বলরাম দাশ অনুপম :

পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজার জেলায়ও বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে বিপাকে পড়েছে আওয়ামী লীগ। জেলার ৮ উপজেলার মধ্যে ৬ উপজেলায় আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীদের বিজয়ের পথে কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্রোহীরা। চেয়ারম্যান পদে নৌকার নিশ্চিত বিজয় ঠেকাতে ভোটের মাঠে সক্রিয় রয়েছে আওয়ামী লীগের ১৩ বিদ্রোহী প্রার্থী। জেলার কুতুবদিয়া ও উখিয়া উপজেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নির্বাচিত হলেও অন্য ৬ উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন নৌকার মাঝিরা। জানা যায়-আগামী ১৮ মার্চ চকরিয়া, ২৪ মার্চ পেকুয়া, মহেশখালী, টেকনাফ, রামু এবং ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক কায়সারুল হক জুয়েলকে মনোনয়ন দিলেও বর্তমানে মাঠে রয়েছে আরো ৪ বিদ্রোহী প্রার্থী। এরা হলেন-জেলা আওয়াম ীলীগ নেতা সাবেক পৌর চেয়ারম্যান নুরুল আবছার, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেব, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমদ জয় ও আওয়ামীলীগ নেতা জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সোহেল জাহান চৌধুরী। এছাড়া রামু উপজেলায় নৌকার মাঝি হয়েছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রিয়াজ উল আলম। কিন্তু তার বিদ্রোহী হয়ে ভোটের মাঠে আনারস প্রতীক নিয়ে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল। চকরিয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর জয়ের পথে শক্ত প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ক্রীড়া সংগঠক ফজলুল করিম সাঈদী। এছাড়াও এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোক্তার আহমদ চৌধুরী। পেকুয়ায় জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য এসএম গিয়াস উদ্দিন আনারস ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে নৌকার প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেমের বিদ্রোহী হিসেবে ভোট করে যাচ্ছেন। সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে নৌকার প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে রয়েছেন আনারস প্রতীক আওয়ামীলীগ নেতা ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ এবং মটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নুরুল আলম। বিদ্রোহীদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীও। এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান হোসাইন ইব্রাহিমের প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে ভোটের মাঠে প্রত্যন্ত অঞ্চল চষে বেড়াচ্ছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আনারস প্রতীকের শরীফ বাদশা ও দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক সাজেদুল করিম। নৌকার প্রার্থী এবং আওয়ামীলীগের নেতারা যেসব উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে তাদের ভোটের মাঠ থেকে সরিয়ে নিতে নানা ভাবে চেষ্টা চালিয়ে গেলেও বিদ্রোহী প্রার্থীরা রয়েছেন অনড়। অনেকে আবার শেষ পর্যন্ত ভোটের লড়াইয়ে থাকার ঘোষণা দিয়ে তারা জোরে শোরে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। দল থেকে শাস্তি দেওয়ার যে হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে, তাতে তারা পাত্তা দিচ্ছেন না। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বলেন, এখনও বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে করণীয় নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনও দিক-নির্দেশনা আসেনি। তবে কোনও আওয়ামী লীগের কারও নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে যাওয়ার সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন, তিনিই আওয়ামী লীগ প্রার্থী। এদিকে জেলার সকল উপজেলা পরিষদের নির্বাচন সুষ্ঠ, সুন্দর ও নিরপেক্ষ ভাবে সম্পন্ন করার লক্ষে প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মোল্লা।