সংবাদদাতা:
পুরোটা সময় গাছের সাথে শিকল দিয়ে বাঁধা উসকো-খুসকো চুলের এক যুবক। চেহারায় নমনীয়তা এখনো জ¦লজ¦ল। মনে হচ্ছে, এখনো তার ভেতর খেলা করছে প্রতিভা। এভাবেই পার হচ্ছে এই যুবকের দিনমান। দীর্ঘদিন ধরে এই শিকলবন্দী জীবন পার করছে সে। চলার পথে হেঁটে যাওয়া পথচারীদের দিকে তাকিয়ে থাকে নিষ্পলক! করে মিনতি- একবার শিকলের তালাটা খুলে দাওনা!

তার চাহনি আর আকুতিতে ফুটে উঠে- কেউ যদি একবার তার শিকলটা খুলে দিত তাহলে সেও দৌড়ে বেড়াত। আবার ছুটে গিয়ে খেলতো বন্ধুদের সঙ্গে। তারও ইচ্ছে হয়- শিকল থেকে মুক্ত হতে, আর পাঁচটা বন্ধুদের সাথে কলেজে যেতে, খেলা করতে। কিন্তু কেউ তার শিকল খুলে দেয় না; খুলে দিতে যে বারণ! কারণ এই যুবক এখন বদ্ধপাগল। ছাড়া পেলেই মারধর করবে সবাইকে। শিকলে বেঁধে রাখায় পরিবারের বাকিদের ওপর জন্মেছে বিতৃষ্ণা!

বলা হচ্ছে- কক্সবাজারের এক সময়ে মাঠ কাঁপানো ক্রিকেটার জেলার ক্রীড়ামেীদের প্রিয়মুখ শহরের সিনেমা রোডের মরহুম মাওলানা জালাল আহমদ এর কনিষ্ঠ পুত্র মেধাবী জাকারিয়ার কথা। যে ছিলো জাতীয় ক্রিকেটার মুমিনুল সৌরভের ক্রীড়া ব্যাটম্যাট। সৌরভের সাথেই খেলেছিল।

হ্যাঁ তাই, সেই প্রতিভাবান ক্রিকেটার জাকারিয়া এখন পুরোটাই পাগল। শিকল থেকে ছাড়া পেলেই পরিবারের সদস্যসহ সামনে যাকে পায় তাকেই মারধর করে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী জুনু সওদাগর বলেন, ‘প্রায় সময় তাকে এইভাবেই শেকলে তালা দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। ছাড়া পেলেই সে পরিবারের সদস্য এবং পথচারীদের মারধর করে। তাই তাকে এভাবে বেধে রাখে তার পরিবারের লোকজন। তার দুষ্টুমি থামাতে এই পন্থাই বেছে নিয়েছে তার পরিবার। তাকে বেঁধে রাখাই শ্রেয় বলে মনে করেছে তার আপনজনেরা।

পরিবারের লোকজন জানান, এক সময় তার স্বপ্ন ছিল জাতীয় দলের ক্রিকেটার হবে। হয়েও গিয়েছিল। সে প্রায় খেলতো জাতীয় দলের ক্রিকেটার মমিনুল হক সৌরভের সঙ্গে। জেলা ক্রীড়া সংস্থা হয়ে চট্রগ্রামে এম এ আজিজ ষ্টেডিয়ামে শতদলের সঙ্গে এবং রাজধানী মীরপুরে ট্যালেন্ট হ্যান্ডের সঙ্গে খেলাধুলা করে অনেক বিজয় ছিনিয়ে আনতো। উজ্জল করতো জেলাবাসীর মুখ। কিন্তু আকস্মিক এক দুর্ঘটনা যেন তার সাঁজানো ক্যারিয়ার সবকিছু তছনছ করে দেয়।

একসময় জাকারিয়া শহরের বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন ষ্টেডিয়াম, কক্সবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় খেলার মাঠ, জেলে পার্কের মতো জেলার বিভিন্ন উপজেলার বড়-বড় খেলার মাঠ গুলো মাতিয়ে রাখতো। সেই উদীয়মান ক্রিকেটার জাকারিয়ার জীবন প্রদীপ এখন নিভে-নিভে অবস্থায়। এখন তাঁর দিন যায় বড় কষ্টে। তাঁর এই কষ্টের কথা কেউই যে আর শুনতে চায় না।

জাকারিয়ার তারবড় ভাই লালঘিীর পশ্চিম পাড়ের হারুন ইলেকট্রনিক্স এর প্রোপাইটর হারুন উর রশিদ বলেন, প্রায় একযুগ ধরে তার চিকিৎসায় আমরা অনেক টাকা ব্যয় করে আমরা এখন নিঃস্ব। আমরা আর পারছি না। জনস্বার্থে আমরা তাকে শিকল পরিয়ে রাখছি।

শহরের ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া সংগঠন “উত্তরা সৃজনশীল সংসদ” সভাপতি ওয়াহি মুরাদ সুমন বলেন, ‘জাকারিয়া অতীব সম্ভবনাময় ক্রিকেটার ছিল। আমাদের নিয়মিত খেলোয়াড় ছিলো। কিন্তু ভাগ্য আজ সে শিকল বন্দী। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা আমারে সাধ্যমতে সহযোগিতার চেষ্টা করবো।’

কক্সবাজার পৌরসভার কাউন্সিলর মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘ক্রিকেটার জাকারিয়ার চিকিৎসায় সকলকে এগিয়ে আসা উচিৎ।
কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অনুপ বড়–য়া অপু বলেন, জাকারিয়া মেধাবী ছাত্র ছিল এবং সম্ভবনাময় ক্রিকেটার ছিল। ক্রীড়া সংস্থার সহযোগিতা পেতে হলে তার পরিবারকে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসতে হবে।