সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:

কোনো কোনো ব্যক্তি তাঁর কীর্তি, মহিমা, জ্ঞান, প্রজ্ঞা আর মনণ দিয়ে সমাজ ও সভ্যতাকে আলোকিত করে। তাঁরা তখন আর ব্যক্তি থাকেন না। তারা হয়ে ওঠেন মনীষী। ওই সব মনীষীরা প্রকৃতির নিয়মে এক সময় এই জগত-সংসার ছেড়ে চলে গেলেও তাঁদের মহিমা ও দীপ্তি আলো ছড়ায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে, কাল থেকে কালে। সেই জাতেরই একজন অনন্য সাধারণ মনীষী ছিলেন মাষ্টার মোহাম্মদ আবদুস শুকুর।

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভাষা সংগ্রামী, বিরল অনুপম চরিত্রের অধিকারী, সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষাবিদ মোহাম্মদ আবদুস শুকুর স্মরণানুষ্ঠানে আলোচকবৃন্দ উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।

টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের উদ্যোগে গতকাল শনিবার সকাল ১১টায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে উক্ত স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

স্মরণ অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, প্রখর পান্ডত্য ও মেধার অধিকারী আবদুস শুকুর ইচ্ছে করলেই ৬০ দশকে সরকারি চাকুরী নিয়ে বড় আমলা হতে পারতেন। কিন্তু তা না হয়ে তিনি বেছে নিয়েছিলেন কক্সবাজার জেলার অনগ্রসর এলাকায় শিক্ষার আলো জ¦ালানোর। তিনি ব্রতি হয়ে ছিলেন শিক্ষকতা পেশায়। মহান এই পেশাতেও তিনি সর্বোচ্চ সাফল্য দেখিয়েছিলেন। তাঁর অসংখ্য শিক্ষার্থী আজ দেশ পরিচালনার বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে সুনামের দায়িত্ব পালন করেছেন।

স্মরণানুষ্ঠানে আমাদের কালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই সন্তানের স্মৃতি আগামী প্রজন্মের কাছে চিরভাস্বর করে রাখার জন্য সীমান্ত শহর টেকনাফের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়য়ে একটি স্থাপনার নামকরণ মাষ্টার এম,এ,শুকুর এর নামে করার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ, বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানানো হয়।

টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি, রাজনীতিক নুরুল বশর এর সভাপতিত্বে ও টেকনাফ সরকারি কলেজের শিক্ষক কবি সিরাজুল হক সিরাজের সঞ্চালনায় স্মরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রয়াত শিক্ষকের সরাসরি ছাত্র, সরকারের যুগ্ম সচিব নজির আহমদ। সম্মানিত অতিথি ছিলেন যথাক্রমে মাষ্টার আবদুস শুকুরের জ্যেষ্ঠ সন্তান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের অধ্যাপক একেএম রেজাউল করিম, টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল হাসান, বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর পিতা, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি, দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার সাংবাদিক মুহাম্মদ আলী জিন্নাত, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক এস,এম, ইউনুস বাঙালী, টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নাজমুল হক ও প্রয়াত শিক্ষকের পুত্রবধু, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রভাষক রেহনুমা উর্মী। আলোচনায় অংশ নেন জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম, টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নুরুল আলম, সাধারণ সম্পাদক মো: নুর হোসেন, কৃষকলীগ নেতা আবুল হোসেন রাজু। পবিত্র কোরান তেলোয়াত করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জয়নাল আবেদীন।

স্মরণানুষ্ঠানে প্রয়াত শিক্ষাগুরু আবদুস শুকুরের নানা কীর্তি, বর্ণাঢ্য ও সফল জীবনের নানা দিক নিয়ে স্মৃতিচারণ করে আলোচকবৃন্দ বলেন, এই শিক্ষক সতৌকার অর্থে ছিলেন একজন ‘আলোর ফেরিওয়ালা’।

বরণ্যে শিক্ষাবীদ আবদুস শুকুরের জন্ম ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ৯ জানুয়ারি। তিনি অর্ধশতাব্দীকাল ব্যাপী শিক্ষকতা জীবনে টেকনাফ জুনিয়র, হাইস্কুল, টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম এসইএস হাইস্কুল, উখিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, সাবরাং নয়াপাড়া নবী হোসাইন উচ্চ বিদ্যালয়, কক্সবাজার এয়ারপোর্ট পাবলিক হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে টেকনাফ থানা সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালে টেকনাফে ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন। তার ৫ কন্যা ও ৩ পুত্র সবাই উচ্চশিক্ষিত এবং সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত।