সিবিএন ডেস্ক :

কক্সবাজার জেলা সদরে প্রতিবছর এইচএসসি পরীক্ষার্থী বাড়লেও শহরের দু’টি পরীক্ষা কেন্দ্রে স্থান সংকুলান হচ্ছে না।

বর্তমানে যে দুটি কেন্দ্র আছে, সেগুলোতে আসন সংকুলান না হওয়ায় গাদাগাদি করে বসে পরীক্ষা দিতে গিয়ে পরীক্ষার্থীদের নানা দুর্ভোগ ও হয়রানিতে পড়তে হয়। এছাড়া বাড়তি আসন বসাতে পাশর্^বর্তী স্কুল বন্ধ রেখে এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে।

এদিকে আগামীতে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই শহর এলাকার মধ্যেই আরেকটি পরীক্ষাকেন্দ্র চালুর দাবী তুলছে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।

সূত্রমতে, আগামী ১ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় কক্সবাজার জেলা শহরে অবস্থিত পাঁচটি কলেজ থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এই বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থীর জন্য জেলা সদরে পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে মাত্র দুটি।

জানা গেছে, জেলা সদরে কক্সবাজার সরকারী কলেজ ও কক্সবাজার মহিলা কলেজে প্রতিবছর এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কক্সবাজার কলেজের পরীক্ষা কেন্দ্রে আসন সংখ্যা প্রায় দু’হাজার। আর কক্সবাজার সরকারী মহিলা কলেজ কেন্দ্রে আসন সংখ্যা প্রায় আট’শ। এবার এইচএসসি পরীক্ষায় জেলায় সর্বোচ্চ পরীক্ষার্থী কক্সবাজার সিটি কলেজের। সিটি কলেজের ১ হাজার ২২১ জন পরীক্ষার্থীসহ কক্সবাজার সরকারী কলেজের পরীক্ষাকেন্দ্রে মহিলা কলেজের ৯০৫ জন এবং হার্ভার্ড কলেজের ১৬০ জন মিলিয়ে মোট ২ হাজার ২৮৬জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে। অন্যদিকে কক্সবাজার সরকারী মহিলা কলেজ কেন্দ্রে কক্সবাজার কলেজের ১ হাজার ৬ জন ও কমার্স কলেজের ১৫১ জনসহ মোট ১১৫৭ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিবে। এই বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থীর জন্য আসন ব্যবস্থা করতে ইতিপূর্বে কক্সবাজার সরকারী কলেজ কেন্দ্রকে কাছের একটি স্কুলে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রেখে আসন ব্যবস্থা করতে হয়েছিল। বর্তমানে কলেজটিতে পর্যাপ্ত ভবন থাকায় এখন আর সেই সমস্যা নেই। কিন্তু মহিলা কলেজে পরীক্ষার্থীদের সংকুলান না হওয়ায় পাশর্^বর্তী সৈকত বালিকা উচ্চবিদ্যালয় বন্ধ রেখে সেখানে পরীক্ষা নিতে হয়।

সৈকত বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, এসএসসি পরীক্ষার জন্য এই স্কুলের ক্লাস এক মাস বন্ধ থাকে। এরপর আবার মহিলা কলেজ কেন্দ্রের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য আরো এক মাস সৈকত বালিকা উচ্চবিদ্যালয় বন্ধ রাখা হচ্ছে। এতে করে শিক্ষাদান কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রন্থ হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা।

এছাড়াও সরকার কোচিং সেন্টার ও শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনিও বন্ধ করে দিয়েছে। এভাবে মাসের পর মাস স্কুল বন্ধ থাকায় সৈকত বালিকার শিক্ষার্থীদের ফলাফলেও মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।

সৈকত বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের একজন অভিভাবক বলেন, এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের অজুহাতে স্কুল একমাস বন্ধ থাকে। আবার এইচএসসি পরীক্ষার মহিলা কলেজ কেন্দ্রে আসন সংকুলান না হওয়ার অজুহাতে আরও একমাস স্কুল বন্ধ রাখা হচ্ছে। এভাবে মাসের পর মাস স্কুল বন্ধ রেখে স্কুলের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটানোর কোন যৌক্তিকতা নেই। মহিলা কলেজে পর্যাপ্ত আসন না থাকলে শহরে আরও বেশি আসনের কলেজ আছে। সেখানে স্থায়ী পরীক্ষা কেন্দ্র চালু করে সমস্যার সমাধান করা দরকার।

সচেতন মহলের অভিমত, এই সমস্যা ও ভোগান্তি নিরসনে কক্সবাজার সিটি কলেজে এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করা দরকার। তারা বলেন, এতে করে পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতের সময় বেঁচে যাবে। আর অন্যকোনো স্কুলের ক্লাসও বন্ধ রাখতে হবে না।

কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্যথিং অং এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তাঁর কলেজের মোট আসন সংখ্যা দেড় হাজারেরও বেশী। এখানে বিগত এক দশক ধরে কারিগরী শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন এইচএসসি ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা শাখার পরীক্ষা, ডিগ্রী পাস কোর্সের পরীক্ষা, অনার্স পরীক্ষা, মাস্টার্স পরীক্ষাসহ বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্র আছে।

তিনি আরও জানান, ৯৬টি সিসিটিভি ক্যামেরা, সার্বক্ষণিক প্রহরা ও পুরো ক্যাম্পাস সুরক্ষিত থাকায় এ যাবত পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কোনো অনাকাংখিত বা অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেনি। তাই পরীক্ষাকেন্দ্র করার জন্য সিটি কলেজ উপযুক্ত।

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাছে যে তথ্য আছে সে অনুযায়ী নতুন কেন্দ্রের দরকার নেই। তাছাড়া নতুন একটি কেন্দ্র করতে গেলে লজিস্টিক, জনবলসহ নানা সাপোর্ট লাগে। তাই এই মুহুর্তে নতুন কোন কেন্দ্র করা উচিত হবে না।’

পাশর্^বর্তী বিদ্যালয়ে সাব-সেন্টার করে পরীক্ষার হল করায় সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যাঘাতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরীক্ষাতো সব সময় হয় না, মাঝেমধ্যে হয়। তাই আশাকরি তেমন কোন সমস্যা হবে না।’