মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

রোববার, ১০ মার্চ। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরে অবস্থানরত বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদের চতূর্থ গুমদিবস। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের রাজনীতির উত্তাল সময়ে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র মুখপাত্র হিসাবে সফলভাবে দায়িত্বপালনকালে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ ঢাকাস্থ উত্তরার একটি বাড়ী থেকে আইনশৃংখলা বাহিনীর পরিচয়ে অচেনা মুখোশধারী সাদা পোশাকের অপহরনকারীরা সালাহউদ্দিন আহমেদ’কে চোখ বেঁধে গুপ্তস্থানে তুলে নিয়ে যায়। তখন থেকে দীর্ঘ ৬২ দিন নিখোঁজ থাকার পর একই বছরের ১১ মে সালাহউদ্দিন আহমেদকে মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরে গলফ লিংক মাঠে পাওয়া যায়। সেখান থেকে তাঁকে প্রথমে শিলং মানসিক হাসপাতালে, পরে শিলং সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মেঘালয় পুলিশ ভারতে অবৈধ প্রবেশের অভিযোগে অনুপ্রবেশ আইনের ১৪ ধারায় সালাহউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে এবং তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে প্রথমে হাসপাতালে চিকিৎসা ও পরে শিলং জেলে পাঠানো হয়। পরে শিলং আদালত থেকে শিলং শহর ছেড়ে না যাওয়ার শর্তে বিজ্ঞ আদালত সালাহউদ্দিন আহমদকে জামিন প্রদান করেন। তখন থেকে নির্বাসিত অবস্থায় খাসিয়া খ্রীষ্টান অধ্যূষিত এলাকা শিলং শহরে সানরাইজ গেষ্ট হাউজ নামক একটি দোতলা সুসজ্জিত ভাড়া বাড়ীতে তিনি বসবাস করে দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর মামলা পরিচালনা করেছেন। মামলা দায়েরের পর মেঘালয়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে সালাহউদ্দিন আহমদকে প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত করে মামলার চার্জশীট দেয়া হয়। সালাহউদ্দিন আহামদের কৌশুলী ভারতের বিখ্যাত আইনজীবী এস পি মোহন্ত এ মামলাটি পরিচালনা করেন। সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদের এই মামলাটি রায় ঘোষনার জন্য ৭ম বারের মতো অপেক্ষমান থাকাবস্থায় মামলাটি বিগত সালের ২৬ অক্টোবর শুক্রবার বিকেল পৌনে ৩টায় শিলং নর্থইষ্ট খাসিয়া হিল আদালতের প্রথম শ্রেণীর হাকিম মিঃ ডিজি খার সিং সালাহউদ্দিন আহমদকে এই মামলা থেকে বেকসুর খালাস দিয়ে ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেন। মামলার সংক্ষিপ্ত রায়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সকল আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এর মাধ্যমে সালাহউদ্দিন আহামেদকে স্বদেশে পাঠানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদশ (বিজিবি)’র নিকট হস্তান্তরের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।
রায়ের পর শিলং আদালত সালাহউদ্দিন আহমেদকে মামলার দায় থেকে বেকসুর খালাস দিয়ে তাঁকে দ্রুত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর নিকট হস্তান্তরের আদেশ দিয়ে পত্র দিলেও ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সালাহ উদ্দিন আহমেদকে কেন এপর্যন্ত স্বদেশে পাঠাচ্ছননা তা জানা যায়নি। তবে সালাহ উদ্দিন আহামেদ ভারতে এখন মুক্ত জীবন যাপন করতে পারছেন।
কক্সবাজারের ‘উন্নয়নের ফেরিওয়ালা’ নামে পরিচিত সালাহ উল্লাহ আহমেদ মুঠোফোনে সিবিএন-কে জানান, মামলাটি নিষ্পত্তি হওয়ার পর প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরতে মনকে আর মানাতে পারছিনা। দ্রুত বাংলাদেশে এসে মাটি ও মানুষের সাথে মেশার জন্য মনটা একেবারে ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। তারপরও রাজনীতির এই বরপুত্র শিলং থেকে শীঘ্রই দেশে ফিরতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। কক্সবাজারের গণমানুষের ভালবাসার মানষপুত্র সালাহউদ্দিন আহামেদ স্বদেশে ফিরতে আল্লাহ’র অসীম রহমত কামনা ও দেশবাসীর কাছে আন্তরিকভাবে দোয়া ছেয়েছেন।