মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজারের কানিজ ফাতেমা আহমদ সহ একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে ৪৯ জন নারী সদস্যকে নির্বাচিত ঘোষনা করা হয়েছে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র ১৬ ফেব্রুয়ারি শনিবার অফিস সময়ের মধ্যে কেউ প্রত্যাহার না করায় নির্বাচন কমিশন কক্সবাজারের কানিজ ফাতেমা আহামদ সহ ৪৯ প্রার্থীকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষনা করেন। আসন অনুযায়ী সকল প্রার্থীকে শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইসি’র যুগ্মসচিব আবুল কাসেম।
তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে ৪৯ জনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। গেজেট প্রকাশের পর সরকারীভাবে ৪৯ জন সংসদ সদস্য কে সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচিত ঘোষনা করে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্য শপথের ব্যবস্থা করা হবে।
রিটার্নিং অফিসার আবুল কাসেম বলেন, সংরক্ষিত আসনে যতগুলো আসন ছিল, আমাদের প্রার্থী সংখ্যাও ততজন। সে কারণে তাদেরকে আমরা বিধি অনুযায়ী বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেছি।
জাতীয় সংসদে ৩০০ আসনের বিপরীতে ৫০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। ৪৯টি আসনের বিপরীতে একটি করে মনোনয়নপত্র জমা পড়লেও আরও একটি আসন ফাঁকা রয়েছে। সেই আসনটি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সাতজন প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ায় দলটির জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। সংরক্ষিত আসনে বিএনপি একজন প্রার্থী দিতে পারবেন।
এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনের গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে বিএনপির প্রার্থীরা যদি শপথগ্রহণ না করেন, তাহলে এই সাতটা আসন নির্বাচন কমিশন শূন্য ঘোষণা করবে। পরবর্তীতে এই আসনগুলোতে নির্বাচন হবে। তাতে যারা এই আসনগুলো পাবে, সেই ভিত্তিতে একটি নারী আসনের ভোট হবে।
সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীদের মনোনয়ন যাচাইবাছাইয়ের সময় স্বাক্ষর না দেয়াসহ ছোটখাট ভুল-ত্রুটি আমলে নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনীত ৪৩ জন, জাতীয় পার্টির চারজন, ওয়ার্কার্স পার্টির একজন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী একজন রয়েছেন।
আওয়ামী লীগ মনোনীত বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতরা হলেন-ঢাকার শিরীন আহমেদ, জিন্নাতুল বাকিয়া, শবনম জাহান শিলা, সূবর্ণা মোস্তফা ও নাহিদ ইজহার খান।
চট্টগ্রামের খাদিজাতুল আনোয়ার ও ওয়াশিকা আয়েশা খানম, কক্সবাজারের কানিজ ফাতেমা আহমেদ, খাগড়াছড়ির বাসন্তি চাকমা, কুমিল্লার আঞ্জুম সুলতানা ও এ্যারোমা দত্ত, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম। গাজীপুরের শামসুন্নাহার ভূঁইয়া ও রুমানা আলী, বরগুনার সুলতানা নাদিরা, জামালপুরের মিসেস হোসনে আরা।
