সিবিএন ডেস্ক:

পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই অভিযোগ আসতে শুরু করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূল পর্যায় থেকে আসা এসব অভিযোগ পাহাড়সম প্রায়।

অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চার ধাপের দলীয় প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রক্রিয়ার শুরুতে দলের তৃণমূল থেকে চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস-চেয়ারম্যান তিনটি পদেই নাম চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছিল কেন্দ্র থেকে। এরপর থেকে দলের কেন্দ্রে আসতে শুরু করে অভিযোগ। একে একে তৃণমূল থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে কেন্দ্রে ৭০০ অভিযোগ এসেছে বলে দলীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।

কেন্দ্রে তৃণমূলের অনিয়ম-অভিযোগের কারণেই দলের মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা হয়। ফলে নতুন মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় যে কেউ মনোনয়ন কিনতে পারেন। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর বেশকিছু উপজেলায় আওয়ামী লীগমনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ এসেছে। ওই সব উপজেলায় দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়।

দলটির তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতি উপজেলা হতে এক থেকে তিনজন প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রে চিঠি পাঠাতে বলা হয়েছিল। বেশ কয়েকটি উপজেলায় বর্ধিত সভার পাশাপাশি ভোটে একক প্রার্থী নির্ধারণ করা হলেও কেন্দ্রে এসেছে অন্য প্রার্থীদের নাম। বর্ধিত সভায় ও ভোটে জয়ীদের নাম আসেনি সেই তালিকায়।

এমন ঘটনা পাওয়া যায় মুন্সিগঞ্জ জেলার টংগীবাড়ি উপজেলায়। টংগীবাড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের প্যাডে তিন প্রার্থীর নাম দিয়ে কেন্দ্রে চিঠি পাঠানো হয়।

ওই চিঠি সম্পর্কে টংগীবাড়ি উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার কাজী ওয়াহিদ জাগো নিউজকে জানান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক; উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং সব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক নিয়ে সভা করা হয়েছিল। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকদের ভোট হবে।

তিনি বলেন, ‘সেখানে আমি ১৭২ ভোট পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করি। ভোটের ফলাফল দেখে জেলা আওয়ামী লীগ আমার নাম একক প্রার্থী হিসেবে পাঠায়। পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা বিকৃত মানসিকতার পরিচয় দেন। একজন নেতা তার রুমে বসে ওই চিঠি তৈরি করেন।’

শেষ পর্যন্ত এবারও চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের এ নেতা চূড়ান্ত মনোনয়ন পান।

এদিকে প্রথম ধাপে ঘোষিত আওয়ামী লীগের তালিকায় সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপ্রাপ্ত খলিলুর রহমান সিরাজীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। গত ২৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে দেয়া অভিযোগে বলা হয়, খলিলুর রহমান সিরাজী সরকারি চাকরিতে থেকেও বিধিভঙ্গ করে দলীয় পদে ছিলেন। সরকারি কর্মচারী হিসেবে গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে পোলিং অফিসারের দায়িত্বও পালন করেন। নদী ভাঙ্গনকবলিত এলাকার সন্তান খলিলুর রহমান উত্তরাধিকার সূত্রে তেমন কোনো সম্পদ পাননি। তার ভাইদের মধ্যে একজন চায়ের দোকানি, একজন কৃষিকাজ করেন, আরেকজন গার্মেন্টসে চাকরি করেন। খলিলুর রহমান গত ডিসেম্বর পর্যন্ত উপজেলার চর আদিত্যপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তার স্ত্রীও স্কুলশিক্ষক।

অভিযোগে বলা হয়, স্কুলশিক্ষক হয়েও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে গত ১০ বছরে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ বানিয়েছেন খলিলুর। সিরাজগঞ্জ শহরের দত্তবাড়ী এলাকায় নিজের ও স্ত্রীর নামে প্রায় সাড়ে পাঁচ শতক জমিতে পাঁচতলা ভবন গড়েছেন।

অভিযোগ সম্পর্কে খলিলুর রহমান সিরাজী বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ শহরে বাড়ি ও বগুড়ার শাহজাহানপুরের ১৯ শতক জমির বাইরে উল্লেখিত কোনো সম্পত্তি আমার নেই। আমাকে হেয় করার জন্যই প্রতিপক্ষ এগুলো করছে।’

ইতোমধ্যে খলিলুর রহমান সিরাজী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

দ্বিতীয় ধাপে মনোনয়ন পাওয়া গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মো. আব্দুল লতিফ প্রধানের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধী মোফাজ্জল হক প্রধান (মোফা) রাজাকারকে বাঁচাতে তদন্তকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী, সাক্ষীদের হুমকিদাতা ও তথ্য-উপাত্ত বিনষ্টের অপচেষ্টাকারী আব্দুল লতিফ প্রধানকে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে দলীয় প্রতীক নৌকা বরাদ্দ প্রত্যাহারের যেন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক নেতা বলেন, ‘গাইবান্ধায় যাকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তিনি যুদ্ধাপরাধী বলে যে অভিযোগ উঠেছে তা আমরা তদন্ত করে দেখব। অভিযোগ সত্য হলে তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা হবে।’

আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য ও দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, পঞ্চম উপজেলা নির্বাচন পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ হবে ১০ মার্চ। দ্বিতীয় ধাপ হবে ১৮ মার্চ, তৃতীয় ধাপের ভোট ২৪ মার্চ, চতুর্থ ধাপে ৩১ মার্চ এবং পঞ্চম ধাপে ভোট হবে ১৮ জুন।

-জাগো নিউজ