মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ হাইস্কুল মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণকৃত ইয়াবাবাজারা গা শিউরে উঠার মতো কিছু তথ্য দিয়েছে। পুলিশ হেফাজতে থাকাবস্থায় জিজ্ঞাসাবাদে আত্মসমর্পণককারীরা বলেছে-ইয়াবা টেবলেটের একটি চালানও রাষ্ট্রের একটি সুনির্দিষ্ট বাহিনীর সম্মতি ছাড়া পাচার হতোনা। ঐ বাহিনীটি সম্মতি দিলেই ইয়াবার চালান পাচার করা হতো। ইয়াবার চালান পাচারে সম্মতি পেতে বাহিনীটির সাথে নিয়মিত কন্ট্রাক্ট করতে হতো। তবে সে বাহিনীটা কোনভাবেই পুলিশ বাহিনী নয়। শুধুমাত্র ইয়াবার চালান ধরা পড়লেই সেক্ষেত্রে পুলিশের একেবারে নগন্য কিছু সদস্য পরোক্ষভাবে আটককৃত ইয়াবার চালান ঊনিশ বিশ করার সুযোগ নিতো। সেই সুযোগ নেয়া পুলিশের সংখ্যা কোন অবস্থাতেই শতকরা পাঁচ ভাগের বেশী হবেনা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের নিয়ন্ত্রনাধীন বিশ্বস্ত একটি সুত্র শিউরে উঠার মতো এ তথ্য জানিয়েছে।
সুত্র মতে, জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরো পাঁচ শতাধিক ইয়াবাবাজ ও হুন্ডি ব্যবসায়ীর নাম উল্লেখ করেছে। যাদের নাম পুলিশের কাছে আগে জানা ছিলোনা, তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের তালিকাভুক্তও ছিলোনা। এদের মধ্যে ৫০ জনের মতো ইয়াবা ডন, যারা ইয়াবার গডফাদার এবং ২৫ জনের মতো শীর্ষ হুন্ডি ব্যবসায়ী রয়েছে। এছাড়া-ইয়াবাবাজদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিতেন-এরকম গণমাধ্যম কর্মী, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি ও প্রভাবশালীদের কিছু নাম তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এসেছে। সববিষয়ে এখন বহুমুখী ক্রস তদন্ত চলছে। আগামী একমাসের মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট পেলে সে অনুযায়ী দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়া হবে। এছাড়াও আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর তথ্য, জড়িতদের নাম ঠিকানা,পদবী জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া গেছে। যেগুলো তদন্তের স্বার্থে সুত্রটি এখন প্রকাশ করতে রাজী হয়নি। এ তথ্য রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়েও অবহিত আছে। তবে কারা-কতো, কিভাবে কখন, ধমকিয়ে অথবা ভয় দেখিয়ে ইয়াবাবাজদের কাছ থেকে মাসোহারা নিয়ে থাকে সেটা একেবারে ইতিমধ্যে পরিস্কার হয়ে গেছে। প্রাথমিক তদন্তে ইয়াবাবাজদের দেয়া তথ্যগুলোও বেশ কাজে আসছে এবং তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের সাথে প্রায় সামন্ঞ্জস্যতা পাওয়া যাচ্ছে।
এবিষয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন (বিপিএম) সিবিএন-কে শুক্রবার রাত্রে মুঠোফোনে বলেন-স্বল্প সময়ের মধ্যে এবং একা পুলিশের পক্ষে পুরোপুরি ইয়াবা সহ অন্যান্য মাদক পাচার শতভাগ রোধ করা সম্ভব নয়। তাঁর মতে-সম্মিলিত প্রয়াসেই এ উদ্যোগকে সফল করতে হবে। মাদক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করে আমরা অভিযানের কঠোরতা আরো বাড়াবো। চিহ্নিত ইয়াবাবাজদের মধ্যে যারা আত্মসমর্পন করেনি তারা কোন অবস্থাতেই নিস্তার পাবেনা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জালে তাদের পড়তেই হবে।
এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন আরো বলেন-প্রয়োজন হলে আত্মসমর্পণকৃতদের কাছ থেকে আরো তথ্য জানার জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করবো। তিনি বলেন-১০২ জনের আত্মসমর্পণ মানে এই নয় যে, ইয়াবাবাজেরা নির্মুল হয়ে গেছে। এটা সবেমাত্র শুরু। এ সাড়াশি অভিযান ক্রমান্বয়ে আরো কঠোর থেকে কঠোরতর করা হবে। এবিষয়ে তিনি সরকারের সকল এজেন্সি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও জণসাধারনের সহযোগিতা কামনা করেন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।