তাজুল ইসলাম পলাশ, চট্টগ্রাম :

চট্টগ্রামের কাজিড় দেউড়িতে অবস্থিত প্রয়াত সামরিক শাসক রহমানের নামে গড়ে তোলা ‘জিয়া স্মৃতি জাদুঘরকে’ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তরের জন্য মন্ত্রীসভার বৈঠকে প্রস্তাব এনেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

আজ সোমবার (১১ ফেরুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রীসভার বৈঠকে নওফেল এই প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবে নীতিগত সমর্থন এসেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকেও। পাশাপাশি নওফেলের এই প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছেন মন্ত্রীসভার প্রায় সব সদস্য।

সূত্রমতে, বৈঠকে উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, ‘যে ভবনটিকে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর বানানো হয়েছে, সেটি বৃটিশ আমলে নির্মিত। বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত একটি ভবন এটি। একসময় সার্কিট হাউজ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এখানে মহান মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। ১৯৭১ সালে অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের ওই হাউজে নিয়ে নির্যাতিত করেছিল। গুলিতে অনেকে নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা, চট্টগ্রামে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলিত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান যখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন, তখন এই সার্কিট হাউজে এসে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৯১ সালে তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পর সেটিকে আকস্মিকভাবে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে রূপান্তর করেন, যা চট্টগ্রামবাসী এবং আপামর মুক্তিযোদ্ধারা মেনে নেননি। সেখানে জিয়াউর রহমানের কোনো স্মৃতি নেই। ১৯৭১ সালে কালুরঘাট ট্রান্সমিটার ব্যবহার করে এই ঘোষণা দিয়েছিলে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান। তাহলে শুধু জিয়াউর রহমানের নামে কেন জাদুঘর হবে ? প্রশ্ন রাখেন নওফেল।

নওফেলের বক্তব্যের পর মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মে প্রথম তাকে সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি এই বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকেও উদ্যোগ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন বলে সূত্র জানিয়েছে।

ওই সময় মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রীকে সমর্থন জানিয়েছেন পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর বীরপ্রতীক।

এ বিষয়ে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, বর্তমানে আমি এই এলাকার সংসদ সদস্য। সেই জাদুঘরকে মুক্তিযোদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে রুপান্তরিত করার চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের ছিল। আমি প্রতিনিধি হিসেবে এই প্রাস্তাব মন্ত্রীসভায় তুলে ধরেছি। মাননীয়ন প্রধানমন্ত্রীও নীতিগতভাবে সমর্থন দিয়েছেন। বলেন নওফেল।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ১৯১৩ সালে চট্টগ্রাম নগরীর কাজির দেউড়ি এলাকায় তৎকালীন বৃটিশ শাসকরা দৃষ্টিনন্দন ভবনটি নির্মাণ করে, যা পরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ হিসেবে রাষ্ট্রীয় অতিথিদের জন্য ব্যবহৃত হত।