মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

শনিবার ২৩ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যকরী পরিষদের নির্বাচন। নির্বাচনে ১৭ টি পদের বিপরীতে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের মনোনীত এডভোকেট আ.জ.ম মঈনউদ্দিন-এডভোকেট ইকবালুর রশিদ আমিন সোহেল প্যানেল এবং জাতীয় আইনজীবী ঐক্য ফ্রন্ট মনোনীত এডভোকেট মোস্তাক আহামদ চৌধুরী-এডভোকেট আখতার উদ্দিন হেলালী প্যানেলের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শেষমুহুর্তে উভয় প্যানেলের প্রার্থীরা জমজমাট প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা বেশ ক’টি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ভোটারদের সামনে এনেছেন। তারমধ্যে প্রধান ইস্যু হলো-নবীন আইনজীবীদের প্রকট চেম্বার সংকট নিরসন। প্রস্তাবিত আইনজীবী ভবন-২ সরকারী অর্থায়নে দ্রুত নির্মাণ করে এ সমস্যার কিছুটা লাগব করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের প্রার্থীরা। তাঁরা বলছেন-সরকার সমর্থিত প্যানেল নির্বাচিত হলেই সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে প্রস্তাবিত ভবনটি দ্রুত নির্মাণ করা যাবে। অপরদিকে, জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা বলছেন-ডিজাইন প্ল্যান মুডিফাই করে আরো বেশী সংখ্যক চেম্বােরের ব্যবস্থা রেখে সরকারী ও নিজস্ব অর্থায়নে ভবনটি সহজে নির্মাণ করা হবে। জাতীয় আইনজী ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা বলছেন-তাদের সমর্থিত কমিটির আমলেই প্রস্তাবিত ভবন-২ এর জমির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এছাড়া সরকার বিরোধীরাই সবসময় আইনজীবীদের স্বার্থ, মর্যাদা, সুবিধা আদায় করতে পারে। সরকার বিব্রত হবে-এ আশংকায় সরকার পক্ষীয় আইনজীবীরা সাধারণত কোন দাবী দাওয়া সহজে আদায় করতে পারেননা। সিনিয়র আইনজীবীদের ধারণা-সরকারের অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী ও একরোখা কর্মকান্ডের সম্মিলিতভাবে প্রতিবাদ করতে গিয়েই এদেশে আইনজীবী সমিতির জম্ম হয়েছিল। অন্যদিকে, সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের প্রার্থীরা বলছেন- সরকারপক্ষীয় আইনজীবীরা দায়িত্বে থাকলেই সরকার থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ আনা সম্ভব হয়। এছাড়া আরো যেসব ইস্যু আলোচনায় এসেছে সেগুলো হলো-সমিতির যে ১২ জন আইনজীবীকে রাজনৈতিক গায়েবী(!) মামলায় আসামী করা হয়েছে তাঁদের হয়রানী বন্ধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহন করা, আইনজীবীদের স্বার্থ, সম্মান, মর্যাদা, পেশাগত মান সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া, সমিতির সদস্যদের আবাসনের জন্য আইনজীবী পল্লীর ব্যবস্থা করা, জেলা জজশীপকে ‘সী’ গ্রেড থেকে ন্যুনপক্ষে ‘বি’ গ্রেডে উন্নীত করা, বিচারকদের শূন্যপদে নিয়োগের ব্যবস্থা করা, কক্সবাজারে শ্রম আদালত, বিদ্যুৎ আদালত ও পরিবেশ আদালত স্থাপনের ব্যবস্থা করা, মহিলা আইনজীবীদের প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা, সমিতি ভবনে বাণিজ্যিক ব্যাংকের বুথ স্থাপন করা, সমিতির সার্বিক ব্যবস্থাপনাকে ডিজিলাইটেশন করা, প্রত্যেকের জন্য আলাদা কল্যাণ তহবিলের ব্যবস্থা করা, আইনজীবীদের রেস্ট হাউসের ব্যবস্থা করা, আধুনিক ও শীততাপ নিয়ন্ত্রিত সমৃদ্ধ লাইব্রেরী স্থাপন করা, বিচারপ্রার্থী সহ সংশ্লিষ্টদের জন্য গণশৌচাগারের ব্যবস্থা করা, নবীন আইনজীবীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, আদালত অঙ্গন থেকে টাউট-বাটপারদের তৎপরতা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া, আধুনিক ক্যান্টিনে সুলভে মানসম্পন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের ব্যবস্থা করা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ও রেভিনিউ কোর্ট নিয়মিত বসাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া সহ আরো অনেক প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ভোটারদের সামনে দেয়া হচ্ছে। তবে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো-কোন প্যানেলই আধুনিক চীফ জুডিসিয়াল আদালত ভবন নির্মাণের স্থান নির্ধারণে দীর্ঘদিনের জটিলতা নিরসন সংক্রান্ত কোন বক্তব্য তাদের ইশতেহারে উল্লেখ করেননি। উভয় প্যানেলই বিষটি সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেছে। জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে ফৌজদারী ও দেওয়ানী আদালত বৃদ্ধি করা, ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করে ‘দিয়ারা জরীপ’ ভূল সংক্রান্ত মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা সহ একটু বৈচিত্র্য ও নতুনত্ব আনার চেষ্টা করা হয়েছে। অপরদিকে, নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সদরে দেড় কোটি টাকা সহ মোট দু’কোটি সরকারী বরাদ্দকৃত অর্থ আনায় সরকার সমর্থিত আইনজীবীদের অবদান বার বার ভোটারদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের প্রার্থীরা। সবমিলিয়ে উভয় প্যানেলের প্রচারণা ‘কেউ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান’ বলে মনে হচ্ছে।

