সোহরাব হোসেন চৌধুরীঃ
২১ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জতিক মাতৃভাষা দিবস। দেশ-দুনিয়ার ভাষাপ্রেমী মানুষ দিবসটিকে মর্যাদাপূর্ণ কর্মসূচীর মাধ্যমে পালন করে। এদিকে কক্সবাজারবাসীও বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি পালন করবে। কিন্তু কক্সবাজারে ১৯৬২ সালে বাঁশ গাছের অবকাঠামোতে তৈরি শহীদ মিনার থেকে শুরু করে, প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারী সহ নানা দিবসকে স্বাগত জানিয়ে দেশের জন্য প্রাণদানকারী শহীদের প্রতি মানুষ শ্রদ্ধা জানায়। তবে জেলাবাসীর অনেকের কাছে এখনো অজানা,
কক্সবাজারে প্রথম পাকা শহীদ মিনার কোনটি ? কাঁর নেতৃত্বে এবং কাদের সহযোগিতায় এটি নির্মিত হয়?
এসব বিষয়ে জয়বাংলা বাহিনী৭১ এর প্রধান, বর্ষীয়ান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন চৌধুরীর সাথে আলাপকালে তিনি একটি ছবি দেখিয়ে বলেন, কক্সবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম শহীদ মিনার। ৪৬বছর আগের এ ছবিতে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও আওয়ামীলীগের তরুণ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে শহীদ পরিচালক সাবেক সদস্য সচিব (ভূমি মন্ত্রণালয়) ও তৎকালীন এসডিও ওমর ফারুক, সুপরিচিত ম্যাজিষ্ট্রেট চাকমা বাবু, শিক্ষক মন্ডলী ও ছাত্রবৃন্দ নিয়ে প্রথম ফুল দিতে দেখা যায়। কামাল হোসেন চৌধুরী প্রথম শহীদ মিনারটি উদ্বোধন করেন। এ শহীদ মিনার নির্মাণকল্পে প্রচুর পরিশ্রম করেন মরহুম শিক্ষক বদর আলম, শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম (বর্তমান বায়তুশ শরফের পরিচালক), শিক্ষক সৈয়দ আহমদ, শিক্ষক লতিফ প্রমূখ। কিন্তু ইতিপূর্বে ১৯৬২ সালে কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের জেনারেল সেক্রেটারী কামাল হোসেন চৌধুরী একঝাঁক সংগ্রামী ছাত্র-জনতা নিয়ে কক্সবাজার পাবলিক ইনিষ্টিটিউশন অঙ্গনে আমতলায় গাছ-বাঁশ দিয়ে রাতারাতি একটি শহীদ মিনারের অবকাঠামো নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে কক্সবাজার সরকারী কলেজের প্রথম নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন চৌধুরী তাঁর কেবিনেট ও সহযোগী ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে কক্সবাজার কলেজে প্রথম শহীদ দিবস পালন করেন এবং তাঁদের নেতৃত্বে অনেক আন্দোলন করার পর বর্তমান জেলা শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হয়। তৎকালীন জেলা প্রশাসক এবং পৌরসভার সহায়তায় নির্মাণ করা হয়েছিল এই শহীদ মিনার। তিনি আরো জানান, আমরা সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করি, মাতৃভাষার জন্যে অকাতরে রক্তদান ও প্রাণ বিসর্জনকারী ৫২এর শহীদান, সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, ৬২এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬এর ছয়দফা, ৬৯এর গণঅভ্যুত্থান এবং ৭১এর মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী ৩০ লক্ষ শহীদান ও সম্ভ্রম হারানো মা বোনদের। স্বাধীনতা লাভের পরে বঙ্গবন্ধু সরকারের সাড়ে তিন বছরকালে অফিস আদালত, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও স্কুল কলেজে বাংলা ভাষা ব্যবহারের পূর্ণ প্রচলন হয়। তিনি অতিদুঃখের সাথে বলেন, জেলার প্রথম পাকা শহীদ মিনারটিতে উক্ত বিদ্যালয়ের শহীদ ছাত্র-শিক্ষকদের তালিকা ভেঙ্গে উপড়ে ফেলা হয়েছে। বর্তমান জেলা শহীদ মিনারটি অপরাধীদের আড্ডায় পরিণত হয়েছে এবং কোন দিবস ছাড়া তার সংস্কার করা হয় না। তিনি মনে করেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশাপাশি একটি পাঠাগার স্থাপন অতীব জরুরী। উল্লেখ্য যে, ৫২-৫৩ সালে কক্সবাজার স্কুলের সিনিয়র ছাত্র আমিরুল কবির চৌধুরী (সাবেক বিচারপতি), বাদশা মিয়া (রাজনৈতিক,পেশকার পাড়া), গোলাম রহমান (বাহার ছড়া), জয়নাল আবেদিন (ব্যাংকার,বাহার ছড়া) প্রমূখের নেতৃত্বে কক্সবাজারে ভাষা আন্দোলন হয়। বর্তমানে একুশ এলে অনেক হাঁকডাক করা হয়। একুশ গেলেই সবশেষ। এখনো বাঙ্গালীর মাঝে ছদ্মবেশে থাকা ষড়যন্ত্রকারীরা বাংলা ভাষার প্রতি ষড়যন্ত্র শুরু করে দেয়।