সংবাদদাতা :

স্রষ্টার নিপূন কারিগরি হাতে অন্য সবার মত সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, সুন্দর চেহারা,জ্ঞান গরিমা এমনকি সব সৌন্দর্য্য দিয়ে তাকে তৈরী করে পৃথিবীতে পাঠালেও তার একটু খানি অপূর্ণতা যেন পুরো পৃথিবীটা তার জন্য বিষাদময় ছিল। সে এক হতভাগী গরীব অথচ অদম্য মেধাবী ফুটফুটে সুন্দর চেহারার অধিকারী অষ্টাদর্শী কলেজ ছাত্রী মিনা আক্তার। মহেশখালীর সরকারি বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ থেকে আইএ পাস করে বর্তমানে মহেশখালী কলেজে ডিগ্রিতে অধ্যায়ন রত নিয়মিত ছাত্রী সে। মহেশখালী উপজেলার কালারমার ছড়া ইউনিয়নের আধার ঘোনা গ্রামের গরীব খেটে খাওয়া কৃষক ওসমান গণির পরিবারে মিনার জন্ম। জন্ম থেকেই মিনার একটি পায়ের নিম্নাংশ  নাই। ৩ ভাই ৩ বোনের মধ্যে সে ৩য়। বড় এক বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট ভাই বোনরাও স্কুলে পড়ে। বাবা ছাড়া পরিবারে উপার্জনকারী তেমন কেউ নাই বললেই চলে। জায়গা জমি সহায় সম্পদ কিছুই নেই। পরিবারের শত অভাব অনটনের মাঝেও মিনা পড়া লেখা ছাড়েনি। শারিরীক প্রতিবন্দ্বীত্বকে পরাভূত করে প্রাইমারী ও মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে আজ উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের ছাত্রী সে। প্রতিবন্ধীত্ব তাকে হার মানাতে পারেনি। লেখা পড়ায় রেখেছে সে কৃতিত্বের স্বাক্ষর। জেএসসিতে জিপিএ -৫ পেয়েছে সে। এস,এস,সিতেও পেয়েছে ৪.৭৫। সরকারি বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ থেকে এইচ,এস,সি পাস করার পর এখন মহেশখালী কলেজে বি,এ পড়ছে। বাড়ী থেকে ২০ কি:মি: দুরের কলেজে এক পা নিয়ে প্রতিদিন গাড়ী মাড়িয়ে কলেজে যাতায়ত যেন তার জন্য দু:সাধ্য কষ্টকর। তার ওপর খাটো এক পা নিয়ে কলেজের সিড়ি বেয়ে উপরে উঠা নামা দুস্কর। সাংবাদিক ফরিদুল আলম দেওয়ান বলেন, আমি সরকারি বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজের গভর্নিং বডির অভিভাবক প্রতিনিধি এবং ওই কলেজে মিনার একই সাথে অামারও এক মেয়ে পড়ার সুবাদে তার এই কষ্টসাধ্য চলা ফেরা আমার নজরে আসলে অামি অনুভব করি তার জন্য একটি কৃত্রিম পা ( আর্টিফিসিয়াল পা) বড়ই প্রয়োজন। কিন্তু তার গরিব মা বাবার পক্ষে তাকে একটি কৃত্রিম পা কিনে দেবার সামর্থ্য নাই। তবুও সে পড়তে চায়। তার আশা লেখা পড়া করে একদিন সে সরকারি চাকুরিজীবি হবে। আমি তাকে নিয়ে কি ভাবে সাহায্য করা যায় ভাবতে থাকি। আমারও তো “মন থাকলেও ধন নাই” এমন মানুষ। একদিন তাকে নিয়ে আমার ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিই। তাতে আমার উদ্যোগের সাথে অনেকই একমত পোষণ করে অামাকে এবং মিনাকে সাহার্য করার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন। আমি সাহসে বুব বাঁধলাম। অতপর মহেশখালীর সমাজসেবা অধিদপ্তর, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সফিউল আলম সাকিব, কালারমার ছড়ার ইউপি চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান শরিফ, মাতারবাড়ীর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ উল্লাহ, মহেশখালী পেশাজীবি সমবায় সমিতির পক্ষে সভাপতি ও তৎকালীন ইউ,এন,ও বর্তমানে সহকারি সচিব জনাব আবুল হাসেম, ডিবি পুলিশের মানবতাবাদী সদস্য শের আলী পিপিএম সহ আরো অনেকেই আমার সাথে সহযোগিতা করে আমাকে মিনার জন্য যথাসাধ্য আর্থিক সাহায্য করলেন। অবশেষে ২০১৮ সালে চট্টগ্রামের এন্ডুলাইট ক্লিনিক থেকে মিনার কৃত্রিম পা সংযোজন করা হলো। সে এখন আর প্রতিবন্ধী নয়। সম্পূর্ণ সচ্ছল মানুষের মতো হাঁটা চলা করতে পারে। আর এতেই খুলে গেল তার প্রতিবন্ধিতার রুদ্ধদ্বার। অবশেষে তার জন্য বিয়ে প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে এলেন মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলা পাড়া গ্রামের মোহাম্মদ আমির নামের আরেক মানবতাবাদী যুবক। মিনার মা বাবা মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য রাজি হলেন। ১১ গত ফেব্রুয়ারি ধুমধামের সাথে সম্পন্ন হলো মিনার বিবাহ অনুষ্ঠান। মিনার বিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশের (ডিবি’র) শের আলী পিপিএম মিনা যে শত প্রতিকুলতাকে হার মানিয়ে জীবন যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন এ জন্যে মিনাকে জয়িতা হিসেবে, এবং মিনার কৃত্রিম পা সংযোজনের উদ্যোগ নিয়ে মানবিক কাজে সহযোগিতা করার জন্য দৈনিক আজাদীর সাংবাদিক ফরিদুল আলম দেওয়ানকে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা জানিয়েছেন।