সংবাদদাতা:
কক্সবাজার সদর উপজেলার পোকখালী নাইক্ষ্যংদিয়ার এসটি দাখিল মাদ্রাসায় গোপনে রাতের আঁধারে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি গঠন করার পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার ফজলুল করিমের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট গোপনে এই অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এই নিয়ে অভিভাবক ও স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ফলে যে কোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অভিযোগ মতে, নাইক্ষ্যংদিয়া এসটি দাখিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সুপার প্রায় ৪বছর আগে মারা যান। তিনি মারা যাওয়ার পর মাদ্রাসার সুপার পদ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এই দ্বন্দ্বের ফলে এতদিন সুপারের পদটি শূন্য রয়েছে। এই নিয়ে আদালতে একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তবে সাময়িকভাবে ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্বে রয়েছেন মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মাওলানা ফজলুল করিম। তিনি একচেটিয়াভাবে পূর্ণ সুপার হতে বেশ কিছুদিন নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। কিন্তু কোনোভাবে তা সম্ভব হয়নি। প্রতিষ্ঠানের নিয়ম মোতাবেক নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সুপার নির্বাচন করার জন্য মাদ্রাসার অভিভাবক ও স্থানীয় গণমান্য লোকজন একট্টা হয়েছেন। এতে হটে যাওয়ার আশঙ্কায় অপচেষ্টার আশ্রয় গ্রহণ করে ভারপ্রাপ্ত সুপার মাওলানা ফজলুল করিম।

অভিভাবকেরা অভিযোগ করেছেন, অবৈধভ পন্থায় পূর্ণ সুপার হওয়ার জন্য অপচেষ্টা চালাচ্ছেন ফজলুল করিম। এই জন্য তিনি মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক রোকন উদ্দীন, মোঃ হারুন, আবু তাহের ও তাহেরা আকতারকে নিয়ে একটি সিন্ডিকেট করেছেন। সিন্ডিকেটটি ফজলুল করিমকে সুপার করার জন্য এবার তাদের আজ্ঞাবহ লোককে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে পরিচালনা কমিটির নির্বাচন নিয়ে অনিয়ম শুরু করেছে।

অভিযোগ মতে, পছন্দের লোককে সভাপতি করার জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে গোপনে। নির্বাচন করতে নোটিশ টাঙানো, অভিভাবকদের অবহিত করার নিয়ম থাকলেও ফজলুল করিম তা কিছুই করেননি। এতে সার্বজনীনভাবে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক অভিভাবকেরা নির্বাচনের মনোননয় ফরম পূরণ করতে পারেননি। এরই মধ্যে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ফরম জমা দেয়ার সময় শেষ হয়েছে। তবে ফজলুল করিম সভাপতি পদসহ সব পদের জন্য তার আজ্ঞাবহ প্রতিদ্বন্দ্বিহীন একজন করেই মনোনয়ন ফরম জমা নিয়েছেন। সেখানেও অভিভাবক নয় এমন একজনকে মনোনয়ন ফরম জমা করানো হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারপ্রাপ্ত সুপারের এই অপচেষ্টার কথা প্রকাশ হলে অভিভাবক ও স্থানীয় লোকজনের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। তারা বিষয়টি শেষ মুহূর্তে জেনেছেন। জেনেই তারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। ফজলুল করিম সিন্ডিকেটের এই অপচেষ্টা বানচাল করে নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিচালনা কমিটি গঠনের জন্য তারা দাবি জানিয়েছেন। তা না হলে যেকোনোভাবেই ‘গোপন’ কমিটির প্রতিরোধ করা হবে।

স্থানীয় সমাজসেবক ফিরোজ উদ্দীন খোকা ও সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত সুপার ফজলুল করিম ও তার সিন্ডিকেটের সবাই জামায়াত নেতা। ফজলুল করিম নাশকতার মামলার আসামী হিসেবে জেলও কেটেছেন। তিনি মাদ্রাসাটিকে জামায়াতের ঘাঁটি বানানোর জন্য নিজের পছন্দ মতো কমিটি করে নিজে সুপার হওয়ার অপচেষ্টা করছে। কিন্তু এলাকার মানুষ তা হতে দেবে না।’

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত এসটি দাখিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার ফজলুল করিম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘নিয়ম মেনে শ্রেণিকক্ষে নোটিশ ও তফশীল ঘোষণা করে কমিটি গঠনের নির্বাচন প্রক্রিয়া চলছে। এই জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষাকর্মকর্তাকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। তিনি সবকিছু অবগত রয়েছেন। আমি কোনো অনিয়ম করছি না।’

পোকখালী ইউপি চেয়ারম্যান রফিক উদ্দীন বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত সুপার নির্বাচনের সার্কুলার আমার কাছে দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে কিছু অভিভাবক আমাকেও অভিযোগ করেছেন- ভারপ্রাপ্ত সুপার গোপনে কমিটি গঠনের পাঁয়তারা করছে। বিষয়টি আমি খোঁজ নেবো।’

এ ব্যাপারে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কক্সবাজার সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সেলিমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।