ফিচার ডেস্ক:
এ সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু চিকিৎসক দেবী শেঠী। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পৌঁছেছেন। তখন থেকেই মানুষের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয় তার সম্পর্কে জানার।

তার নাম ডা. দেবী প্রসাদ শেঠী। তিনি ভারতের কর্নাটক রাজ্যের দক্ষিণ কনাডা জেলার কিন্নিগলি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা হৃদরোগ চিকিৎসা কেন্দ্র ব্যাঙ্গালুরুর নারায়না ইনস্টিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সেসের প্রতিষ্ঠাতা। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ডা. শুভ দত্তের পশ্চিমবঙ্গের সিকে বিরলা হাসপাতালের ক্যাথল্যাবপ্রধান।

ডা. শেঠী নয় ভাই-বোনের মধ্যে অষ্টম। মেডিকেলে পঞ্চম গ্রেডে পড়ার সময় তৎকালীন দক্ষিণ আফ্রিকার জনৈক সার্জন কর্তৃক বিশ্বের প্রথম হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের কথা শুনে কার্ডিয়াক সার্জন হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। দেবী শেঠী ১৯৮২ সালে কস্তুরবা মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসাবিদ্যায় গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। পরে ইংল্যান্ড থেকে সার্জারি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। ১৯৮৯ সালে লন্ডনের উচ্চাভিলাষী চাকরির লোভ ত্যাগ করে ভারতে ফিরে আসেন। এসে ডা. রায়ের সঙ্গে কলকাতায় গড়ে তোলেন ভারতের প্রথম হৃদরোগ চিকিৎসা হাসপাতাল ‘বিএম বিরলা হার্ট রিসার্চ সেন্টার’।

ভারতীয়দের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা ইউরোপিয়ানদের তুলনায় তিনগুণ বেশি হওয়ায় একটি হাসপাতাল যথেষ্ট ছিল না। এজন্য ডা. দেবী শেঠী ও ডা. রায় মিলে আরও তিনটি হৃদরোগ চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে তোলেন। বিএম বিরলা হার্ট সেন্টার যাত্রা শুরুর অল্প দিনের মধ্যে ভারতের শ্রেষ্ঠ হার্ট হাসপাতালের একটিতে পরিণত হয়।

তিনি ১৯৯১ সালে ৯ দিন বয়সী শিশু রনির হৃৎপিণ্ড অপারেশন করেন, যা ভারতবর্ষের ইতিহাসে প্রথম সফল শিশু হৃৎপিণ্ড অস্ত্রোপচার। এছাড়া তিনি কলকাতায় মাদার তেরেসার ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর কিছুদিন পর তিনি ব্যাঙ্গালুরুতে চলে যান এবং মণিপাল হার্ট ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ১৫ হাজারের বেশি কার্ডিয়াক সার্জারি করেছেন।

ডা. দেবী প্রসাদ শেঠী পৃথিবীর ১০ জন চিকিৎসকের মধ্যে একজন। ভারতীয় হিসেবে তিনি ১ নম্বর। তিনি ১৯৯৭ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত চার হাজার শিশুর সফল হার্ট সার্জারি সম্পন্ন করেন। লন্ডনের গাইস হাসপাতলে হার্ট সার্জন হিসেবে বিশেষ প্রশিক্ষণ নেয়া ডা. দেবী শেঠীকে অনেকেই বলেন ‘অপারেটিং মেশিন’। তিনি কম খরচে উন্নত চিকিৎসা দিয়ে ‘পদ্মভূষণ পদক’ লাভ করেন।

> আরও পড়ুন- চক্রান্তের শিকার হয়েছিলেন জগদীশ চন্দ্র বসু

দেবী শেঠী যেসব শিশুর হার্ট সার্জারি করেন, তাদের অধিকাংশই গরিব পরিবার থেকে আসা। এদের সবাইকে তিনি বিনামূল্যে চিকিৎসা করেন। অন্যদিকে এ হাসপাতালে এসে যে কোনো বয়সের হৃদরোগী অর্থাভাবে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হন না।