জনগণ। বিশেষ করে দরিদ্র শ্রেণীর জনসাধারণের কাছে এত মোটা অংকের বোট ভাড়া পরিশোধ অসাধ্য হয়ে যায়। তারপরেও নিরুপায় হয়ে দীর্ঘদিন ধরে এরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে আসছে। সন্ধ্যার পর বোট চলাচল বন্ধ থাকে। ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় বসবাসরত জনসাধারণের চিকিৎসা চাহিদা পূরণে রয়েছে একটি মাত্র সরকারী হাসপাতাল। জনবল ও যন্ত্রপাতির অভাবে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার মাঝে চিকিৎসা প্রদান করছে কর্তৃপক্ষ। বিকল্প হিসেবে অত্র উপজেলায় কোন বেসরকারী হাসপাতাল কিংবা চিকিৎসা সুবিধে নেই। তাই বেশির ভাগ রোগী উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার প্রেরণ করতে হয়। কিন্তু সন্ধ্যার পরে রোগী পরিবহনে ঝুঁকি ও উল্লেখযোগ্য হারে ভাড়া প্রদান করতে হয়। সেক্ষেত্রে অসহায় রোগী হিসেবে এখানকার জনগণ কি সুবিধা পেতে পারেন…।
(ক) রোগীদের নিরাপত্তার স্বার্থে একটি ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স এর ব্যবস্থা করা যায়না…?
(খ) রোগীদের ক্ষেত্রে যতদিন অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা হয়নি ততদিন স্পীড বোটের রিজার্ভ ভাড়া ৮২৫ টাকা না নিয়ে নির্দিষ্ট একটি ভাড়া (শুধুমাত্র তেলের টাকা) নির্ধারণ করা যায়না…?

#যদি উপকূলের অসহায় রোগীদের কথা বিবেচনা করে এরূপ ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তবে আমরা বড্ড উপকৃত হবো। তাই আমাদের প্রাণের দাবী,
***মহেশখালী-কক্সবাজার নদী পথে একটি ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হোক।
***রোগী পরিবহনে স্পীড বোট ভাড়া কমিয়ে শুধুমাত্র তেল খরচের টাকা রাখা হোক।

#সমস্যা আমাদের। সমাধানের পথও খোঁজতে হবে আমাদের, আপনাদের, সকলের। আসুন আমরা একত্রিত হয়ে উল্লেখিত দাবী আদায় করি। দাবী আদায় না হওয়া পর্যাপ্ত আমরা মানববন্ধন করতে পারি।

#এস এম রুবেল, তরুণ লেখক। মহেশখালী, কক্সবাজার।