এম, রিদুয়ানুল হক, কক্সবাজারঃ
১৯৯০ সালে ছোট দু’চালা ঘরে গুটি কয়েক শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক নিয়ে যাত্রা শুরু করা কক্সবাজার জেলার চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ বর্তমানে ৭টি বিশাল ভবন প্রায় ৩৫০০ জন শিক্ষার্থী, প্রায় ১০০ জন শিক্ষক নিয়ে কক্সবাজারের অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরিত হয়েছে। তন্মধ্যে ২২ জন শিক্ষক এমপিও ভুক্ত অবশিষ্ট শিক্ষক প্রাতিষ্ঠানিক বেতনে নিয়োগপ্রাপ্ত। পর্যটন নগরী হলেও শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা কক্সবাজার জেলাকে প্রতিনিয়ত উচ্চ শিক্ষায় এগিয়ে দিচ্ছে এই ঐগিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত চকরিয়া উপজেলার প্রাণকেন্দ্র চকরিয়া পৌরসভার পুরাতন বিমান বন্দরস্থ এলাকায় অবস্থিত চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠের ভেতরে গেলেই মনে হবে যেন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল ক্যাম্পাস। ২.৫ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই ক্যাম্পাসের বিস্তৃতির পরতে পরতে রয়েছে নিখুত সুন্দরের হাতছানি। আর এই সফলতা এবং পূর্ণতার বেশির ভাগই হয়েছে সাবেক প্রতিষ্ঠাতা প্রধানশিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নুরুল কবির এর আমলে। তাঁর হাত ধরেই এগিয়ে এসেছেন চকরিয়ার বেশকিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি ও শিক্ষানুরাগী। এছাড়াও বর্তমান বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও চকরিয়া-পেকুয়া আসনের নব নির্বাচিত এমপি আলহাজ্ব জাফর আলম এর জোরালো প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি বর্তমান শিক্ষা বান্ধব সরকার এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সুনজরে দেখছেন জেলার সচেতন মহল। একই সাথে বর্তমান প্রধানশিক্ষক এবং স্কুল ম্যানেজিং কমিটির যোগ্য নেতৃত্ব এবং আন্তরিকতার ভূয়সী প্রসংশা করছেন কক্সবাজার জেলার শিক্ষানুরাগী মহল।

কক্সবাজার জেলার আলোকিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে কক্সবাজারকে উচ্চ শিক্ষায় রূপান্তর করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠের প্রধানশিক্ষক নুরুল আখের জানান, ১৯৯০ সালে এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল এবং এর ২ বছর পর অর্থাৎ ১৯৯৫ সালে এমপিও ভুক্ত হয়। তখনকার সময় চকরিয়ার বেশ কয়েকজন শিক্ষানুরাগী মানুষজনের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এই বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল। আমি উনাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। আজকের চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিভাগ তথা কক্সবাজার জেলার একটি অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তিনি বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ নিয়ে প্রতিবছর চমৎবার ফলাফল করে আসছে আমাদের বিদ্যালয়টি। তিনি বলেন, বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সঠিক তত্ত্বাবধানে এবং আওয়ামীলীগ সরকারের সুপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনায় এই বিদ্যালয়ের সফলতা এবং উন্নয়ন এসেছে। সে জন্য বর্তমান শিক্ষা বান্ধব সরকার এবং শিক্ষা প্রশাসনকে ধন্যবাদ। একই সাথে চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ এই এলাকায় হাজারো শিক্ষিত মানুষ তৈরি করতে পারছে এটাই বড় পাওয়া। আমি বা আমরা চিরদিন থাকবো না। কিন্তু এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকবে এটা আমার চাওয়া এবং এই বিদ্যালয়কে দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে তৈরি করার চেষ্ঠা আছে আমার। প্রধান শিক্ষক বলেন- স্কুলের সামগ্রিক উন্নতির পেছনে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্যদের আন্তরিকতাই সব চেয়ে বেশি।

আলাপকালে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব জাফর আলম বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামে এই বিদ্যালয়ের মত কোন উন্নত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। এতে আমাদের চকরিয়া তথা কক্সবাজার জেলার ছেলে-মেয়েরা বাড়িতে থেকে উন্নত শিক্ষা পাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া। আর স্কুলের সামগ্রিক উন্নতির পেছনে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্যদের যোগ্যতা এবং আন্তরিকতাই সব চেয়ে বেশি। তাঁদের প্রচেষ্টার ফলে আজকে কক্সবাজারবাসী একটি উন্নত মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পেয়েছে। তিনি বলেছেন- এই বিদ্যালয়ের যাবতীয় অভাব-অনটন পর্যায়ক্রমে পূরণ করা হবে এবং জাতীয়করণের বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই বিদ্যালয়ের সুনাম উর্ধ্বগতি। যেকোনো প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সুনাম বয়ে আনছে প্রতিবছর। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বৃত্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ আসন ধরে রাখছে এই বিদ্যালয়টি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শাখার সকল শিক্ষক-শিক্ষিকামন্ডলী তাঁদের সমস্ত মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে স্কুলের ঐতিহ্য রক্ষায় ব্যস্ত রয়েছেন। নিয়মিত শ্রেণি পাঠদানসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যাবতীয় নিয়ম-কানুন অনুসরণ করে আরো উন্নতির দিকে যাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এই প্রতিষ্টানটির।

বর্তমানে চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ কক্সবাজারবাসীর জন্য আর্শিবাদ। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে বিভিন্ন উপজেলার প্রায় ৫০০ জন ছাত্র-ছাত্রী প্রতিদিন আবাসিক হোস্টেলে অবস্থান করছে। আবাসিক শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষা দেয়ার জন্য রয়েছে প্রায় ২০ জন শিক্ষক। প্লে থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদেরকে নৈতিকতার শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষার যথাযথ শিক্ষা প্রদান করছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকিমন্ডলী। তবে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটি প্রশ্ন- আমাদের বিদ্যালয়ে এতো কিছু থাকার পরও কেন জাতীয়করণ হচ্ছে না? এদিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ বর্তমান সভাপতি ও এমপি আলহাজ্ব জাফর আলমের কাছে জোরালো দাবী করেছেন বিদ্যালয়টি জাতীকরণের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জন্য। তাঁরা আশাবাদী বিপুল ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আলহাজ্ব জাফর আলম এবিষয়ে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবেন।