শাহেদ মিজান, সিবিএন:
মহেশখালীর দ্বিতীয় ব্যস্ততম বাজার হোয়ানক টাইমবাজার। ঐতিহ্যবাহী এই বাজারটি দিয়ে শত বছরের বেশি সময় ধরে পুরো উপজেলার মানুষের নানা প্রয়োজন মিটিয়ে আসছে। বিশেষ করে পানবাজার নিয়ে বিশেষ গুরুত্বপর্ণ এই বাজারটি। উপজেলার একদম মধ্যপ্রান্তে হওয়ায় এই বাজারের গুরুত্ব কোনোভাবে কমেনি। এই বাজারটিকে উপজেলার মূল জংশনও বলা হয়। সবমিলে নানা কারণে এই বাজারটি আকর্ষণ সবার কাছেই।

তবে দুঃখের বিষয় অবকাঠামোগত জীর্ণতা এবং অপরিচ্ছন্নতায় সারা বছর ডুবে থাকে ঐতিহ্যবাহী এই টাইমাবাজার। বর্ষা বা শীত, বসন্ত বা গ্রীষ্ম; ১২ মাস এভাবে বেহাল দশায় পতিত থাকে এই বাজারটি। বছরের পর বছর এভাবে চলছে, কোনোভাবেই কোনোকালেই জীর্ণতা মুছে একটু মজবুত আর পরিচ্ছন্নতার নাগাল হয় না এই টাইমাবাজারে। অথচ এই বাজারটি ইজারা দিয়ে প্রতিবছর ২০ লাখ টাকার বেশি রাজস্ব আয় করা হয়। এমন জনগুরুত্বপূর্ণ বাজারটি জীর্ণ দশায় পতিত থাকায় বাজারের ব্যবসায়ী, ক্রেতা, শিক্ষার্থী, পথচারী, চালকসহ সব স্তরের মানুষ অতিশয় ভোগান্তি পুহিয়ে যাচ্ছেন দিনের পর দিন। পরিস্থিত বর্তমানে এমন দাঁড়িয়েছে, দুর্ভোগ আর ভোগান্তিই এখন যেন নিয়তি!

অভিযোগ রয়েছে, এই বাজারের রক্ষণাবেক্ষণের অধিকাংশ দায়িত্ব ইউনিয়ন পরিষদের। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের এই নিয়ে কোনো বালাই নেই! এই নিয়ে ভুক্তভোগীরা হোয়ানক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামালকে দায়ী করেছেন। কারণ তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তার চোখের সামনে এই সীমাহীন দুর্দশা থাকলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা এই পর্যন্ত নেননি। তিনি পরিষদ থেকে কিছু করেনি এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তদবির করেও কোনো কিছু করেনি।

টাইমবাজারের ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত জীর্ণ ও অপরিচ্ছন্নতায় ঢেকে আছে টাইমবাজার। বাজারের পুরো অংশ জুড়ে সড়ক অত্যন্ত ভঙ্গুর। স্থানে স্থানে রয়েছে গর্ত আর গর্ত। বাজারের দক্ষিণপাশে রয়েছে একটি পুকুর সমান গর্ত। এই গর্তটি ৩/৪ বছর আগে সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ইউনিয়ন পরিষদ বা অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। একটু বৃষ্টি হলেই গর্তটি পানিতে টইটম্বুর হয়ে যায়। বর্ষাকালেতো বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে যানচলাটল পুরোপুরি বন্ধ থাকে। বিঘœ হয় মানুষ চলাচলেও। এই গর্তের দু’পাশের দোকানগুলোতে ছিটকে পড়ে যান চলাচলের সৃষ্ট কাদা। একই ভাবে বাজারের দক্ষিণ থেকে উত্তর পাশের মৌলভী সুলতান মার্কেট পর্যন্ত রয়েছে অসংখ্য গর্ত। প্রধান সড়কটি নিচু হয়ে পড়ায় শুধু বৃষ্টি নয়, পান বাজার থেকে উচ্ছিষ্ট পানি জমেও সব সময় পানিতে সয়লাব থাকে। পানিতে পানবাজারের ঝোপসহ নানা ময়লা পড়ে সৃষ্টি হয় এক বিশ্রি কাদা। যা দিয়ে ছড়ায় মারাত্মক দুর্গন্ধ! বিগত এক বছর ধরে পরিস্থিতি আরো মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। কারণ পানবাজারের উপর বসানো ঝর্ণা টিউবওয়েল থেকে পানি ছড়িয়ে যায় সড়কে। এতে চৈত্র-বেশাখের খরায়ও থাকে পানি মিশ্রিত ময়লার বাহার!

আরো জানা গেছে, সব সময় ময়লা আর পানি জমে থাকায় কোনো সময়ই নানা প্রয়োজনে বাজারে লোকজনসহ কেউ বাজারের সড়ক দিয়ে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারছে না। সড়কের পাশ দিয়ে সংকুচিত হয়ে চলাফেরা করছে সবাই। তারপরও যেন রক্ষা নেই! কেননা সড়ক যানবাহনগুলো একটু দ্রুত গতিতে চললেই পথচারীদের শরীরের ছিটকে পড়ে দুর্গন্ধযুক্ত ময়লাকাদা। এতে মারাত্মক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদেরও। কারণ এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করছে হোয়ানক কলেজ, হোয়ানক বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়, হোয়ানক বালিকা বিদ্যালয়, হোয়ানক ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিন কাদা মেখে এভাবে দুর্ভোগ নিয়ে চলাফেরা করছে অন্তত দুই হাজার শিক্ষার্থী।

অন্যদিকে বাজারের এই মারাত্মক দশার কারণে ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা কঠিন দুর্ভোগে রয়েছেন। ঠিকভাবে চলাফেরা করতে না পারায় বাজারের ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব বিরাজ করছে। অন্যদিকে ক্রেতারা রয়েছে বিপাকে!

জানতে চাইলে টাইমবাজার বণিক সমিতির সভাপতি মকছুদ আহামদ বলেন, ‘এতবড় বাজারে কোনো ড্রেন নেই। নেই কোনো রক্ষণাবেক্ষণ। একটু বৃষ্টি হলেই পানিতে তলিয়ে পুরো বাজার। বৃষ্টি না থাকলেও জমে থাকা পানি আর কাদায় ডুবে থাকে পুরো বাজার। আমরা ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময় চাঁদা তুলে একটু মেরামত করলেও তা দু’য়েক দিনের মধ্যে তলিয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘বাজারটি প্রতিবছর ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকায় ইজারা হয়। কিন্তু বাজারের উন্নয়নে এক টাকাও ব্যয় করা হয় না। আমরা এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনেক বলেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।’

হোয়ানক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমি নিজের টাকা দিয়ে বাজারের বড় বড় গর্ত বেশ কয়েকবার মেরামত করেছি। কিন্তু তা একটা সময়ের পর আবার ভেস্তে যায়। বাজারটি মেরামত করতে বিভিন্ন সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরকেও বলেছি। কিন্তু কোনোভাবেই কাজ করা হচ্ছে না।’