বিশেষ প্রতিবেদক:
আজ (১৬ ফেব্রুয়ারি) ইয়াবা কারবারিদের বহুল আলোচিত আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের দিন নির্ধারিত রয়েছে। অথচ এখনও মিয়ানমার থেকে ইয়াবার বড় বড় চালান দেশে ঢুকছে। টেকনাফ সীমান্তের স্থলপথে কড়াকড়ির কারণে সমুদ্রেপথেও আসছে এসব চালান। ইয়াবা পাচারকারীরা ব্যবহার করছে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার ট্রলার।
শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে কক্সবাজারের ইনানী, নাইক্ষ্যংছড়ি ও টেকনাফ সীমান্ত থেকে র্যাথব-১৫ ও বিজিবির সদস্যরা ৫ লাখ ৬০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে ইনানী সমুদ্র থেকে এক লাখ ইয়াবাসহ চারজনকে আটক করে র্যা ব। এছাড়া বিজিবি নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে চার লাখ ৪০ হাজার ও টেকনাফ থেকে ২০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে। তবে এসময় তারা কোনও পাচারকারিকে আটক করতে পারেনি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, শনিবার টেকনাফে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে ইয়াবা তুলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করবেন উখিয়া-টেকনাফের ১২০ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী। তারা সবাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। এ পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের ইয়াবা ব্যবসায়ীরা টেকনাফ রুটের পরিবর্তে কক্সবাজারের ইনানী ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা চোরাচালান করছে।
অভিযানে মাছ ধরার ট্রলারসহ চার জন রোহিঙ্গাকে আটক করে র্যা ব। তাদের কাছ উদ্ধার করা হয় থেকে এক লাখ পিস ইয়াবা। র্যা বের হাতে আটক ব্যক্তিরা হলো এনায়েত উল্লাহ (২৮), করিমুল্লাহ (৩২), রশিদুল্লাহ (২২) এবং হামিদ (২০)। র্যা ব প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে, তারা সবাই মিয়ানমারের নাগরিক।
কক্সবাজার র্যাইব-১৫-এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান বলেছেন, ‘শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কক্সবাজারের ইনানীর কাছাকাছি গভীর সমুদ্রে অভিযান চালিয়ে এক লাখ পিস ইয়াবাসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে। স্থলপথে ঝুঁকি বেশি মনে করে বড় চালানগুলো সমুদ্রপথে আনছে ইয়াবা কারবারিরা। মাছ ধরার ট্রলারে লুকিয়ে রাতের বেলায় ইয়াবা পাচারের কৌশল নিয়েছে তারা। এ কারণে এখন আমরা নজরদারিও বাড়িয়ে দিয়েছি। এর ফলেই ইয়াবা চালান ধরা পড়ছে।’
অন্যদিকে, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ইয়াবার চালান জব্দের কথা জানিয়েছেন ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আসাদুজ্জামান। তার ভাষ্য, মাদক নির্মূলে বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে। বিশেষ করে ইয়াবা চোরাচালানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে বিজিবি। পাশাপাশি, সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অস্ত্র ও কাঠ পাচার এবং সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধে বিজিবির তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
পুলিশের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র দাবি করেছে, ‘টেকনাফ সীমান্তে ইয়াবা পাচার রোধে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ফলে শতাধিকের বেশি ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণ করছে। তবে স্থলপথে নজরদারি বেড়ে যাওয়ায় পাচারকারীরা রুট পরিবর্তন করে সমুদ্রপথকে বেছে নিয়েছে। এ জন্য সাগরপথে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ইয়াবা পরিবহনকারীরা ধরা না পড়ায় মূল হোতাদের সহজে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। কিন্তু এর সঙ্গে জড়িত কোনও ব্যক্তি পার পাবে না।’