নির্বাচনে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারীরা হলেন-সভাপতি পদে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক দু’বারের সাধারণ সম্পাদক ও অতিরিক্ত জিপি এডভোকেট আ.জ.ম মঈন উদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ইকবালুর রশিদ আমিন সোহেল, সিনিয়র সহ সভাপতি পদে এডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী, সহ সভাপতি পদে এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম, সহ সাধারণ সম্পাদক (সাধারণ) পদে এডভোকেট এস.এম শাহিনুল হক, সহ সাধারণ সম্পাদক (হিসাব) পদে এডভোকেট মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, পাঠাগার, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে এডভোকেট আরিফুল মোস্তফা, আপ্যায়ন ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে এডভোকেট শওকত বেলাল, ৯ টি নির্বাহী সদস্য পদে এডভোকেট আমজাদ হোসেন, এডভোকেট মাহবুবর রহমান, এডভোকেট মোহাম্মদ বদিউল আলম সিকদার, এডভোকেট মোহাম্মদ রফিক উদ্দিন, এডভোকেট আব্বাস উদ্দিন চৌধুরী, এডভোকেট চৌধুরী ফাহাদ বিন ফিরোজ, এডভোকেট মাহামুদুল হক, শহীদুল্লাহ্ ফরহাদ ও মোঃ মহিউদ্দিন। অপরদিকে, জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীরা হলেন-সভাপতি পদে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা নারী ও শিশু দমন নির্যাতন দমন অবিভক্ত ট্রাইব্যুনালের প্রথম স্পেশাল পিপি এডভোকেট মোস্তাক আহামদ চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক পদে সমিতির সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক (হিসাব), সাবেক নির্বাহী সদস্য এডভোকেট মোহাম্মদ আখতার উদ্দিন হেলালী, সিনিয়র সহ সভাপতি পদে এডভোকেট মোহাম্মদ ছাদেক উল্লাহ, সহ সভাপতি পদে এডভোকেট হোছাইন আহামদ আনসারী, সহ সাধারণ সম্পাদক (সাধারণ) এডভোকেট ফিরোজুল আলম, সহ সাধারণ সম্পাদক (হিসাব) পদে এডভোকেট আবদুর রহমান, পাঠাগার, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম টিপু, আপ্যায়ন ও সাংস্কৃতিক সম্পদাক পদে এডভোকেট আবদুর রশিদ, নির্বাহী সদস্য পদে এডভোকেট এস.এম নুরুল ইসলাম, এডভোকেট সব্বির আহামদ, এডভোকেট নুরুল মোর্শেদ আমিন, এডভোকেট ফারুক ইকবাল, এডভোকেট মোহাম্মদ গোলাম ফারুক খান, এডভোকেট মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম, এডভোকেট মঈনুল আমিন, এডভোকেট মোহাম্মদ কলিম উল্লাহ ও এডভোকেট মিজানুর রহমান ভূট্টো। নির্বাচিত ১৭ জনের কার্যকরী কমিটিতে চকরিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলা চৌকি আইনজীবী সমিতি থেকে একজন করে মোট ৩ জন প্রতিনিধি কো-অপ্ট করা হবে। নির্বাচনে মোট ৬০৩ জন আইনজীবী ভোটার হয়েছেন। জেলা আইনজীবী সমিতির নতুন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এবছর কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি ভবন ও চকরিয়া উপজেলা আইনজীবী সমিতি ভবনে পৃথক দু’টি ভোট কেন্দ্রে একই সাথে সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত ভোট গ্রহন করা হবে। এর মধ্যে চকরিয়া ও কুতুবদিয়া আদালতে কর্মরত ৪৭ জন আইনজীবীর প্রকাশিত পৃথক একটি ভোটার তালিকার ভোট গ্রহন করা হবে চকরিয়া উপজেলা আইনজীবী সমিতি ভবনে। অবশিষ্ট ৫৫৬ জন আইনজীবীর অপর একটি ভোটার তালিকার ভোট গ্রহন করা হবে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনের দু’তলায়। সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট মুহাম্মদ শাহাজাহানকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, এডভোকেট শ্যামল কান্তি চৌধুরী ও এডভোকেট মুহাম্মদ বাকের কে সহকারী প্রধান নির্বাচন কমিশনার, এডভোকেট নুর উল আলম, এডভোকেট আবু ছিদ্দিক, এডভোকেট ফরিদ আহামদ ও এডভোকেট সিরাজ উল্লাহ নির্বাচন কমিশনার সহ ৭ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন এ নির্বাচন পরিচালনা করবেন। ভোট গ্রহন সংক্রান্ত প্রায় সকল প্রস্তুতি নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছে বলে নির্বাচন কমিশনার এডভোকেট ফরিদ আহামদ সিবিএন’কে জানিয়েছেন।