শাহিদ মোস্তফা শাহিদ

২৫ ফেব্রুয়ারী সোমবার দুপুর ১ টার দিকে ঘুম থেকে উঠে ভাত খেয়ে বাজারের উদ্দেশ্য বের হয়েছি। টাকা ভাংতি নেওয়ার জন্য এলাকার একটি দোকানে প্রবেশ করলাম মাত্র। মোবাইল সাইলেন্ট বেজে উঠল, প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইলটা বের করতে দেখি এক বড় ভাইয়ের কল।রিসিভ করার সাথে সাথে বলল তুই কোথায়? জবাবে বললাম বাড়ির পাশাপাশি। উত্তরে বড় ভাইটা বলল কেমন সাংবাদিকতা করিছ? কেন ভাইজান!  হরিপুরে লাশ পড়ে আছে তুই এখনো বাসায়?  হুম, বের হয়ছি বাসা থেকে ভাইজান। অপর একটি প্রশ্ন করলাম লাশের বিস্তারিত জানেন কি না? না কিছুই জানিনা। কি ভাবে জানলেন আপনি! একটা বিষয় নিয়ে আইসি সাহেবকে কল করেছিলাম উনি বলল একটা লাশ নিয়ে ব্যস্ত আছে পুলিশ। আচ্ছা টিক আছে ভাইজান বলে লাইন কেটে দিয়।ফোন করলাম আইসি সাহেবকে তিনি জানালেন লাশ পাওয়া গেছে। কিন্ত পরিচয় পাওয়া যায়নি। লাশের শরীরে এসিডদগ্ধের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। তিনি তখন ঘটনাস্থলে ছিলেন। এলাকা থেকে রওনা দিলাম ঘটনাস্থলের দিকে।মাঝ পথ থেকে খুজে নিলাম সহকর্মী দৈনিক দৈনন্দিনের প্রতিনিধি এম শফিউল আলম আজাদকে।বংকিম বাজার থেকে বাইক করে চলে গেলাম ইসলামাবাদ হরিপুর এলাকায়। যাওয়ার সময় কল করলাম স্থানীয় এমইউপি আবু বক্কর ছিদ্দিক বান্ডি ভাইকে। জানতে চাইলাম ঘটনাস্থল হরিপুর কোন স্থানে?  তিনি জানালেন চন্ডি দা’র বাড়ির পশ্চিমে।পৌঁছলাম হরিপুর।গিয়ে দেখি পুলিশের তিনটি গাড়ী দাঁড়িয়ে আছে সড়কে। আশেপাশে স্থানীয় সনাতন সম্প্রদায়ের কয়েকজন লোক ছাড়া কাউকে দেখতে পাচ্ছি না।উপস্থিত তাদের থেকে জিজ্ঞেস করলাম লাশ কোনদিকে? সবাই বলছে পশ্চিমে। অর্থাৎ সড়ক থেকে আরেকটু পশ্চিমে। লাশ দেখতে যাওয়া কয়েকজন নারী পুরুষের সাথে আমরাও হাটা শুরু করলাম।পাহাড় আর নির্জন স্থান অতিক্রম করে পৌঁছলাম গন্তব্যস্থলে।পৌঁছে দেখতে পায় একদল পুলিশ।পরিত্যক্ত একটি বাড়ির পুরাতন জমিতে বিবস্ত্র একটি লাশ।অপরপ্রান্তে চেয়ারে বসা ছিলেন সহকারী পুলিশ সুপার আদিবুল ইসলাম,থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দীন খন্দকার, ঈদগাঁও তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মোঃ আসাদুজ্জামান, এসআই সনজিত চন্দ্র নাথ,শাহাজ উদ্দীন,এএসআই লিটনুর রহমান জয়সহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও লাশ দেখতে যাওয়া উৎসুক জনতা।লাশের কাছে গিয়ে বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ আর ছবি করলাম ( ভীবৎস দৃশ্য হওয়ায় প্রকাশ করা যাচ্ছে না)
তখনও পুলিশ বসে বসে  উপস্থিত জনতা থেকে লাশের পরিচয় চিনে কি না জানতে চাচ্ছে। টানা ৩/৪ ঘন্টা ধরে স্থানীয়দের কাছে সন্ধান চেয়ে লাশের পরিচয় পায়নি পুলিশ ও পিবিআই।বিবস্ত্র এবং বিকৃত অজ্ঞাত লাশের পরিচয় বের করা নিয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে পুলিশ কর্মকর্তারা।লাশের শরীর এমন যে জন্মদাতা পিতা মাতা এবং স্বজনরাও শনাক্ত করতে হিমশিম খেত।ঘটনাস্থল ঘুরে ঘুরে ভাবছিলাম হয়ত লাশ উদ্ধার করে গাড়ীতে তোলার জন্য লোক খুজছেন পুলিশ ।
হঠাৎ করে এসে পড়ল পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন পিবিআইয়ের কক্সবাজার অফিসে পুলিশ পরিদর্শক পুলক বড়ুয়ার নেতৃত্বে একদল ফোর্স। তারা এসে কয়েকজন সদস্য হাতে গ্লাবস্ আর মুখে মার্কস পড়ে পুলিশকে সাথে নিয়ে লাশ উদ্ধারে নেমে পড়ল।তখন সংবাদটি আংশিক লিখে অনলাইনে পাঠিয়ে দিয়।
পিবিআইয়ের আর কয়েকজন সদস্য ঘটনাস্থলের আশপাশ এলাকায় কি যেন খুঁজছিল।পরক্ষণেই ঘটনাস্থলে আসল চেয়ারম্যান মোঃ নুর ছিদ্দিক।স্থানীয় কয়েকজন যুবকের সহযোগিতায় লাশ তুলে কালো রং এর পলিথিন মুড়িয়ে নিয়ে যায় গাড়ীতে। লাশের সাথে চলে যায় সব পুলিশ কর্মকর্তা।আছে শুধু পিবিআইয়ের কর্মকর্তাগন আর আমরা দুই মিডিয়া কর্মী ও স্থানীয় কিছু লোকজন।লাশ নিয়ে যাওয়ার পর আলামত সংগ্রহে নেমে পড়ে পিবিআই। একেক জন একেক স্থান থেকে একেক আলামত সংগ্রহ করে আনতে লাগল।লাশ যেখানে পড়া ছিল সে স্থানে খুজে পাওয়া যায় কিছু আলামত।পিবিআই কর্মকর্তাদের সাথে আমিও খুজতে থাকলাম আলামত।ততক্ষনে এমন কোন আলামত বা নমুনা সংগ্রহ করা যায়নি যে লাশটির পরিচয় শনাক্ত করা সহজ হবে। তখন  পায়ের গোড়ালির একটি পুড়ে যাওয়া চামড়া খুজে পায়।সেটি মাটি থেকে তুলে একজন পিবিআই সদস্যকে তুলে দিয়।তিনি বললেন এটা দিয়েও কোন কাজ হবে না।মেঘাচ্ছন্ন পৃথিবী, বৃষ্টি আসন্ন তখনও কৌতুহল বসত পিবিআই সদস্যদের সাথে খুজতে থাকি আলামত।মুহূর্তের মধ্যে ঘাসের নিচের দিকে দেখতে পায় একটি বস্তু। হাতে নিয়ে দেখতে পায় এটি হাতের সর্ব কনিষ্ঠ একটি আঙ্গুলের উপরাংশ। সেটাও তুলে তাদের হাতে দিয়।এক সদস্য বলল এটা কনিষ্ঠ আঙ্গুল এটা নিয়েও কাজ হবে না।একটি বৃদ্ধ আঙ্গুল থাকলে পরিচয় শনাক্ত করতে সহজ হত। কৌতুহল বসত একটি কাঠের টুকরো নিয়ে সব ঘাস তন্নতন্ন করেছি।হঠাৎ উঠে আসল আরো একটি আঙ্গুলের অংশ। এটাও তুলে দিলাম তাদের হাতে। একজন পিবিআই সদস্যের মুখে মৃদু খুশি খুশি ভাব দেখলাম। তিনি জানালেন এটা দিয়ে অনেক কাজ করা যাবে।তারপর চলে আসার প্লানিং করছি।আসার সময় একজন পিবিআই সদস্যকে নিজের পরিচয় দিয়ে তিন জনের নাম জেনে নিলাম। তিনি নিজের পরিচয় দিলেন মোঃ আবু জাফর,অপর জন পুলক বড়ুয়া এবং নাজমুল। চলে এসে একটি দোকানে বসে নাস্তা করছিলাম।চিন্তা করছিলাম অজ্ঞাত নামা লাশটার পরিচয় শনাক্ত করতে সংশ্লিষ্টদের কত বেগ পেতে হয় একমাত্র আল্লাহ জানে।এর আগে পিবিআই সদস্যরা উদ্ধার ও সংগ্রহ করা আলামত গুলো পুলিশকে হস্তান্তর করেন। আবার গেছি আইসি মোঃ আসাদুজ্জামান ভাইয়ের কাছে। তিনি আমাকে আশ্বাস দিলেন উদ্ধার করা লাশের পরিচয় খুব সহজে বের করা যাবে।কি ভাবে? খুজে পাওয়া বৃদ্ধ আঙ্গুলের সাহায্য।
তখন রাত ৮ টা আনুমানিক। তার আগে লাশ পাঠিয়ে দেয় মর্গে।টানা ১ দিন সন্ধান না পেয়ে লাশটি বেওয়ারিশ হিসাবে আঞ্জমনে আল ইত্তেহাদকে দিয়ে দেয় পুলিশ। পরে তারা লাশটি দাফন করে পেলেন। চলছে মামলার প্রক্রিয়া। দায়ের করা হয় একটি মামলা বাদী হন এসআই সনজিত চন্দ্র নাথ। মামলাটি তদন্তের ভার পরে নবাগত এসআই মোঃ আবু ছিদ্দিকের উপর।প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পেয়ে সম্পন্ন মানবিক বিবেচনায় আইসি মোঃ আসাদুজ্জামানের নির্দেশে নেমে পড়েন লাশের পরিচয় শনাক্ত করনে।উদ্ধার এবং খুজে পাওয়া আলামত গুলো নিয়ে ছুটে যায় ঢাকায়।নির্বাচন অফিসের সহযোগিতায় বৃদ্ধ আঙ্গুলের বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করে বের করা হয় লাশের পরিচয়। লাশটি ঘটনাস্থল থেকে ২শ গজ মত অদূরের আমির হোসেনের ছেলে বেলাল উদ্দীন। পরদিন ঢাকা থেকে  ঈদগাহ  চলে আসে এসআই আবু ছিদ্দিক।ইনচার্জ আসাদুজ্জামানকে সাথে নিয়ে পুনরায় ছুটে যায় ঘটনাস্থলে। বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করে বের করা তথ্য নিয়ে বেলালের বাড়িতে যায় পুলিশ। তার পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন তারা।কয়েকজন স্বজন তখনো নিশ্চিত নন যে লাশটি বেলালের! পুলিশ তাদেরকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বলেন এটা বেলালের লাশ।অনেকক্ষন পর বের হয়ে আসে নানান রকম কথা।তদন্তের স্বার্থে সেসব কথা গুলো প্রকাশ করা যাচ্ছে না। আশা করি ঘটনার ক্লো, রহস্য, উদঘাটন করতে সহজ হবে পুলিশের।
প্রচ্ছদঃ ঘটনাস্থলের ২ গজের মধ্যে তার বাড়ি! লাশ উদ্ধারের সময়  হাজার হাজার এলাকার লোকজন উপস্থিত থাকার পরও যে লাশটি স্বজন, এলাকাবাসী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা শনাক্ত করতে পারেনি।সে লাশটির সন্ধান টিক ৩ দিন পর শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ। যার কারণে অধিকাংশ লোকজন বলতে শুনা যায় পুলিশ পারেও বটে। যে লাশটি স্বজন এলাকাবাসী চিহ্নিত করতে পারেনি সেটি চিহ্নিত করেছে পুলিশ। ধন্যবাদ পুলিশ বাহিনীকে।
নোটঃ বিভিন্ন পেশার  দুই একজনের কারণে পুরো পেশার মানুষের বদনাম হয়।যেমন একজন পুলিশ সদস্যের খারাপ কাজের কারনে পুরো বাহিনীর বদনাম হয়। একজন হলুদ সাংবাদিকের কারণ পেশাদার সাংবাদিকদের বদনাম হয়। একজন কথিত ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার কারণে পুরো ডাক্তারগনে বদনাম হয়।
একজন গাড়ী চালকের কারণে পুরো চালকদের গালি শুনতে হয়।
আসলে আমাদের সমাজ,রাষ্ট্র, প্রশাসনের ভিতর এখনো অনেক ভাল লোক আছে। তারা ভাল কাজ করতে আগ্রহী। আসুন আমরা সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলি।দৃষ্টি ভঙ্গি পাল্টায়, বদলে যাবে দেশ।ভাল কাজের প্রশংসা করি, খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে উৎসাহ দিয়।

শাহিদ মোস্তফা শাহিদ, সংবাদকর্মী, ঈদগাঁও, সদর কক্সবাজার| ০১৮৩৫-৫০২০৪৯