সিবিএন ডেস্ক:
আজকাল প্রায় বিনামূল্যে মোবাইল সিম দিচ্ছে অনেক অপারেটর। অথচ সিমপ্রতি তাদের খরচ হয় ২৮০ থেকে ২৯০ টাকা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে: তাহলে নামমাত্র বা বিনা মূল্যে অপারেটরগুলোর সিম দিচ্ছে কীভাবে?
জানা গেছে, সিমপ্রতি প্রায় ২৮০-২৯০ টাকা ব্যয় করতে হয় মোবাইল ফোন অপারেটরদের। একজন গ্রাহক সেটি নেওয়ার পর অপেক্ষায় থাকতে হয় তিন মাসেরও বেশি সময়। এই সময়ের মধ্যে গ্রাহক অন্য অপারেটর চলে না গেলে এই বিনিয়োগ অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত হয় অপারেটরের। অন্তত ছয় মাস গ্রাহক সিমটি ব্যবহার করলে অপারেটরের বিনিয়োগ পুরোপুরি ফিরে আসে।
রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে আসা দুটি নম্বর সিরিজের (স্কিম) সিম প্রায় বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার ধারে বাংলালিংকের ০১৪ সিরিজের সিম রীতিমতো ব্যানার টানিয়ে ফ্রি দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে রাস্তার ধারে গ্রামীণফোনের ০১৩ সিমও পয়সা ছাড়াই গ্রাহককে দিতে দেখা গেছে। তবে বিনামূল্যে সিম দিলেও এজেন্টদের আর্থিক ক্ষতি হয় না। সিম বেচায় তারা ভালো অঙ্কের কমিশন পান।
তবে সংশ্লিষ্ট অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার থেকে সিম কিনলে বা তুললে কিছু বিনিময় মূল্য লাগে। কারণ, এসব সিমে কল মিনিট, ইন্টারনেট বান্ডল ইত্যাদি প্রি-লোড করা থাকে, যা অনেক সময়ই সিম কেনার চেয়ে বেশি দামের হয়ে থাকে। অন্যদিকে পাড়া-মহল্লায় বা অলি-গলিতে প্রায় বিনামূল্যে পাওয়া সিমে অল্প কিছু টাকা রিচার্জ করলে মিলছে কল মিনিট, ইন্টারনেট (ডেটা)।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত নতুন গ্রাহক পেতে এভাবে সিম বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। তবে তারা এ-ও বলেছেন, নতুন নম্বর সিরিজ বাদে অন্যান্য সিমও একেবারে কম দামে বেচছে অপারেটরগুলো।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি থেকে জানা গেছে, সিম টাকার বিনিময়ে নাকি ফ্রি দেওয়া হবে— এ বিষয়ে কোনও বিধিনিষেধ নেই। আমলে নেওয়ার বিষয় হলো সিম ঠিকমতো নিবন্ধিত হচ্ছে কিনা। সেখানে নিয়ম মানা না হলে বিটিআরসি তাতে বাধা দেবে।
বাংলালিংক সূত্রে জানা গেছে, অপারেটরটি প্রতিটি সিমের পেছনে ব্যয় করে ২৮২ টাকা। এর মধ্যে সিম কর বা ট্যাক্স রয়েছে ১০০ টাকা, এজেন্ট কমিশন ১৬০ টাকা (যিনি সিম বেচেন), সিমের উৎপাদন খরচ ২২ টাকা। সব মিলিয়ে সিমের পেছনে ব্যয় হয় ২৮২ টাকার মতো। অপারেটর ভেদে যা ২৯০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
জানতে চাইলে বাংলালিংকের চিফ রেগুলেটরি ও করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, ‘আমরা সাবসিডাইজ (ভর্তুকি) করছি। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে হলে অনেক ধরনের উদ্যোগ নিতে হয়।’
বিনামূল্যে সিম দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সব জায়গায় বা সব সময় এটা করা হয় না। ক্ষেত্রবিশেষে এজেন্টরা এ ধরনের বেচার আয়োজন করেন স্বল্প সময়ের জন্য।’ নতুন সিম নিয়ে কোনও ব্যবহারকারী সর্বনিম্ন তিন মাস ব্যবহার না করলে ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়।’ ফলে সিম বেচার পর অন্তত তিন মাস ঝুঁকি নিতে হয় বলে তিনি জানান।
তাইমুর রহমান আরও জানান, বাংলালিংকের আরপিইউ (রেভিনিউ পার ইউজার বা একজন গ্রাহকের মাসে গড় মোবাইল রিচার্জের পরিমাণ) ৯২-৯৩ টাকা। ফলে তিন মাসের বেশি ব্যবহার না হলে লোকসান গুনতে হয় তাদের।
রবি ও এয়ারটেল সূত্রে জানা গেছে, অপারেটর দুটির সিমপ্রতি ব্যয় হয় ২৮২ টাকার মতোই। আর গ্রাহক প্রতি রাজস্ব আয় (আরপিইউ) ১১৮ টাকা। গ্রামীণফোনের ব্যয়ও কাছাকাছি বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, একটি মোবাইল সিম কিনতে অপারেটরদের খরচ (উৎপাদনসহ অন্যান্য খরচ) হয় ১৭০-১৮০ টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ১০০ টাকার সিম ট্যাক্স। আরও কিছু খরচও রয়েছে সিমের পেছনে। কোনও গ্রাহক টানা তিন মাস সিমটি ব্যবহার করলেই অপারেটরগুলোর পক্ষে সিমের পেছনে তাদের খরচ তথা বিনিয়োগ তুলে নিয়ে আসা সম্ভব। তবে গ্রাহকের কাছ থেকে মুনাফা করতে অপারেটরগুলোর ছয় থেকে নয় মাস লেগে যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একজন মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর প্রতিমাসে মোবাইল ব্যবহারের গড় খরচের ওপর নির্ভর করে অপারেটরের খরচ তুলে নেওয়ার বিষয়টি। জানা গেছে, ২০১৭ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) একজন গ্রামীণফোন গ্রাহকের গড় খরচ (মোবাইল ব্যবহারের) ছিল ১৬১ টাকা, রবি ও এয়ারটেলের ১২৫ টাকা এবং বাংলালিংকের ছিল ১১১ টাকা।
গ্রাহককে ফ্রি সিম দেওয়ার উদ্যোগ অবশ্য নতুন নয়। নারীদের মধ্যে বিনামূল্যে ২০ লাখ সিম বিতরণের ঘোষণা দিয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটক। ওই অফারে একসঙ্গে দু’টি সিম নিতে হতো। জানা যায়, ১০ লাখ সিম দেওয়ার পরে অফারটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। হঠাৎ করে একসঙ্গে নেটওয়ার্কে এত গ্রাহক যুক্ত হওয়ায় নেটওয়ার্ক লোড নিতে পারছিল না।
-বাংলা ট্রিবিউন