বুধবার দৈনিক আজকের দেশবিদেশ ও অনলাইন নিউজ পোট্রাল সিবিএনসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে ‘ দৈনিক প্রথম আলোয় মানহানীকর সংবাদ প্রকাশের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের সংবাদ সন্মেলন’ শীর্ষক এ কে এম মনজুরুল করিম সোহাগের বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে। সংবাদ সন্মেলনে সোহাগ নিজেকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দাবী করে প্রথম আলোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন নিয়ে বিষুদগার করেছেন। বলেন-এটা নাকি হলুদ সাংবাদিকতা।

আমি বিবৃতিদাতা প্রথম আলো টেকনাফ প্রতিনিধি গিয়াস উদ্দিন এর ভুঁয়া সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, প্রথম আলো হলুদ সাংবাদিকতা করেনা। সাংবাদিকতাকে পুঁজি করে অন্য কোনো ব্যবসাও করেন না প্রথম আলোর কোনো সাংবাদিক। প্রথম আলোর সাংবাদিকেরাও সরকারকে প্রতিবছর বিপুল পরিমান আয়কর দিয়ে থাকেন। প্রথম আলো চলতি সালে সর্বোচ্চ কর পরিশোধ করে সেরা গণমাধ্যমের স্বীকৃতি পেয়েছে-একথা দেশের মানুষ জানে। এনিয়ে বাহবাহ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

প্রকৃতপক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মাদক তালিকা ধরেই গত ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোতে ‘ আশার গুড়ে বালি-ইয়াবা আসছেই’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে মাদক তালিকার সূত্র ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনের একটি অংশে টেকনাফ পৌরসভার অলিয়াবাদ গ্রামের আব্দুস শুক্কুর মাষ্টারের ছেলে একেএম মনজুরুল করিম সোহাগের নাম ছাপা হয়। এতে তিনি ক্ষেপে গেছেন। তারপর সংবাদ সন্মেলনের নামে হলুদ সাংবাকিতার বয়ান দিয়ে গেলেন। তিনি নিজেও জানেন, মাদকের কয়েকটি তালিকায় তাঁর নাম আছে। অথচ ইয়াবা ব্যবসাকে আড়াল করার জন্য মিথ্যা বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশ করে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

পাঠকের অবগতির জন্য বলছি, ২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সর্বশেষ করা ইয়াবা তালিকায় জেলার ১ হাজার ১৫১ জনের নাম তালিকাভুক্ত হয়। এরমধ্যে টেকনাফের ৯১২ জন। এরমধ্যে ১৪৪ নম্বরে আছেন একেএম মনজুরুল করিম সোহাগ, পিতা-আব্দুস শুক্কুর মাষ্টার, সাং অলিয়াবাদ, টেকনাফ পৌরসভার নাম।

২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার আরেক তালিকায় ১ হাজার ১৫৮ জন ইয়াবার ব্যবসায়ীর তালিকায় ২৮৭ নম্বরের আছে একেএম মনজুরুল করিম সোহাগের নাম। সম্প্রতি আত্মসমর্পণকৃত ইয়াবা ব্যবসায়ীরাও ইয়াবা ব্যবসার ইন্দনদাতা হিসাবে সোহাগের নাম বলেছে । অথচ তিনি এ খবর মোঠেও রাখেন না। তার কাছে প্রশ্ন-ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকা কি সাংবাদিকেরা তৈরি করেন ? নাকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের তৈরি ইয়াবা তালিকায় কারো নাম থাকলে সাংবাদিকেরা নিউজ করতে পারবেন না ? না কি সাংবাদিকেরা বসে বসে আঙ্গুল সুষবেন ?

টেকনাফ, উখিয়া-কক্সবাজারে বীর মুক্তিযোদ্ধার বহু সন্তান আছে। তাঁদের নাম ইয়াবা তালিকায় নেই। তাছাড়া প্রথম আলোতে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে অসম্মান করে কিছু লেখা হয়নি। টেকনাফের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসও প্রথম আলোর সাংবাদিকের হাতে রচিত হয়েছিল-একথা সবার জানা। সুতরাং সব কিছু জেনেও না জানার ভান করে গণমাধ্যমে প্রথম আলোর বিরুদ্ধে মিথ্যা রটনা চালানো সাংবাদিকতার নীতিমালা পরিপন্থি। এতে পাঠক মহলে বিভ্রান্তি দেখা দেয়।

প্রতিবেদককে হলুদ সাংবাদিকতার অপবাদ দিয়েছেন সোহাগ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার বড় ভাই কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য লিখা হয়েছে। যা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিপন্থি। দ্রুত সময়ে মধ্যে মানহানীকর এসব বক্তব্য প্রত্যাহার করা না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভুঁয়া সংবাদ প্রকাশের আগে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের অভিযুক্ত প্রতিবেদকের বক্তব্য নেওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তাও করা হয়নি। এক্ষেত্রে আমার বক্তব্য হচ্ছে- আইনশৃংখলা বাহিনীর ইয়াবা তালিকায় দেখেই প্রথম আলোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল। ওই প্রতিবেদনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের পরিচয় দেওয়া আছে। এককভাবে কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরী হয়নি। বিশ্বাস না হলে যে কেউ এ প্রতিবেদকের কাছে এসে সংরক্ষিত ইয়াবা তালিকা সোহাগের নামটি দেখে যেতে পারেন।

গিয়াস উদ্দিন

দৈনিক প্রথম আলো

টেকনাফ, কক্সবাজার।

০১৭১৪৯৯১১৮৪