ডেস্ক নিউজ:
রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনের দোতলার কেমিক্যাল বিস্ফোরণ থেকে হয়। আগুনের তীব্রতার কারণে গাড়ির সিলিন্ডারগুলো কয়েক মিনিট পর বিস্ফোরিত হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির এক সদস্য।

কমিটির ওই সদস্য জাগো নিউজকে বলেন, ‘দোতলায় হাইলি ফ্লেমেবল (অত্যন্ত অগ্নিদাহ্য) পদার্থ ছিল। সেখানকার বিস্ফোরণেই আগুনের সূত্রপাত। মুহূর্তেই আগুন ৩-৪ টি বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর গাড়িগুলোর সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ ঘটে।

ওই ঘটনায় গঠিত কয়েকটি তদন্ত কমিটি বলেছে, দুটি গাড়ির সংঘর্ষের ফলে একটি গাড়ির সিলিন্ডারের বিস্ফোরণে আগুনের সূত্রপাত। খোদ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাইদ খোকনও বলেছেন, ‘আগুনের সূত্রপাত গাড়ির সিলিন্ডার থেকে।’

এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির ওই সদস্য বলেন, ‘ঘটনাস্থলে দুই গাড়ির মধ্যে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। সড়কে যানবাহনের প্রেসার (বাড়তি চাপ) থাকায় গাড়িগুলো (প্রাইভেট কার, পিকআপ, মোটরসাইকেল, রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি) অত্যন্ত ধীর গতিতে চলাচল করছিল। আগুন লাগার কয়েক মিনিট পর একটি সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। পরবর্তীতে কয়েকটি সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ ঘটে।’

‘কিন্তু প্রথম বিস্ফোরণটি ওয়াহেদ ম্যানশনের দ্বিতীয় তলা থেকে হয়েছে- এটি নিশ্চিত। সেখানে বিপুল থিনার ও অন্যান্য দাহ্য পদার্থ মজুত ছিল। এসবের নাম ও কার্যকারিতা বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদনে দেয়া হবে।’

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহম্মদ খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ওয়াহেদ ম্যানশনের দোতলায় ও নিচে দাহ্য পদার্থের মজুত ছিল। আগুন লাগার সুস্পষ্ট কারণ তদন্তের পর বলা যাবে। আশা করছি, ২-১ দিনের মধ্যে তা স্পষ্ট হবে।’

বাংলাদেশ কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউমারি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য এম এস আই হাবিব বলেন, ‘চকবাজারের চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, কোনোভাবেই কেমিক্যাল বা কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের সংশ্লিষ্টতা ছিল না। ওটা ছিল কেবলমাত্র গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ফল।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুরান ঢাকার কোনো এলাকায় দাহ্য কেমিক্যাল নেই। যদি কেউ রেখে থাকেন, সেটা তিনি গোপনে রেখেছেন। সরকার যদি আমাদের অল্প সময়ের মধ্যে গোডাউন স্থানান্তরের জন্য কোনো জায়গা দেয় তাহলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে চলে যাব।’

প্রসঙ্গত, পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনে গত বুধবার (২০ ফেব্রুযারি) রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে আগুনের সংবাদ পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

ওই ঘটনায় মোট ৬৭ জন নিহত হন। আহত ও দগ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৪১ জন। তাদের মধ্যে নয়জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদঘাটনসহ দুর্ঘটনার সার্বিক বিষয় তদন্তের জন্য সুরক্ষাসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (অগ্নি অনুবিভাগ) প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তীকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কমিটিকে সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এ কমিটিতে আরও আছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহম্মদ খান, পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ইব্রাহীম খানসহ আরও দুই কর্মকর্তা।

পাশাপাশি দোষীদের চিহ্নিত করতে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। এছাড়া অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান, প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং অগ্নিদুর্ঘটনা পুনরাবৃত্তিরোধে সুপারিশ প্রদানের জন্য ১২ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে শিল্প মন্ত্রণালয়।

ভয়াবহ ওই আগুনের সূত্রপাতের বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন গতকাল শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। কেমিক্যালের কারণে আগুন বেড়েছে।’

অগ্নিকাণ্ডের ওই ঘটনার পর দুদিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে কমিটির আহ্বায়ক প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী সাংবাদিকদের জানান, তদন্ত কমিটি একাধিকবার ঘটনাস্থলে এসেছে। সংশ্লিষ্ট সবপক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে। তদন্ত প্রতিবেদনের প্রাথমিক কাজ হবে, অগ্নিকাণ্ডের উৎস ও কারণ খুঁজে বের করা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে সরকারকে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণের পরামর্শ দেয়া।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর কমিটির অপর সদস্য লালবাগ বিভাগের ডিসি ইব্রাহীম খান গত শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এখনও সঠিক কারণ নির্ণয় করতে পারিনি। তদন্ত করে আমরা আদালতে প্রতিবেদন জমা দেব। তদন্ত রিপোর্ট আপনাদেরও (সাংবাদিক) জানানো হবে।’

তবে রোববার তদন্তের বিষয়ে জাগো নিউজের কাছে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। আজ (রোববার) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কমিটির একটি বৈঠক হওয়ার কথা। চলতি সপ্তাহের শেষের কার্যদিবসে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে।

ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৬৭ জনের মধ্যে গতকাল শনিবার পর্যন্ত ৪৮ মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অজ্ঞাত ১৯টি মরদেহের পরিচয় শনাক্তে ৩৮ জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি।