ডেস্ক নিউজ:

শাহনুর রহমান সিক্ত নিজেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি নাকি ৩৬তম বিসিএস ক্যাডার। পড়াশোনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এসব পরিচয় দিয়ে ইতোমধ্যে ১২টি বিয়ে করেছেন তিনি

বিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। অথচ অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলে যাওয়া কথিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রীর পড়াশোনা মাত্র ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত।

নিজের নামের সঙ্গে শাহনুর আকতার নামে একজন বিসিএস ক্যাডারের নামের মিল থাকায় ওই পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছেন শাহনুর রহমান সিক্ত। বাস্তবে একজন প্রতারক তিনি।

সিক্ত পরিচয় দিয়ে বেড়ান তার মা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী ও সাভারের বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) ট্রেনিং ডিরেক্টর। তার ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও বিপিএটিসির ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর। বড় বোন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি বিভাগের অধ্যাপক। দুলা ভাই প্রকৌশলী, একমাত্র চাচা সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবং মামা একজন মন্ত্রী। নিজেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ৩৮তম ব্যাচের ছাত্রী দাবি করেন তিনি।

savar2

এমন পরিচয় দিয়ে শাহনুর রহমান সিক্ত ১২ জন ব্যক্তিকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়েছেন। এমনকি বিয়েও করেছেন। শুধু তাই নয়, স্বামীর পরিচিত ব্যক্তিদের চাকরি দেয়ার প্রলোভন ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেয়ার নাম করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। অথচ সিক্ত পড়াশোনা করেছেন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত।

জানা যায়, শাহনুর রহমান সিক্তর বাবা বিপিএটিসির একজন গাড়িচালক ছিলেন। বাবার অকাল মৃত্যুর পর মা বিপিএটিসিতে আয়ার চাকরি পান। সিক্ত তার মায়ের সঙ্গে বিপিএটিসির কর্মচারী কোয়ার্টারে বড় হন।

বিসিএস ক্যাডারদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ এখানেই হয়। এই সুযোগে প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরির পদ, পদমর্যাদাসহ বিভিন্ন বিষয় আয়ত্ত করেন সিক্ত। বিপিএটিসির কাছেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সিক্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আচার-আচরণের বিভিন্ন বিষয় সহজেই আয়ত্ত করেন। ক্যাম্পাসের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরদের সম্পর্কেও অনেক তথ্য আয়ত্ত করেন। এমনকি ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত শিক্ষার্থীর মতোই পরিচিত হয়ে ওঠেন। ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩-৪ হাজার ‘মিউচুয়াল ফ্রেন্ড’ গড়ে তোলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্যাচের রি-ইউনিয়নে অংশগ্রহণ শুরু করেন সিক্ত।

এরই মধ্যে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় দায়ের করা একটি প্রতারণার মামলায় গত ২ ফেব্রুয়ারি সিক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই মামলার বাদী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও ওই নারীর কথিত স্বামী।

এরপর পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে এই নারীর ভয়ঙ্কর সব প্রতারণার গল্প। উত্তরা পশ্চিম থানার মামলায় এখন এই নারী কারাগারে।

শাহনুর রহমান সিক্ত ছাড়াও ওই নারী সিক্ত খন্দকার, তাহামিনা আক্তার পলি ও তামিমা আক্তার পলি বলে নিজেকে পরিচয় দিতেন। ৩৬তম বিসিএস ক্যাডার শাহনুর আক্তারের নামের সঙ্গে প্রতারক সিক্তর নামের মিল রয়েছে। ফলে সিক্ত বিসিএস ক্যাডার শাহনুরের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে নিজেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিচ্ছিলেন।

এভাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রথমে বিয়ে করেন। পরে স্বামীর আত্মীয়-স্বজনদের চাকরি দেয়ার নাম করে সাত লাখ টাকা ও ১০ লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেন। এক স্বজনকে ক্যাডেট কলেজে ভর্তির নাম করে হাতিয়ে নেন মোটা অংকের অর্থ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থীকেও প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রথমে বিয়ে করেন। পরে তার সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়ে কেটে পড়েন সিক্ত।

savar2

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১০-১২ বছর ধরে একই ধরনের প্রতারণা করেছেন সিক্ত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক দুই শিক্ষার্থী ছাড়াও অন্তত ১০ জনকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়েছেন। তার পরিবারের সদস্যরা প্রতারণার কাজে তাকে সহায়তা করতেন। প্রতারণার মামলায় সিক্তর দুলা ভাই আফতাব উদ্দিনকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে পুলিশের উত্তরা বিভাগের ডিসি নাবিদ কামাল শৈবাল জানিয়েছেন, একটি প্রতারণার মামলায় সিক্ত নামের ওই নারীকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে মনে হয়েছে তিনি একজন প্রতারক। মামলার তদন্ত এখনো চলছে। তার সম্পর্কে এরই মধ্যে অনেক তথ্য জানা গেছে। বিয়ের ফাঁদে ফেলে অন্তত ১২ জনের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন এই নারী।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ. স. ম. ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, এই নারীর মতো কোনো জালিয়াতি চক্রের হাতে কেউ যাতে না পড়ে সেজন্য সবার সতর্ক থাকা উচিত। এমন জালিয়াতির কোনো তথ্য যদি কারও কাছে থাকে, সবার কাছে অনুরোধ তারা যেন দ্রুত আমাদের বিষয়টি জানায়। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।