নেত্রকোণার হাবিবা রহমান খান ও জাকিয়া পারভীন খানম, পিরোজপুরের শেখ এ্যানী রহমান, টাঙ্গাইলের অপরাজিতা হক ও খন্দকার মমতা হেনা লাভলী, সুনামগঞ্জের শামীমা আক্তার খানম, মুন্সিগঞ্জের ফজিলাতুন্নেছা, নীলফামারীর রাবেয়া আলী। নরসিংদীর তামান্না নুসরাত বুবলী, গোপালগঞ্জের নার্গিস রহমান, ময়মনসিংহের মনিরা সুলতানা, ঝিনাইদহের খালেদা খানম, বরিশালের সৈয়দা রুবিনা মিরা, পটুয়াখালীর কানিজ সুলতানা, খুলনার অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, দিনাজপুরের জাকিয়া তাবাসসুম, নোয়াখালীর ফরিদা খানম সাকী, ফরিদপুরের রুশেমা বেগম, কুষ্টিয়ার সৈয়দা রাশেদা বেগম, মৌলভীবাজারের সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন, রাজশাহীর আদিবা আনজুম মিতা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফেরদৌসী ইসলাম জেসী, শরিয়তপুরের পারভীন হক শিকদার, রাজবাড়ীর খোদেজা নাসরীন আক্তার হোসেন, মাদারীপুরের তাহমীনা বেগম, পাবনার নাদিয়া ইয়াসমিন জলি ও নাটোরের রত্না আহমেদ।
এ ছাড়া জাতীয় পার্টি মনোনীত অধ্যাপিকা মাসুদা এম রশিদ চৌধুরী, এডভোকেট সালমা ইসলাম, অধ্যক্ষ রওশন আরা মান্নান ও নাজমা আকতার, ওয়ার্কার্স পাটির মনোনীত প্রার্থী লুৎফুন নেসা খান ও স্বতন্ত্র সেলিনা ইসলামের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়।

বেসরকারিভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাায়য় নির্বাচিত ঘোষিত সংরক্ষিত নারী আসন-২৬ এর এমপি কানিজ ফাতেমা আহামদ কক্সবাজার জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও কক্সবাজার-৩ আসনের তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য, কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক আহবায়ক মোস্তাক আহামদ চৌধুরীর সহধর্মিনী। কানিজ ফাতেমা আহামদ দশম জাতীয় সংসদে কক্সবাজার-৩ আসনে মহাজোটের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। পরে শুধুৃমাত্র ১২০০ টাকার বকেয়া পল্লী বিদ্যুত বিলের কারণে কানিজ ফাতেমা আহামদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। কানিজ ফাতেমা আহামদ জেলা জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান এবং জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সফল সভানেত্রী। চট্টগ্রাম শহরের চান্দগাঁও থানার বিখ্যাত জেমস ফিনলে কোম্পানির সাবেক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ৯৫ বছর বয়সী কামাল উদ্দিন আাহামদ খাঁন ও ৮২ বছর বয়সী জাকিয়া বেগমের এর কন্যা কানিজ ফাতেমার সাথে কক্সবাজার সদর উপজেলার বিখ্যাত জমিদার পরিবার খাঁন বাহাদুর মমতাজ আহামদ চৌধুরীর সন্তান মোস্তাক আহামেদ চৌধুরীর সাথে ১৯৭৫ সালের ৪ এপ্রিল বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মোস্তাক আহামদ চৌধুরী ও কানিজ ফাতেমা আহামেদ দম্পতি ডাঃ তাজিন আহামেদ ও রাকিব আহামেদ নামক দু’সন্তানের গর্বিত জনক ও জননী। তাজিন আহামেদ কানাডায় ক্লিনিক্যাল মেডিসিন কর্মরত একজন চিকিৎসক ও রাকিব আহামেদ ফিজিওথেরাপি বিষয়ে আমেরিকাতে উচ্চ শিক্ষায় পড়াশোনা করছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ মাইমুন আলী চৌধুরীর ভাগিনী কানিজ ফাতেমা আহামেদ একজন স্বজ্জ্বন, অমায়িক, সদালাপী, পরোপকারী ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসাবে কক্সবাজারে সবার কাছে পরিচিত। বাংলাদেশ সমাজ কল্যাণ পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য, বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সদস্য ও কক্সবাজার মহিলা সমিতির সভাপতি কানিজ ফাতেমা আহামেদ মুঠোফোনে এ প্রতিবেদকের কাছে ভবিষ্যতে সংসদ সদস্য হিসাবে দায়িত্বপালনে আল্লাহতায়লার রহমত কামনা, সবার সহযোগিতা ও দোয়া চেয়েছেন। তাঁকে সংসদ সদস্য হিসাবে মনোনয়ন দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নিকট সহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।