মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুস্কুল ইউনিয়নের আশ্রায়ন প্রকল্প-২ এ ৪৫ একর জমির উপর অত্যাধুনিক শুঁঠকী মহাল এবং ইটিপি স্থাপন করা হচ্ছে। গত এক জানুয়ারি থেকে এ প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শতভাগ সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদেশে ব্যাপক চাহিদা থাকায় শুঁটকির রফতানি বাড়াতে আগ্রহী হয়ে সরকার এজন্য শুঁটকির আন্তর্জাতিক বাজারও ইতিমধ্যে যাচাই করেছে। বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) চলমান এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। বিএফডিসি’র কক্সবাজার অফিস সুত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকারী ও রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী সমিতির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে বিদেশে এ পণ্যের বাজার প্রায় ৫০০ কোটি টাকার। দেশের বাজারে ৩০০ কোটি টাকার এবং বিদেশে রফতানি করা হয় প্রায় ২০০ কোটি টাকার। তাই রফতানি বাড়াতে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত এই শুঁটকি মহাল স্থাপনে প্রকল্পটির কাজ সরকার গুরুত্ব সহকারে শুরু করেছে।
কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে বছরের প্রায় নয় মাসই শুঁটকি উৎপাদনের কাজ চলে। এটা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানিও হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, অবকাঠামো সমস্যাসহ শুঁটকি পরিবহনের ক্ষেত্রে পথে পথে বিভিন্ন মহলের হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বলছে,সমস্যা সমাধানে কাজ চলছে।
কক্সবাজার জেলা সদরের নাজিরারটেক এলাকায় বেসরকারিভাবে এরই মধ্যেই গড়ে উঠেছে দেশের সর্ববৃহৎ শুঁটকি পল্লী। শীত ও শুষ্ক মওসুমে এই এলাকায় ব্যস্ততা বাড়ে। বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শুকিয়ে প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত থাকে শ্রমিকরা। এ সময় শ্রমিকদের পাশাপাশি ব্যস্ত থাকে মহাল মালিক, ব্যবসায়ীরাও। বৃষ্টির মৌসুমে প্রায় তিন মাস এখানে কোনও কাজ হয় না।

সরকারি সহযোগিতায় নাজিরারটেক শুঁটকি মহালের আধুনিকায়ন করা গেলে আরও বেশি শুঁটকি বিদেশে রফতানি করা সম্ভব বলে জানালেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা জানান-শুঁটকি ব্যবসাকে আরো মান সম্মত ব্যাবসায় পরিণত করতে এর অবকাঠামো উন্নয়ন করা দরকার। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই এলাকাকে সমৃদ্ধ করা সম্ভব হবে। তারা বলেন-এ ব্যবসাকে স্থায়ী রূপ দিতে একটি আধুনিক শুঁটকি মহাল গড়ে তোলা প্রয়োজন। যা সরকারের পক্ষেই সম্ভব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান-অবকাঠামো উন্নয়নসহ শুঁটকি মহালের আধুনিকায়নে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আর অত্যাধুনিক ফ্যাক্টরি স্থাপনের জন্য আমরা বিভিন্ন বাণিজ্যিক সমিতির প্রতিনিধিকে অনুরোধ জানিয়েছি তারা যেন বিনিয়োগ করে। তিনি বলেন-এরই মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে এখানে একটি আধুনিক শুঁটকি মহাল গড়ে তুলতে প্রকল্প নেয়া হয়েছে। যা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, মাছ শুঁটকি প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত পুনর্বাসিত পরিবারগুলোর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, ক্লাস্টারভিত্তিক সেমি-ইম্প্রোভড ও আধুনিক শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ-পদ্ধতি চালু করা, রাসায়নিক পদার্থ ও ধুলাবালিযুক্ত শুঁটকির সরবরাহ বন্ধ করা, গুণগতমান সম্পন্ন কাঁচামাছ সংগ্রহের জন্য আধুনিক মৎস্য আহরণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং শুঁটকি মাছের জন্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি করাই সরকারের নেওয়া প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। প্রশাসনে উক্ত কর্মকর্তা জানান-প্রধানমন্ত্রীর মূখ্যসচিব মোহাম্মদ নজিবুর রহমান সরেজমিনে এসে ইতিমধ্যে প্রকল্পটি পরিদর্শন করে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
পরিদর্শনকালে তিনি বলেছেন- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ থেকে খুরুশকুলে বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আর পুনর্বাসিত পরিবারগুলোর কর্মসংস্থানের জন্যই এই আধুনিক শুঁটকি মহাল ও ইটিপি স্থাপনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ কর্তৃক উক্ত স্থাপনা দু’টি বিএফডিসির মাধ্যমে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ায় একটি শুটকি মহাল ও ইটিপি স্থাপনের ডিপিপি তৈরির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রকল্পের মধ্যে ৫০ টনের আইস প্ল্যান্ট, মৎস্য অবতরণ ও প্রক্রিয়াকরণ শেড, ২৪৫০টি গ্রিনহাউজ বেসড মেকানিক্যাল ড্রায়ার, ৫০টি সেমি মডার্ন মেকানিক্যাল ড্রায়ার ৫০০ ও ৩০০ টনের দু’টি কোল্ড স্টোরেজ, কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাব, ফিসমিল ও ফিস ওয়েল প্ল্যান্ট ও মেশিন রুম নির্মাণ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ড্রাইফিস মার্কেট, মাল্টিপ্লেক্স বিল্ডিং, কনভেয়র বেল্ট (জেটি হতে ল্যান্ডিং স্টেশন), ট্রাক পার্কিং, প্যাকেজিং ফ্যাক্টরি, ইলেক্ট্রিক সাবস্টেশন ও জেনারেটর হাউজ, চারটি টয়লেট জোন, ইটিপি ও ডব্লিউটিপি স্থাপন এবং ২৪ কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ রোড-নেটওয়ার্কও তৈরি করা হবে।
একইসঙ্গে এক হাজার ৮৬৮ কোটি সাড়ে ৮৬ লাখ ব্যয়ে মৎস্য অধিদফতরের আওতায় বাস্তবায়নাধীন সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিসারিজ প্রকল্প’ এর আওতায়ও বিএফডিসির জন্য দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে মৎস্য অবতরণকেন্দ্র এবং চট্টগ্রাম মৎস্য বন্দর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের কাজ চলছে।
শুঁটকি রপ্তানিকারক সমিতির কর্মকর্তাদের মতে, দেশের রফতানি পণ্যের তালিকা বাড়াতে শুঁটকি একটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য। এটিকে আন্তর্জাতিক বাজারের উপযোগী করে গড়ে তুলতে পারলে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। সেই বিবেচনায় সরকারিভাবে একটি আধুনিক শুঁটকি মহাল গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পটি শতভাগ বাস্তবায়ন হলে দেশে শুঁটকি হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ রফতানি পণ্য।