ইমাম খাইর, সিবিএন:
দেশে প্রথম বারের মতো ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান হয়ে গেল। শনিবার (১৬ ফের্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে ওই অনুষ্ঠানে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে প্রকাশ্য ক্ষমা চেয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন টেকনাফ সদর ইউপির সদস্য  ব্যবসায়ী এনামুল হক এনাম।
এইসময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন- অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিনসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মর্কতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
তাদের উদ্দেশ্য করে আত্নস্বীকৃত ইয়াবা ব্যবসায়ী এনামুল হক এনাম প্রতিক্রিয়ায় বলেন- আমাকে বিভিন্ন ভাবে হেড লাইন করে আলোচিত করা হয়েছে। মিডিয়ায় আমাকে গডফাদার হিসাবে পরিচিত করা হয়েছে। আমার রাজপ্রসাদ বাড়ী, ব্যাংক ব্যালেন্স ও কোটি টাকার সম্পত্তিওয়ালা বানানো হয়েছে।
সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে তিনি বলেন, আপনারা কলম সৈনিক। আপনাদের লিখনিতে একজন মানুষ সুন্দর জীবন যাপন করতে পারে। নিরপরাধ মানুষকে অপরাধী বানাতে পারে। আমি আপনাদের আহবান জানাচ্ছি, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করা হউক।
সীমান্ত এলাকার একজন কৃতি ফুটবলার হিসাবে আপনাদেরকে অনুরোধ করছি, আপনাদের সামান্য মেধা খরচ করে সঠিক তথ্য উদঘাটন করুন। আমি কি ইয়াবা গডফাদার? নাকি সাধারণ এনাম? জীবনে অনেক অন্যায় করেছি। আমাদের একটিবার নতুন জীবন ভিক্ষা দিন। একটিবার আমাদের দিকে লক্ষ্য করুন। আমরা আপনাদের সুন্দর সমাজ উপহার দেব। আমাদের স্বজন ও প্রজন্মের চেয়ে হলেও একবার সুযোগ দিন। এইসময় তিনি নিজের প্রতিষ্ঠিত মাদারাসার সমস্ত কৃতিত্ব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ প্রশাসনকে উৎসর্গ করেন।
প্রতিক্রিয়ায় আত্মসমর্পণকারী অপর ইয়াবা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, ইয়াবা পুরো দেশের যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এতে দেশের নতুন প্রজন্মর চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। এই অপরাধে আমরা দায়ী। অন্যদিকে ইয়াবা ব্যবসার কারণে টেকনাফসহ পুরো কক্সবাজার জেলার মানুষ সারাদেশের মানুষের কাছে ছোট হয়ে আছে। যেখানে যাই টেকনাফের মানুষ পরিচয় দিলেও আমাদের ঘৃণা করা হয়। এমনকি কোথাও হোটেল ও বাসা ভাড়া নিতে গেলে আমাদের দেয়া হয় না। আমাদের সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করাতে গেলে ভর্তি করা হয় না। এটা বড়ই কষ্টের এবং লজ্জার। এসব কিছু বুঝতে পেরে আমরা দেশকে ইয়াবার আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছি। যারা এখনো আত্মসমর্পণ করেনি তাদেরও আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে আমাদেরকে ক্ষমা করে স্বাভাবিক জীবনের ফেরা সুযোগ দেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে আকুতি জানাচ্ছি। এর আগো আত্মসমর্পণকারীদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয়।
দুই ইয়াবা কারবারি তাদের অনুভূতি জানান। জীবনে আর কোনও দিন মাদক ব্যবসা করবেন না বলে ওয়াদা করেন এবং অন্যদেরও এই কারবারে না আসার অনুরোধ করেন।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশের ‘সেফহোম’ থেকে শীর্ষ ইয়াবাকারবারিদের টেকনাফে আত্মসমর্পণ মঞ্চে নেয়া হয়। মঞ্চের কাছে একটি দোতলা ভবনে তাদের রাখা হয়। আত্মসমর্পণকারীদের দেখতে তাদের স্বজন ও এলাকার হাজারো মানুষ ভিড় জমান। তালিকাভুক্ত কয়েকজন ইয়াবা কারবারিকেও অনুষ্ঠানস্থলে দর্শক হিসেবে কাছে দেখা গেছে।
পৌনে ১১টায় আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইজিপি মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন, উখিয়া-টেকনাফের সংসদ সদস্য শাহিন আক্তার, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ও টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ আইনৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সংসদ সদস্য জাফর আলম, আশেক উল্লাহ রফিক, সাইমুম সরওয়ার কমল ছিলেন সেখানে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আত্মসমর্পণকারী ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর মধ্যে অন্তত ৩০ জন গডফাদার রয়েছেন। প্রথমে কোনো মামলা দেওয়ার কথা না থাকলেও শেষ পর্যন্ত ইয়াবা কারবারিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও ইয়াবা মিলে মোট দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।