বিশেষ প্রতিবেদক:
দেশে প্রথম বারের মতো প্রকাশ্যে ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান আজ হচ্ছে। এ জন্য যাবতীয় সব প্রস্তুতি শেষ করেছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ। টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সকাল ১০টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে এ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে অন্তত ৩৫ জন গডফাদারসহ প্রায় ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে প্রতীকীভাবে ইয়াবা ট্যাবলেট জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করবে। এদের মধ্যে সাবেক সংসদ আবদুর রহমান বদি চার ভাইও রয়েছেন বলে জানা গেছে।
আত্মসর্পণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিনসহ আইনৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কক্সবাজারে অবস্থান করছেন।
আত্মসর্পণ অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ।
ওসি বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাদক নির্মূলে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ফলে তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীরা নিজ ইচ্ছায় আত্মসর্পণ করতে রাজি হয়েছে। ইয়াবা নির্মূলে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’ তবে কতজন ইয়াবাকারবারীরা আত্মসর্পণ করছে তার সংখ্যা বলতে তিনি রাজি হননি।
তবে ইয়াবাকারবারিরা কী শর্তে আত্মসর্পণ করছে তার কোনও তথ্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনী দিতে রাজি হয়নি। গত দুই মাস আগে নিজ ইচ্ছায় শতাধিকের বেশি শীর্ষ ইয়াবাকারবারিরা ‘সেফহোমে’ চলে যায়। সেখান থেকে তাদের শনিবার সকালে টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে মাঠে আত্মসর্পণ মঞ্চে হাজির করা হবে। সর্বপ্রথম ‘সেফহোমে’ যায় আবদুল করিম (৩২) নামে এক ইয়াবা ব্যবসায়ী। তার বাড়ি টেকনাফ সদর ইউনিয়নের উত্তর লম্বরী গ্রামে।
আত্মসর্পণকারী আবদুল করিমের পরিবার জানায়, ‘সেফহোমে’ যাওয়ার পর থেকে (দুটি মাস) চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। শুনেছি (শনিবার) সকালে তাদের টেকনাফ আত্মসর্পণ মঞ্চে নিয়ে আসা হবে। কিন্তু এরপর তার কী হবে, সে-বিষয়ে কারও কাছে কোন তথ্য পাননি তারা।
ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতাকারী চ্যানেল-২৪ এর সাংবাদিক আকরাম হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বলতে গেলে কোনও শর্ত ছাড়াই এ আত্মসমর্পণে রাজি হয়েছে ইয়াবা কারবারিরা। ফলে তারা আগেই থেকে নিজ ইচ্ছায় ‘সেফহোমে’ চলে যায়। তবে তাদের একটি কথা বলে রাজি করা হয়েছে, সেটি হলো, অন্ধকার জগত থেকে আলোর পথে ফিরতে পারবে। তারা ফিরে পাবে স্বাভাবিক জীবন। কিন্তু আত্মসর্পণকারীদের মাদক মামলা আইনি প্রক্রিয়া চলবে।’ তবে এখনও অনেক শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণে আসেননি বলে জানান তিনি।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আত্মসমর্পকারীদের মধ্যে টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির চার ভাই আবদুল আমিন, আবদুর শুক্কুর, মোহাম্মদ সফিক ও মোহাম্মদ ফয়সাল, ভাগিনা সাহেদুর রহমান নিপু এবং বেয়াই শাহেদ কামাল রয়েছেন। এছাড়া রয়েছেন টেকনাফ সদরের এনামুল হক মেম্বার, ছৈয়দ হোসেন মেম্বার, শাহ আলম, আবদুর রহমান, মোজাম্মেল হক, জোবাইর হোসেন, নূরল বশর নুরশাদ, কামরুল হাসান রাসেল, জিয়াউর রহমানসহ অনেকে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় কক্সবাজার জেলায় ১ হাজার ১৫১ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী রয়েছে। এদের বেশিরভাগ সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের। ইয়াবার বিরুদ্ধে গত বছরের ৪ মে থেকে শুরু হয়েছে বিশেষ অভিযান। এ পর্যন্ত সীমান্তে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে ৪২ কারবারি। এরমধ্যে ৩৭ জনই টেকনাফের। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ৭৩ জন গডফাদারের মধ্যে মাত্র চারজন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, কক্সবাজার পুলিশের হেফাজতে থাকা প্রায় ১০২ জন ইয়াবা কারবারিকে সড়কপথে কক্সবাজার থেকে টেকনাফে নেয়া হয়েছে। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে ইয়াবা তুলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করবেন কারবারিরা। এ সময় তারা ইয়াবা ব্যবসা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার অঙ্গীকার করবেন।
অনুষ্ঠানে দুয়েকজন ইয়াবা ব্যবসায়ী তাদের অপরাধের কথা স্বীকার করে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পাব। অনুষ্ঠান শেষে আত্মসমর্পণকারীরা ২ লাখ ইয়াবা, অস্ত্র মামলায় ফের কক্সবাজার জেলা কারাগারে পাঠানো হবে।