আতিকুর রহমান মানিক:
উখিয়ার কুতুপালং এ রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার নামে তামাশা শুরু করেছে এনজিও পরিচালিত একটি হাসপাতাল। রোহিঙ্গাদের জন্য স্হাপিত এই হাসপাতাল “এফ এইচ (ফুড ফর হাংগ্রি) মেডিক্যাল টীম” থেকে কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
অসহায় রোহিঙ্গাদের দিনরাত ২৪ ঘন্টা চিকিৎসা সেবা দেয়ার কথা বললেও দিনদুপুরেই বন্ধ থাকে হাসপাতালের দরজা। আর মোটা অংকের বেতনভোগী অন্ততঃ হাফডজন ডাক্তার ভিতরে তাস খেলায় ব্যস্ত থাকেন, এমনটাই জানিয়েছেন ভূক্তভোগী রোহিঙ্গারা।
অনুসন্ধানে প্রকাশ, মায়নমার কর্তৃক বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত ও বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা সেবা দিতে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে কুতুপালং এলাকায় কার্যক্রম শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক উপরোক্ত প্রতিষ্ঠান। ব্লক – এ – ২০ এর এইট – ডাব্লিউ ক্যাম্প এলাকায় প্রাচীন ২ টি গর্জন মাদার ট্রি কেটে ফেলে বনবিভাগের জমিতে রাতারাতি গড়ে তোলা হয় উপরোক্ত হাসপাতাল। কর্তিত ২ টি মাদার ট্রি’র নামেই “টু ট্রি হাসপাতাল” নামে এর নামকরনও করা হয় !
জয়েন্ট রোহিঙ্গা রেসপন্স প্রোগ্রাম’র আওতায় চিকিৎসা সেবা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।
কিন্তু শুরু থেকেই এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার নামে রোগীদের সাথে প্রতারনা করে আসছে বলে জানা গেছে। সেবাপ্রার্থী রোহিঙ্গারা জানান, কোন রোগী নিয়ে গেলেই ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হয় ও পরে চিকিৎসা নেই বলে বিদায় করে দেয়। প্রয়োজনীয় ঔষধও পাওয়া যায়না এখানে। ২৪ ঘন্টা চিকিৎসা সেবা দেয়ার কথা বললেও দিনরাতের বেশীর ভাগ সময় বন্ধ থাকে উক্ত হাসপাতাল।
এছাড়াও প্রায় সময় হাসপাতালের মূল দরজা বন্ধ রেখে ভিতরে গল্পগুজব এমনকি তাসখেলায় মত্ত থাকেন ডাক্তার ও সহকারীরা।
রোহিঙ্গা নারী হালিমা বলেন, কয়েকদিন আগে ৪ বছরের ছেলের ডায়রিয়া হলে চিকিৎসার জন্য সেখানে গেলে দুপুর পর্যন্ত বসিয়ে রাখার পর “ঔষধ নেই” বলে তাড়িয়ে দেয়।
গর্ভবতী রোহিঙ্গা নারী কুলসুমা জানান, প্রসব বেদনা উঠলে ডেলিভারীর জন্য হাসপাতালে যান। কিন্তু কয়েকঘন্টা পর “ডাক্তার নেই’ বলে বিদায় করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
অপর রোহিঙ্গা নারী আরজু বেগম জানান, বাচ্চার ম্যালেরিয়া হলে এফ এইচ হাসপাতালে গেলে কয়েকটি প্যারাসিটামল ধরিয়ে দেয়। এভাবেই রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা দেয়ার নামে প্রতারনায় নেমেছে উপরোক্ত এনজিও এবং হাসপাতালটি। আর এর আড়ালে সেবার নামে আনা কোটি কোটি ডলার হজম করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
হাসপাতালের ডিউটি ডাক্তার মুনমুন মনীষা জানান, ফুড ফর হাংগ্রি (এফ এইচ) মেডিক্যাল টীম এর অধীনে উক্ত হাসপাতালে ৭ জন এমবিবিএস ডাক্তার, ১৪ জন ডিপ্লোমা ডাক্তার, ১ জন রেজিষ্ট্রেশন অফিসার ও একজন ফার্মাসিস্ট কর্মরত রয়েছেন।
কিন্তু ভূক্তভোগীরা জানান, এত জনবল থাকা সত্বেও এখানে নামমাত্র চিকিৎসা সেবাও মিলেনা। এর ফলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভীড় জমাচ্ছে চিকিৎসাপ্রার্থী রোহিঙ্গারা। আর রোহিঙ্গাদের ভীড়ে চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছে স্হানীয়রা।
ফুড ফর হাংগ্রি এফ এইচ মেডিকোল টীমের ইনচার্জ ডাঃ হালিমুর রেজা উপরোক্ত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কুতুপালংয়ে তাদের হাসপাতাল থেকে ২৪ ঘন্টা চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গাসেবা ও চিকিৎসার নামে তামাশায় নামা উপরোক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্হা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন সচেতন মহল।