ডেস্ক নিউজ:

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষ, গুলির ঘটনায় সাংবাদিকসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। ছাত্রলীগের কমিটিবিহীন ক্যাম্পাসটিতে আধিপত্য ও শক্তির মহড়া দেখাতে গিয়েই সাবেক কমিটির দু’গ্রুপের মধ্যে আজ সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) এই সংঘর্ষ হয়। এসময় উভয় গ্রুপের ক্যাডাররা প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে ও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এছাড়াও রামদা নিয়ে একপক্ষ আরেকপক্ষকে তাড়া করে। এসময় সংবাদ সংগ্রহ করায় সাতজন সাংবাদিকের মাথায় আঘাত করে ক্যাডাররা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার দুপুর ১২টা থেকে নতুন কমিটি প্রত্যাশীদের সঙ্গে স্থগিত কমিটির সভাপতি-সম্পাদক তরিকুল-রাসেল গ্রুপের কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর তারা দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে নতুন কমিটি প্রত্যাশী কর্মীরা বাহাদুর শাহ পার্কের দিকে এবং তরিকুল-রাসেলের কর্মীরা মূল ফটকের কাছে অবস্থান নেন। তরিকুল-রাসেলের কর্মীরা এসময় এলোপাতাড়ি কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে এবং কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়।

আহত একজনকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছেপ্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সংঘর্ষের সময় উভয় গ্রুপের ক্যাডারদের হাতে রামদা, চাপাতি, কুড়াল, চায়নিজ কুড়াল, হাতুড়ি, পিস্তল, শর্টগান দেখা গেছে। তারা প্রতিপক্ষকে লক্ষ করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে এবং আধিপত্য দেখাতে বেশ কিছু ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। হামলা চলাকালে ক্যাম্পাসের আশেপাশে বিভিন্ন স্থানে উভয় গ্রুপের শতাধিক নেতাকর্মী ভাগ ভাগ হয়ে অবস্থান নেন। ফলে আশেপাশের এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। এসময় কার্যত নিষ্ক্রিয় থাকতে দেখা যায় প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কোনও পদক্ষেপই চোখে পড়েনি তাদের। পরে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, নতুন পদ প্রত্যাশী‌দের শতাধিক শিক্ষার্থী হামলায় অংশ নেন। তা‌দের হা‌তেও লা‌ঠি সোটা ও রড দেখা যায়। ত‌বে তারা মূল ক্যাম্পা‌সে ঢুক‌তে পা‌রেননি।

শিক্ষার্থীরা জানান, তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে তরিকুল ওরফে দাদা গ্রুপের কর্মীরা রামদা দিয়ে দৈনিক সংবাদের সাংবাদিক রাকিবুল ইসলামের মাথায় আঘাত করে। এছাড়াও উভয় গ্রুপের হামলায় মাথায় আঘাতের শিকার হন দৈনিক সমকালের লতিফুল ইসলাম, বিডি ২৪ রিপোর্ট ডটকমের সানাউল্লাহ ফাহাদ, জয়নুল আবেদীনসহ সাতজন সাংবাদিক।

হামলায় আরও আহত হন স্থগিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল আফসার, ওনি, সাবেক সহ সম্পাদক টুটুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাউসার, সাদেক, এমরান, হাসান মোট ৩০ জন।

নতুন পদ প্রত্যাশী জবি শাখা ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল টিটন বলেন, ‘বিগত কয়েকদিন ধরে আমরা ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিলাম। সোমবার বেলা ১২টার পর ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে চাইলে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। অনেকেই গুরুত্বর আহত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে আমাদের দাবি দ্রুত চাঁদাবাজ নেই এমন নেতৃত্ব রেখে কমিটি দেওয়া হোক।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবি ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেল বলেন, ‘ক্যাম্পাসে কী হচ্ছে তা আমরা জানি না। এটা জানার কথা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের। কারা কী করছে সেটার দায় আমাদের ওপর এখন বর্তায় না।

বিষয়টি নিয়ে জবি প্রক্টর নূর মোহাম্মদকে একাধিক বার ফোন দেওয়া হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এ প্রসঙ্গে সহকারী প্রক্টর মহিউদ্দিন মাহী বলেন, ‘কয়েকদিন ধরেই সংঘর্ষ হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টা সমাধান হওয়া দরকার। আজকের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রেজয়ানুল হক শোভন বলেন, ‘সাংবাদিকদের ওপর আঘাত অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ব্যাপারে তদন্ত করে কঠিন থেকে কঠিনতর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’